শেষ হল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব
- আপডেট টাইম : ০৫:০৬:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / 17
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হল আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে (জুবায়েরপন্থি) মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। হেদায়েতি বয়ানের পর বেলা ৯টা ৫৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় সকাল ১০টা ২০মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের সূরা সদস্য, শীর্ষ মুরুব্বি, কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের আহমদ। মোনাজাতে অংশ নিতে ময়দান ও আশপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন লাখো লাখো মুসল্লি।
ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। মহামহিম, অসীম, অনন্ত, প্রেমময় ও দয়াময় আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভে আকুতি ব্যক্ত করে নিজ নিজ কৃতি কর্মেও জন্য পানিতে বুক বাসিয়ে ক্ষমা চান মহামহিমের দরবারে। ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মুসল্লি সবকিছু ভুলে দু’হাত তোলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন। লাখো কন্ঠে উচ্চরণ আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে তুরাগ তীর।
রোববার ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্খক্ষিত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিলধারণের ঠাঁই ছিল না।
হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ মোনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছেন সবাইকে তুমি কবুল করো। ইজতেমার বক্তা ও শ্রোতা সবাইকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো। হে আল্লাহ আমাদের ঈমানকে মজবুত করে দাও, আমাদের সবার মাঝে মানবতা বৃদ্ধি করে দাও, হে আল্লাহ আমাদের আখলাক হেফাজত করার তৌফিক দান করো, হে আল্লাহ শয়তানের ধোঁকা থেকে আমাদের হেফাজত করো, হে আল্লাহ আমাদের নবীর সাফায়াত নসীব করো।’
মুসল্লিদের বাঁধভাঙা জোয়ার : বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা তো ছিলেনই, শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ ও স্টিমারে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝক্কিঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। রাজধানী ঢাকার সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ছিল পূর্ণ ছুটির আমেজ।
এর আগে রোববার ভোর থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে টঙ্গী পৌঁছতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। কয়েক লাখ মানুষ রাতেই ইজতেমার মাঠ কিংবা আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় অবস্থান নিয়েছেন। সকাল ৮টার মধ্যে গোটা এলাকা জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়
দুই বছর পর এবার দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব রোববার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে। মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
নিউজ লাইট ৭১