ঢাকা ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজের নিরাপত্তাই নেই

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৮:২৬:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২
  • / 33

পাহারাদার (ছবি : নিউজ লাইট ৭১)

দারোয়ান বা পাহারাদার অতি পরিচিত একটি পেশা। বাড়িঘর, অফিস আদালত, গার্মেন্টস, কলকারখানা, শপিংমল, আবাসিক এলাকা ইত্যাদির রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের এ দুটি নামে ডাকা হয়।

দেশে বিভিন্ন চাকরির বেতন বাড়ানোর ধারা অব্যাহত থাকলেও অবহেলিত পাহারাদাররা। যার কারণে দিবারাত্রি অন্যের সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার এ পেশায় থাকা একাধিক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দীর্ঘদিন সেবা দেওয়া স্বত্বেও তাদের বেতন ৮-১০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এদের মধ্যে এমনও আছে এক যুগে কাজ করে বেতন ৮ হাজারে আটকা। তবুও জীবিকার তাগিদে শত কষ্ট সহ্য করে এ পেশায় আছেন তারা।

বাংলাদেশের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জেলা হিসেবে সুপরিচিত নারায়ণগঞ্জ। এ জেলার অধীনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলটি বেশ ঘনবসতিপূর্ণ। কেননা এখানে রয়েছে আদমজী ইপিজেড, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, অসংখ্য পোশাক কারখানা, আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

দেশের অন্যতম শিল্প এরিয়া নারায়ণগঞ্জ হওয়ায়। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে বসবাস করে মানুষ। দিনদিন এখানকার বাসস্থানের চাহিদা যেমন বাড়ছে। ঠিক তেমনি দারোয়ানের সংখ্যাও। তবে অবমূল্যায়নে পরিশ্রমের ফল পান তারা।

দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার খরচ বাড়লেও বেতন বাড়েনি দারোয়ানদের। অথচ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পেশায় নিযুক্ত তারা।

কথা হয় সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড কাসসাফ শপিং সেন্টারের পাহারাদার ফিরোজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, আমি গত দুই বছর ধরে এ মার্কেটে চাকরি করি। মাসে ৩০ দিন কাজ করা লাগে আমাদের। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে। ৮ হাজার টাকা বেতনে। আমার পরিবারের সদস্য ছিল ছেলে-মেয়েসহ চার জন। ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে দুই সদস্যের সংসার আমাদের। চলাফেরায় একটু কষ্ট হয় বাজার সদাইয়ের দাম অনেক বেশি হওয়ায়। কি করবো এ চাকরির বেতন দিয়ে সংসার চালাই। বয়স হয়েছে এখন তো আর ভারী কাজকর্ম করা সম্ভব না।

মিজমিজি টিসি রোড সংলগ্ন ইউরো টাওয়ার নামক বাড়ির দারোয়ান শাহাবুদ্দিন জানান, এ বাড়িতে আমার ১২ বছর (এক যুগ) ধরে কাজ করা হয়। চার হাজার টাকার বেতনে চাকরি শুরু করেছিলাম। এখন ৮ হাজার টাকা পাই। এক যুগে ৪ হাজার বেড়েছে। তবে প্রতি বছর দুই ঈদে বেতনর সাথে অর্ধেক টাকা বোনাস হিসেবে দেওয়া হয়। এ বেতনে তো সংসার চালানো কষ্টের, ছেলেরা চাকরি করে বিদায় সমস্যা একটু কম হয়। তবে আমি বেশি হলে আর এক বছর আছি এখানে। মূলত আমার বাসার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে থেকে গেছি।

হিরাঝিল আবাসিক এলাকার ব্রাক ব্যাংক এটিএম বুথের দারোয়ান মো. আবু সাঈদ জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে তিনি এ বুথের আওতায় চাকরি করেন। নয় হাজার পাঁচশ টাকা তার বেতন। তিনি গত তিন বছর যাবত এখানে কাজ করে। তার আগে আরেকটি বুথে কর্মরত ছিলেন।

কথা হয় একই এলাকার একটি বসতবাড়ির আরেক পাহারাদার আক্কাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এ বাসায় বহুদিন ধরে চাকরি করি। মাসে ১০ হাজার টাকা পাই। এ টাকা দিয়েই পরিবার নিয়ে চলতে হয়। কি করার আমাদের মতো দারোয়ানদের চিন্তা তো আর কেউ মাথায় রাখে না।

নুরউদ্দীন আহমেদ নামের নারায়ণগঞ্জের এক সমাজকর্মী বলেন, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেও তাদের বেতন আশানুরূপ বৃদ্ধি পায়নি। যেসব পাহারাদাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা নিযুক্ত তাদের বেতন কিছুটা বেশি। তবে ব্যক্তিগতভাবে যারা এ পেশায় যুক্ত তাদের বেতন খুবই সামান্য। এককথায় বলতে গেলে তারা অবহেলিত। মার্কেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাড়ির মালিকরা তাদের বেতন কম দিয়ে অর্থ সাশ্রয় করতে চায়। পাহারাদারদের এ কাজকে তারা সঠিক মূল্যায়ন করতে চান না। আমাদের সবার উচিত তাদের কাজকে যথাযথ মূল্যায়ন করে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button
Tag :

শেয়ার করুন

নিজের নিরাপত্তাই নেই

আপডেট টাইম : ০৮:২৬:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২

দারোয়ান বা পাহারাদার অতি পরিচিত একটি পেশা। বাড়িঘর, অফিস আদালত, গার্মেন্টস, কলকারখানা, শপিংমল, আবাসিক এলাকা ইত্যাদির রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের এ দুটি নামে ডাকা হয়।

দেশে বিভিন্ন চাকরির বেতন বাড়ানোর ধারা অব্যাহত থাকলেও অবহেলিত পাহারাদাররা। যার কারণে দিবারাত্রি অন্যের সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার এ পেশায় থাকা একাধিক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দীর্ঘদিন সেবা দেওয়া স্বত্বেও তাদের বেতন ৮-১০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এদের মধ্যে এমনও আছে এক যুগে কাজ করে বেতন ৮ হাজারে আটকা। তবুও জীবিকার তাগিদে শত কষ্ট সহ্য করে এ পেশায় আছেন তারা।

বাংলাদেশের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জেলা হিসেবে সুপরিচিত নারায়ণগঞ্জ। এ জেলার অধীনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলটি বেশ ঘনবসতিপূর্ণ। কেননা এখানে রয়েছে আদমজী ইপিজেড, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, অসংখ্য পোশাক কারখানা, আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

দেশের অন্যতম শিল্প এরিয়া নারায়ণগঞ্জ হওয়ায়। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে বসবাস করে মানুষ। দিনদিন এখানকার বাসস্থানের চাহিদা যেমন বাড়ছে। ঠিক তেমনি দারোয়ানের সংখ্যাও। তবে অবমূল্যায়নে পরিশ্রমের ফল পান তারা।

দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার খরচ বাড়লেও বেতন বাড়েনি দারোয়ানদের। অথচ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পেশায় নিযুক্ত তারা।

কথা হয় সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড কাসসাফ শপিং সেন্টারের পাহারাদার ফিরোজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, আমি গত দুই বছর ধরে এ মার্কেটে চাকরি করি। মাসে ৩০ দিন কাজ করা লাগে আমাদের। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে। ৮ হাজার টাকা বেতনে। আমার পরিবারের সদস্য ছিল ছেলে-মেয়েসহ চার জন। ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে দুই সদস্যের সংসার আমাদের। চলাফেরায় একটু কষ্ট হয় বাজার সদাইয়ের দাম অনেক বেশি হওয়ায়। কি করবো এ চাকরির বেতন দিয়ে সংসার চালাই। বয়স হয়েছে এখন তো আর ভারী কাজকর্ম করা সম্ভব না।

মিজমিজি টিসি রোড সংলগ্ন ইউরো টাওয়ার নামক বাড়ির দারোয়ান শাহাবুদ্দিন জানান, এ বাড়িতে আমার ১২ বছর (এক যুগ) ধরে কাজ করা হয়। চার হাজার টাকার বেতনে চাকরি শুরু করেছিলাম। এখন ৮ হাজার টাকা পাই। এক যুগে ৪ হাজার বেড়েছে। তবে প্রতি বছর দুই ঈদে বেতনর সাথে অর্ধেক টাকা বোনাস হিসেবে দেওয়া হয়। এ বেতনে তো সংসার চালানো কষ্টের, ছেলেরা চাকরি করে বিদায় সমস্যা একটু কম হয়। তবে আমি বেশি হলে আর এক বছর আছি এখানে। মূলত আমার বাসার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে থেকে গেছি।

হিরাঝিল আবাসিক এলাকার ব্রাক ব্যাংক এটিএম বুথের দারোয়ান মো. আবু সাঈদ জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে তিনি এ বুথের আওতায় চাকরি করেন। নয় হাজার পাঁচশ টাকা তার বেতন। তিনি গত তিন বছর যাবত এখানে কাজ করে। তার আগে আরেকটি বুথে কর্মরত ছিলেন।

কথা হয় একই এলাকার একটি বসতবাড়ির আরেক পাহারাদার আক্কাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এ বাসায় বহুদিন ধরে চাকরি করি। মাসে ১০ হাজার টাকা পাই। এ টাকা দিয়েই পরিবার নিয়ে চলতে হয়। কি করার আমাদের মতো দারোয়ানদের চিন্তা তো আর কেউ মাথায় রাখে না।

নুরউদ্দীন আহমেদ নামের নারায়ণগঞ্জের এক সমাজকর্মী বলেন, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেও তাদের বেতন আশানুরূপ বৃদ্ধি পায়নি। যেসব পাহারাদাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা নিযুক্ত তাদের বেতন কিছুটা বেশি। তবে ব্যক্তিগতভাবে যারা এ পেশায় যুক্ত তাদের বেতন খুবই সামান্য। এককথায় বলতে গেলে তারা অবহেলিত। মার্কেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাড়ির মালিকরা তাদের বেতন কম দিয়ে অর্থ সাশ্রয় করতে চায়। পাহারাদারদের এ কাজকে তারা সঠিক মূল্যায়ন করতে চান না। আমাদের সবার উচিত তাদের কাজকে যথাযথ মূল্যায়ন করে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button