প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ
- আপডেট টাইম : ০১:০৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 146
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: আজ জমকালো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন।
বেলা ৩টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সাথে আগামীকাল শনিবার সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য দলটির নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দেবেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’ স্লোগানে সম্মেলনকে ঘিরে সারা দেশে দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ ২০ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে।
সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য। জাতীয় সম্মেলনে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর অংশ নেবেন। পৌঁছে দেয়া হয়েছে আমন্ত্রিত অতিথিদের দাওয়াতপত্র।
এ সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। সারা দেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা অনুসারে কার্ড, ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
সম্মেলনকে নির্বিঘ্নে করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।
সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলন স্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবে।
অপরূপ সাজে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান : ক্ষমতাসীন দলটির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে পাল্টে গেছে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায়। অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে গোটা এলাকা।
এর বাইরেও ঢাকাজুড়েই সম্মেলনের ছাপ রয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উত্তর-দক্ষিণমুখী করে সাজানো মূল মঞ্চটি দলীয় নির্বাচনি প্রতীক নৌকার আদলে করা হয়েছে। পদ্মার বুকে ৪০টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্দশন রাখা হয়েছে মঞ্চে। পদ্মা সেতুর নিচে বিশাল জলরাশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা।
একটি ছোট জাহাজও ভাসছে। একপাশে চর ও কাশবন দেখা যাবে। বিশালাকার পাল তোলা নৌকাও ভাসছে নিজের গতিতে। পদ্মা সেতুর ওপর বিশালাকৃতির দলীয় প্রতীক নৌকা। জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি ধারণ করেছে নৌকাটি।
নৌকাটির মাঝে বড় করে লেখা— ২১তম জাতীয় সম্মেলন-২০১৯। মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, দেখলে মনে হবে, যেনো পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা। সেই নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি।
এছাড়া পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও থাকবে। মহান বিজয়ের মাসে আয়োজিত এ সম্মেলনে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতিও থাকবে। এর পেছনে থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ছবি।
নৌকার পেছনের দিকে থাকবে জাতীয় চার নেতাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি। টিএসসি সংলগ্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই একদিকে চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর বিশাল আকারের ছবি, আরেক দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। লেকের পাড়ে দলটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে করা হয়েছে চিত্র প্রদর্শনী।
১৯৪৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নানা সাফল্য ও চড়াই-উৎরাইয়ের খবর চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। উদ্যানের ভেতর বেশ কয়েকটি স্থানে দলীয় প্রতীক বিশাল আকারের নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছয়টি নৌকা।
উদ্যানের গাছে গাছে লাগানো হয়েছে মরিচবাতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এবারের সম্মেলন জাকজমকপূর্ণ নয়, বরং সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা হবে না।
প্রবেশ গেট পাঁচটি : সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট থাকবে। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি।
মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এ ছাড়া সমপ্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেয়া হবে। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ : বিএনপিসহ সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলগুলোকে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছানো হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন থেকে বাদপড়া জামায়াত ইসলামীকে আমন্ত্রণ দেয়া হয়নি।
গতকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। বিএনপির পক্ষে আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেন দলটির সহ-তথ্য ও গবেষণা-বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু। এছাড়া সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যের নেতাদের কার্ড দেয়া হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের এই ডেলিগেট জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেয়। উত্তরায় নিজের বাসায় এ আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেন জিএম কাদের।
এ ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যসব পেশার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম জানান, ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যেমন— বিমানবন্দর, বাস ও রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে অতিথি ও কাউন্সিলরদের স্বাগত জানানো হবে। সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
হাতে হাতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি : সম্মেলনে আগত অতিথি, কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের হাতে সম্মেলনে প্রচার উপ-কমিটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার একটি কার্ড থাকবে।
একই সঙ্গে থাকবে দুটি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাটের ব্যাগে এগুলোর সঙ্গে একটি প্যাড ও একটি কলম দেয়া হবে।
থাকবে চিকিৎসা টিম : সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি। দুপুরে ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে খাবার দেয়া হবে।
খাবারে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে ডিম, ফিরনি ও পানির বোতল থাকবে। আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন স্থানে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ স্টল স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংস্কৃতি-বিষয়ক উপ-কমিটি সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
আলোচনায় সাধারণ সম্পাদক পদ : অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্যদিয়ে টানা নবম বারের মতো সভানেত্রী পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতি পদটি নিশ্চিত হওয়ায় দলের ভিতরে-বাইরের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে। বিশেষ করে নিজ বলয় ও পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে সরব আলোচনা ব্যস্ত দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে গত তিন বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের। দীর্ঘদিন দায়িত্ব থাকায় তার সফলতার পাল্লাই বেশি ভারী। মূলত অসুস্থ শরীর নিয়েও দল ও সরকারের সমানভাবে কাজ করছেন তিনি। তাই দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি। তবে তা নিশ্চিত করেননি কেউ।
জানতে চাইলে দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে সর্বোচ্চটা দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। সামনে এ পদে থাকব কি-না, সেটা মহান আল্লাহ আর আমার নেত্রী (শেখ হাসিনা) জানেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের জাতীয় কাউন্সিলের সভাপতির পদ ছাড়া অন্য সব পদেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিএনপির চার নেতাকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আ.লীগ
আজ শুক্রবার রাজধানীতে শুরু হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দুদিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে দলটি।
তাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপির চার নেতার নামে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিয়েছেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে।বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ফোনে তিনি জানান, ‘আগামীকাল আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি নেতাদের নামে কার্ড পৌঁছে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়াসহ তিনজনের একটি প্রতিনিধি দল গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এসেছিলেন আমন্ত্রণপত্র নিয়ে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাসের নামে কার্ডগুলো দেয়া হয়েছে।’
শায়রুর কবির জানান, দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছেন বিএনপির সহ তথ্য গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু।