বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত
- আপডেট টাইম : ০২:০২:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 103
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে দিল্লি থেকে হায়দারাবাদ, মহারাষ্ট্র থেকে কর্নাটক, সর্বত্র রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পুনে, কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরে চলছে মিছিল-বিক্ষোভ। বেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভে আটক করা হয়েছে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। টাউন হলের কাছে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় তাকে আটক করা হয় বলে জানা গিয়েছে। বেঙ্গালুরুতে আগের থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখার সময় টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বর্ষীয়ান ইতিহাসবিদকে। রামচন্দ্র গুহ-সহ অন্যদের প্রতি পুলিশের ব্যবহারের কড়া নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, এই সরকার পড়ুয়াদের ভয় পাচ্ছে। নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখা দেশের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকেও ভয় পাচ্ছে সরকার। রামচন্দ্র গুহকে আটকের নিন্দা করছেন। আটক হওয়া প্রত্যেকের প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের সহমর্মিতা রয়েছে, টুইটে পোস্ট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনদের নেতৃত্বে কলকাতায় মিছিল হয়েছে। অপর্ণা সেনের বার্তা, ধর্মনিরপেক্ষতায় সুতোয় বাঁধা দেশ। সুতো ছিন্ন হলে দেশ ভেঙে যাবে। অপর্ণা সেন বলেছেন, এটি আমাদের উপমহাদেশ। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতায় সুতোয় বহু ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বাঁধা রয়েছে। যদি এই সুতো ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে দেশ ভেঙে যাবে। মিছিল থেকেই অভিনেতা কৌশিক সেন বলেছেন, সবাই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করছে। এখন জামিয়া মিলিয়া, এরপর আমাদের সঙ্গে ঘটতে পারে। আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। জনমত তৈরি হওয়া দরকার। কেন্দ্রের টনক নড়া উচিত ।
অন্যদিকে, দিল্লিতে প্রাক্তন ছাত্র নেতা উমর খালিদ ও কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিতকেও আটক করা হয়েছে। মান্ডি হাউস থেকে আটক হয়েছেন বাম নেতা ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাত, নীলোত্পল বসু। প্রবল বিক্ষোভের জেরে ৮ নং জাতীয় সড়কে গলফ কোর্স রোড, এমজি রোড, সাইবার সিটি ও ওল্ড দিল্লি রোডে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না-বেরনোর জন্য শহরবাসীকে অনুরোধ করেছে দিল্লি পুলিশ।
এদিকে, অশান্তির আঁচ পেয়ে বুধবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। ৪ জনের বেশি লোকের জমায়েতের উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজ্যে রাজ্যে সম্মিলিত বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে গোটা দেশ। বেঙ্গালুরুতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আটক হয়েছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। টাউন হলের বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন তিনি। তাকে রীতিমতো টানাহ্যাঁচড়া করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। আটক হওয়ার পর রামচন্দ্র গুহ বলেছেন, দেশে স্বৈরতন্দ্র চলছে। হাতে গান্ধীর পোস্টার নেওয়ার জন্য ও সংবাদমাধ্যমকে সংবিধানের বিষয়ে বলার জন্য তাকে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ১৪৪ ধারাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দিল্লিতে আগাম সতর্কতা হিসাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৪টি মেট্রো স্টেশন। এর ফলে তীব্র যানজটে জেরবার হয় দিল্লি-গুরুগ্রাম সীমানা। লাল কেল্লা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে দিল্লি পুলিশ। কোনো রকম বড় জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে তা উপেক্ষা করেই ছাত্র ও সমাজকর্মীদের বিক্ষোভ ও আরেকটি বামেদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে রাজধানী। হাজার হাজার মানুষ লাল কেল্লার সামনে জড়ো হয়েছেন। ব্যারিকেড তৈরি করে মিছিল আটকানোর চেষ্টা চালায় দিল্লি পুলিশ।
লাল কেল্লা এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন স্বরাজ ভারতের জাতীয় সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব। তিনি নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। আটক হওয়ার পর পুলিশ ভ্যানেই সেলফি তুলে টুইটারে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ১৯ ডিসেম্বর আটক হতে পেরে গর্বিত। লাল কেল্লা থেকে আটক করা হয়েছে। হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। আরও হাজার হাজার বাকি আছে। তাদের বাওয়ানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর মধ্যেই ২ দিনের গুজরাট সফর বাতিল করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবারই উনঝা-তে পাতিদার সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল অমিত শাহের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজের রাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনাই বাতিল করেছেন তিনি।