বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে চলুক
- আপডেট টাইম : ০৪:২৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
- / 30
মানবসভ্যতার ইতিহাসে ২৫ মার্চ এক বেদনাবিধুর ইতিহাসের ভয়াল স্বাক্ষর বহন করে চলছে। ১৯৭১ সালের এ রাতে বাঙালির জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত নেমে এসেছিল। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এক গণহত্যার শুরু করেছিলো হানাদার পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী। তারা ঘুমন্ত, নিরস্ত্র, স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। বর্বরোচিত এই গণহত্যার কারণ ছিলো আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া।
‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নীলনকশায় ঢাকার ৪টি স্থান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং তৎকালীন পিলখানা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)। যার ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্রদের মধ্যে ৪৫ জন শহীদ হন।
বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। ২৫ মার্চ রাত থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ২৫ মার্চ কালরাত্রি এবং এর পরবর্তী কয়েকদিন ঢাকা শহরজুড়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলে যেটা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। দেশ যেন ঘাতকের উল্লাসের মঞ্চ হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। ফিরে দাঁড়ায় বীর বাঙালি।
রাজারবাগে পুলিশ বাহিনী, পিলখানায় ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) সদস্যরা প্রাণপণে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালালেও ভারি অস্ত্রের কাছে তারা টিকতে পারেনি। ক্রমশ পাকিস্তান বাহিনীর নারকীয়তা বাড়ছিল, তার সমান্তরালে বাড়িছিল প্রতিরোধযুদ্ধও। স্বাধীনতার প্রত্যয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন রক্তাক্ত ও বিভীষিকাময় ২৫ মার্চ কালরাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সে রাতে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘর-বাড়ি, দোকানপাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশানভূমি।’
শুধু নিষ্ঠুর ও বীভৎস হত্যাকাণ্ডই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও সেদিন রেহাই পাননি জল্লাদ ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে। মাত্র এক রাতে এমন নির্বিচারে গণহত্যার ঘটনা বিশ্বে নজিরবিহীন। পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বর গণহত্যার নজির স্থাপন করে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ওই রাতে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যার প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর আর বীর বাঙালিকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর রাজনৈতিক কর্মী, বাঙালি সেনা আর সাধারণ মানুষের সম্মিলিত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শুরু হয় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধপর্ব।
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নসাধ ও আকাক্সক্ষার ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, বিপুল প্রাণহানি আর ধ্বংসযজ্ঞের পর ১৬ ডিসেম্বর উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতায় শহীদদের জন্য জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাক বাংলাদেশ- এ প্রত্যাশা দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও।
নিউজ লাইট ৭১