ডিম কেন খাবেন
- আপডেট টাইম : ১২:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪
- / 56
ডিমকে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একে বলা হয় সুপার ফুড। এতে উচ্চ প্রোটিন, প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। অনেকে কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিম খান না। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কারণ, একটি ডিমে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা খুব বেশি নয়।
একটি সিদ্ধ ডিমে রয়েছে ৭৮ ক্যালরি, ৬ দশমিক ৩ গ্রাম প্রোটিন, ৫ দশমিক ৩৪ গ্রাম ফ্যাট ও সামান্য কার্বোহাইড্রেট। এ ছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ফসফোরিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন ডি, জিংক, ফোলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোলিন, লুটেইন, জেক্সানথিন।
ডিম খাওয়ার উপকারি দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নেই—
ডিমে থাকা কোলাইন মস্তিষ্কের জন্য উপকারী আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে যে ফসফোলিপিডগুলো সচল রাখে তারা কোলাইন দ্বারা গঠিত। এই ভিটামিন আমাদের মস্তিষ্কের গঠনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। কোলাইনের অভাব স্মৃতি হ্রাস ঘটায়। দিনে দুটো করে ডিম আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোলাইনের জোগান দেয়। তাই মস্তিস্ককে সুস্থ্য রাখতে প্রতিদিন অন্তত দুটো ডিম খাওয়া খুবই জরুরি।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে লুটিন নতুন গবেষণায় দেখা গেছে মুরগির ডিমে প্রচুর পরিমাণ লুটিন থাকে। এই লুটিন আমাদের দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার ও তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে লুটিনের অভাব পড়লে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসে। চোখের টিস্যুকে ক্ষয় থেকে বাঁচাতে তাই প্রতিদিন ডিম খান।
ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে আমাদের শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি সরবরাহ করতে চাইলে খেতে হবে এক চামচ মাছের তেল বা একটি সেদ্ধ ডিম। বেশিরভাগ মানুষই বেছে নেবে দ্বিতীয়টা। অবাক হলেও সত্য এই দুটো খাবারেই একই পরিমাণ ভিটামিন ডি আছে। অনেক জায়গায় ডিমে ভিটামিন ডির পরিমাণ বাড়াতে মুরগিদের ভিটামিন ডি খাওয়ানো হয়। খাবারের সাথে আমরা যে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করি তা শোষণ করতে ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। মনে রাখা ভালো, ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়কে শক্ত করে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ত্বক, চুল ও লিভার সুস্থ রাখে আমাদের চুল ও ত্বক শক্ত ও টানটান রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন বি১২, বায়োটিন ও সহজে হজম হয় এমন পুষ্টিকর প্রোটিন। তাছাড়া আমাদের লিভারে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে মুরগির ডিমে থাকা ফসফোলিপিড।
কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় নতুন গবেষণায় দেখাচ্ছে যে ডিম আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং ডিমে থাকা ফসফোটাইডস আমাদের শরীরের কোলেস্টেরেরল মাত্রা ঠিক রাখে। এছাড়াও ফসফোটাইড আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল উৎপাদনে বাঁধা দেয়। ডিমে থাকা ওমেগা-৩ এসিড ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল কমায়। এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে সকালের নাস্তায় কম ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি মুরগির ডিম খেলে ওজন কমানোর গতি দ্বিগুন করে। শুধু তাইই নয়, এ ধরণের ব্রেকফাস্ট আমাদের শরীরের নিউট্রিশন লেভেলকে সন্তুষ্ট করে সারাদিনে অন্যান্য খাবার গ্রহনের পরিমাণ কমায়।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় মস্তিস্কের সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিমে থাকা কোলাইন ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে যেসব মেয়েরা তাদের বয়ঃসন্ধিতে প্রতিদিন ডিম খেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ পর্যন্ত কম দেখা যায়।
গর্ভধারণে সাহায্য করে আমাদের শরীরে সেক্স হরমোনগুলোর গঠনে ভিটামিন বি অন্যতম ভূমিকা পালন করে। যেসব মহিলারা গর্ভধারণ করতে চায় তাদের জন্য ভিটামিন বি৯ এ থাকা ফলিক এসিড খুবই প্রয়োজনীয়। এটা লাল রক্ত কণিকা ও ফিটাসে থাকা নিউরাল টিউব গঠনে ও ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। বাচ্চার মানসিক প্রতিবন্ধকতাও দূর করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। একটি মুরগির ডিমে ৭.০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন বি-৯ পাওয়া যায়।
বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে ডাচ বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ডিম খাওয়া ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়স্ক ৮৭ শতাংশ মহিলার ত্বকে থাকা বয়সের চিহ্ন দূর হয়েছে ও চামড়ার ঝুলে পড়া ভাব দূর হয়েছে। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে যারা প্রতিদিন দুটো করে ডিম খেয়েছ তাদের চোখের নীচের ভাঁজ দৃশ্যমান পরিমাণে কমে গিয়েছে।
এতদিন আমরা জেনে এসেছি ডিম খেলে মোটা হয়, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ইত্যাদি, যা আদৌ সঠিক নয়। বরং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে প্রতিদিন অন্তত দুটো ডিম খাওয়ার উপকারীতা অনেক। তাই আসুন আজ থেকেই গড়ে তুলি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
নিউজ লাইট ৭১