ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০১:০২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • / 20

ছবি : সংগৃহীত

দেশে নবজাতক, এক বছরের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এই তিন ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বেড়েছে। এদিকে একজন নারীর সন্তান গর্ভধারণের আগ থেকে প্রসব পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হয়। এ সময় জটিলতা তৈরির শঙ্কা বেশি থাকে। সরকারের পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যু কমাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব জরুরি। কিন্তু প্রসূতি সেবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে মাতৃসেবা। এমন পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০২৪।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-  ‘হাসপাতালে সন্তান প্রসব করান, মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচান। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সকল নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণই হল নিরাপদ মাতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এ বিষয়ে অনুমোদন দিলে, পরের বছর থেকে দেশব্যাপী দিবসটি পালন শুরু হয়। পরে ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে।

অপরদিকে দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। নবজাতক, এক বছরের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু তিন ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বাড়তি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিগত পাঁচ বছরের হিসাবে এমন চিত্র উঠে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে।

২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪। বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে (২০২৩) এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছর গত ২৫ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। বিবিএস বলছে, ২০২২ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১।

বিবিএস প্রতিবছরই ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ প্রকাশ করে থাকে। এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্ম, মৃত্যু, আয়ুষ্কাল, বিয়ের মতো নানা বিষয়ের চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজারে। বিবিএসের হিসাবে, দেশে পুরুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। এর মানে, গড় হিসাবে এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। প্রত্যাশিত গড় আয়ু মানে হলো, ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা গড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর আয়ু পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়।

শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪।

জানতে চাইলে পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (মা ও শিশু) ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, গর্ভবতী নারীর প্রসবপূর্ব সেবা ‘অ্যান্টিন্যাটাল কেয়ার’ (এএনসি) এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা ‘পোস্ট নেটাল কেয়ার’ (পিএনসি) নেয়া পরামর্শ দেয়া হয়। এতে গর্ভের সন্তান চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাজ গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা। প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ে এমনিতেই নানা সংকটে সেবাকেন্দ্রগুলোতে মাতৃসেবায় জনবল ও অবকাঠামোগত নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে নানা কারণে স্বাভাবিক সেবাও ব্যাহত হয়। এ সময়ে প্রথম দফায় সেবা নেন ৮২ শতাংশ প্রসূতি নারী। কিন্তু চতুর্থ দফায় গিয়ে সেবা নেয়ার হার কমে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে। অর্থাৎ সেবার বাইরে ৩৫ ভাগ প্রসূতি। ফলে গর্ভবতী মায়েদের সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় জটিলতা বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে হলে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটাকে ৭০ শতাংশে নিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করা গেলেও বাকি অর্ধেক এখনও বাড়িতেই হচ্ছে। অনেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গেলেও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল না থাকায় প্রয়োজনীয় সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

অবসটেট্রিক্যাল গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে, বিশ বছরের নিচে সন্তান নেয়া। এছাড়া প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, বিলম্বিত প্রসব ও ঠিকমতো প্রসব করতে না পারায় ইনফেকশন। অন্যদিকে কম ওজন নিয়ে জন্ম, প্রি-ম্যাচিউর, জন্মের পরপর শ্বাস না নেয়া ও নাভিতে ইনফেকশনের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়। মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমাতে হলে এ খাতে দক্ষ জনবল বড়ানো জরুরি।

বাংলাদেশ জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশল, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং দক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে প্রসবের হার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা। পাশাপাশি মাতৃমৃত্যুর হার এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা। গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪ বার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা।

মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে প্রথম সন্তান প্রসবের পর তিন বছর বিরতি নেয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। একইসঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ভারী জিনিস বহন না করা, নিয়মিত টিকা নেয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বা পোস্ট নেটাল কেয়ার নেয়া এবং বাড়িতে প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত ক্লিনিক ও হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্বজনদের প্রতি আহ্বান অধিদপ্তরের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে এখনও চিকিৎসকদের বিপরীতে অভিজ্ঞ নার্সের সংখ্যা অনেক কম। প্রয়োজনের তুলনায় প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সংখ্যাও কম। কিন্তু মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমাতে তাদের ভূমিকা অপরিহার্য। একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স-ধাত্রী তৈরিতে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একইসঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ভারী জিনিস বহন না করা, নিয়মিত টিকা নেয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বা পোস্ট নেটাল কেয়ার নেয়া এবং বাড়িতে প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত ক্লিনিক ও হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্বজনদের প্রতি আহ্বান অধিপ্তরের। পাশাপাশি গর্ভকালীন সময়ে সুষম খাবার ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রসূতি ও তার অনাগত সন্তানের জন্য খুবই প্রয়োজন।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

আজ আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

আপডেট টাইম : ০১:০২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

দেশে নবজাতক, এক বছরের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এই তিন ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বেড়েছে। এদিকে একজন নারীর সন্তান গর্ভধারণের আগ থেকে প্রসব পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হয়। এ সময় জটিলতা তৈরির শঙ্কা বেশি থাকে। সরকারের পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যু কমাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব জরুরি। কিন্তু প্রসূতি সেবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে মাতৃসেবা। এমন পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০২৪।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-  ‘হাসপাতালে সন্তান প্রসব করান, মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচান। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সকল নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণই হল নিরাপদ মাতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এ বিষয়ে অনুমোদন দিলে, পরের বছর থেকে দেশব্যাপী দিবসটি পালন শুরু হয়। পরে ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে।

অপরদিকে দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। নবজাতক, এক বছরের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু তিন ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বাড়তি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিগত পাঁচ বছরের হিসাবে এমন চিত্র উঠে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে।

২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪। বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদনে (২০২৩) এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছর গত ২৫ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। বিবিএস বলছে, ২০২২ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১।

বিবিএস প্রতিবছরই ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ প্রকাশ করে থাকে। এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্ম, মৃত্যু, আয়ুষ্কাল, বিয়ের মতো নানা বিষয়ের চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজারে। বিবিএসের হিসাবে, দেশে পুরুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। এর মানে, গড় হিসাবে এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। প্রত্যাশিত গড় আয়ু মানে হলো, ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা গড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর আয়ু পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়।

শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। আগের বছর যা ছিল ৭২ দশমিক ৪।

জানতে চাইলে পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (মা ও শিশু) ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, গর্ভবতী নারীর প্রসবপূর্ব সেবা ‘অ্যান্টিন্যাটাল কেয়ার’ (এএনসি) এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা ‘পোস্ট নেটাল কেয়ার’ (পিএনসি) নেয়া পরামর্শ দেয়া হয়। এতে গর্ভের সন্তান চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাজ গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা। প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ে এমনিতেই নানা সংকটে সেবাকেন্দ্রগুলোতে মাতৃসেবায় জনবল ও অবকাঠামোগত নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে নানা কারণে স্বাভাবিক সেবাও ব্যাহত হয়। এ সময়ে প্রথম দফায় সেবা নেন ৮২ শতাংশ প্রসূতি নারী। কিন্তু চতুর্থ দফায় গিয়ে সেবা নেয়ার হার কমে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে। অর্থাৎ সেবার বাইরে ৩৫ ভাগ প্রসূতি। ফলে গর্ভবতী মায়েদের সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় জটিলতা বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে হলে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটাকে ৭০ শতাংশে নিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করা গেলেও বাকি অর্ধেক এখনও বাড়িতেই হচ্ছে। অনেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গেলেও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল না থাকায় প্রয়োজনীয় সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

অবসটেট্রিক্যাল গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে, বিশ বছরের নিচে সন্তান নেয়া। এছাড়া প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, বিলম্বিত প্রসব ও ঠিকমতো প্রসব করতে না পারায় ইনফেকশন। অন্যদিকে কম ওজন নিয়ে জন্ম, প্রি-ম্যাচিউর, জন্মের পরপর শ্বাস না নেয়া ও নাভিতে ইনফেকশনের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়। মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমাতে হলে এ খাতে দক্ষ জনবল বড়ানো জরুরি।

বাংলাদেশ জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশল, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং দক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে প্রসবের হার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা। পাশাপাশি মাতৃমৃত্যুর হার এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা। গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪ বার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা।

মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে প্রথম সন্তান প্রসবের পর তিন বছর বিরতি নেয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। একইসঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ভারী জিনিস বহন না করা, নিয়মিত টিকা নেয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বা পোস্ট নেটাল কেয়ার নেয়া এবং বাড়িতে প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত ক্লিনিক ও হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্বজনদের প্রতি আহ্বান অধিদপ্তরের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে এখনও চিকিৎসকদের বিপরীতে অভিজ্ঞ নার্সের সংখ্যা অনেক কম। প্রয়োজনের তুলনায় প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সংখ্যাও কম। কিন্তু মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমাতে তাদের ভূমিকা অপরিহার্য। একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স-ধাত্রী তৈরিতে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একইসঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ভারী জিনিস বহন না করা, নিয়মিত টিকা নেয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বা পোস্ট নেটাল কেয়ার নেয়া এবং বাড়িতে প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত ক্লিনিক ও হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্বজনদের প্রতি আহ্বান অধিপ্তরের। পাশাপাশি গর্ভকালীন সময়ে সুষম খাবার ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রসূতি ও তার অনাগত সন্তানের জন্য খুবই প্রয়োজন।

নিউজ লাইট ৭১