পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
- আপডেট টাইম : ০৬:০১:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০২২
- / 29
সাগরসদৃশ বিস্তৃত জলরাশির প্রান্তর শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওর। দেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার চা অধ্যুষিত উপজেলা শ্রীমঙ্গলে এর অবস্থান। শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। শুস্ক মৌসুমে সবুজের সমারোহ আর বর্ষায় জলকেলির খেলা, শীত মৌসুমে বিচিত্র পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে আগমন পর্যটক-দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে।
এ হাওরকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। যা থেকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করতে পারে। কিন্তু সরকারি কোন উদ্যোগ না থাকায় সম্ভাবনাময় হাইল-হাওর আজও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেনি। এই হাওরকে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিগত তিন দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও এগুলোর কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি।
সুত্র জানায়, হাইল-হাওরটি বর্ষায় ১৪ হাজার হেক্টর এলাকায় বিস্তৃত হয় এবং শুস্ক মৌসুমে ১৩০টি বিল ও বেশ কয়েকটি খালে খন্ডিত হয়ে ৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে সংকুচিত হয়ে যায়। হাওর এলাকার ৬০ গ্রামের ৩০ হাজার বসত বাড়িতে ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষ বাস করেন। পশুচারণা, পশুখাদ্য আহরণ, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ, খাদ্য ও ঔষধি হিসেবে শাকপাতার প্রয়োজনে এই হাওরের উপরই নির্ভরশীল এলাকার মানুষ। বিরল নীলপদ্মসহ মাখনা, পানিসিঙ্গারা, পদ্মটোনা, শাপলা, শালুক, শামুক, ঝিনুকসহ জলজ সম্পদের ভাণ্ডার এ হাওর। শীতে আসে হাজার হাজার অতিথি পাখি।
প্রতিবছর শীত মৌসুমে এখানে বিপুল পাখির আগমন ঘটায় এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাসের আওতায় হাইল-হাওরে পাখি শুমারী অনুষ্ঠিত হয় এবং এই তথ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এ হাওর এখন ‘গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এ হাওরের এসব জলজ সম্পদ ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন ভ্রমনবিলাসী মানুষকে মুগ্ধ করে। বর্ষার জলে ভরা হাওরে নৌকায় বেড়ানোর মজাই আলাদা। চারদিকে জলে ভাসা গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি এক ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে। এছাড়া হাওরের বাইক্কা বিলে পাখির অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্য, হিজল-করচের সবুজ বনায়ন যে কোন ভ্রমনপিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করে।
অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য বলেন, পাহাড়-অরণ্য, চা-বাগান ও প্রাচীন নিদর্শনের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আরেক সম্ভাবনাময় স্থান হাইল-হাওর। এই হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। বিশেষ করে হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, কাউয়াদিঘি, হাকালুকি, টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়নাভিরাম। প্রতিটি হাওর পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় এসব হাওরকে পর্যটনকেন্দ্রের জন্য বেছে নেয়ার সময় এসেছে। এ থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার বলেন, হাওর এলাকা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। বর্ষায় হাওরে থাকে জলরাশি আর হেমন্তে রাশি রাশি সোনালী ধান। জীববৈচিত্র্য আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য যেকোন পর্যটককে মুগ্ধ করবে। তাই হাওর ঘিরে এখানে গড়ে উঠতে পারে বিশাল সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র।
হাওর, অরণ্য আর পাহাড়বেষ্টিত উপজেলা শ্রীমঙ্গলে হাওরকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে পরিকল্পনা তৈরী করে হাইল-হাওরকে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত করা হলে সরকারের বিপুল রাজস্ব আয়সহ এলাকার বেকার লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
নিউজ লাইট ৭১