সন্ত্রাসী যেই হোক তাদের প্রতিহত করা যেকোনো মূল্যে দরকার
- আপডেট টাইম : ১১:১৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪
- / 31
ঈদ ও পাহাড়ের সাংগ্রাই উৎসবকে সামনে রেখে প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। আদিবাসী ও বাঙালিদের ঈদ ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হবে অল্পদিনের ব্যবধানে। সবাই যে যার সাধ্যমতো কেনাকাটায় ব্যস্ত। ব্যস্ত উৎসব পালনের আয়োজন নিয়ে। পাহাড়ে নববর্ষ ও ঈদের এই আনন্দ এখন শঙ্কায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় মানুষ ব্যাংকিংয়ের ওপরে যেমন আস্থা হারায়, শঙ্কাও তাকে তাড়া করে ফেরে।
গত মঙ্গল ও বুধবার দুপুরে বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই মর্মন্তুদ ও হতাশাব্যঞ্জক। প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরনের হামলা কোনোমতেই কাম্য নয়। এই হামলা চালিয়েছে একদল সশস্ত্র লোক। তারা টাকা লুট করেছে ব্যাংকের। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে বান্দরবানের তিনটি ব্যাংক শাখায় হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা-ডাকাতি এবং ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি গত মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভাগে ঘটলেও থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ভরদুপুরে। দুটি ঘটনাতেই পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ এর নাম এসেছে; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত। এ ঘটনার পর ভয় ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য তিন জেলার ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত সবার মধ্যে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে প্রতিটি ব্যাংকই তাদের শাখাকে সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দিনে-দুপুরে অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ব্যাংক ডাকাতির পর থেকে বান্দরবানের থানচির রাস্তা-ঘাট অনেকটা ফাঁকা, ওষুধ আর খাবারের মতো জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া বেশিরভাগ দোকানেই ঝুলছে তালা। প্রায় একই অবস্থা রামু উপজেলা সদরেও। মূল শহরের অধিকাংশ দোকানপাট দিনের বেলাতে বন্ধ দেখা গেলেও মোড়ের কিছু কিছু দোকানে মানুষের জটলা রয়েছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা, লোকজনের চলাচলও কম।
বান্দরবানের রামু উপজেলা সদরের ‘বম পার্টি’র শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক শাখায় একযোগে হামলা চালায়। পরে শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এখনও তার খোঁজ মেলেনি। বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। রুমা ও ৪৭ কিলোমিটার দূরের থানা থানচিতে উপজেলায় হয় দ্বিতীয় হামলা। তারা কৃষি ব্যাংক থেকে দুই লাখ ৮ হাজার টাকা এবং সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট করে নেয় তারা। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল করিম ধারণা করছেন, দুটি ঘটনাই একই গোষ্ঠীর কাজ।
নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পর ভাবা হচ্ছে এই গোষ্ঠীকে পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ করা কঠিন। এখানে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ ভূমিকা প্রয়োজন। বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির প্রেক্ষাপটে পাহাড়ের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও মানুষের শঙ্কা কোনো কিছুতেই কাটছে না। আতঙ্কিত প্রহর কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ২০২২ সালের শুরুর দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনের কথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়। এ ঘটনায়ও এদের নাম আবার উঠে এলো। সন্ত্রাসী যেই হোক তাদের প্রতিহত করা যেকোনো মূল্যে দরকার। সেই সঙ্গে মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ জরুরি।
নিউজ লাইট ৭১