সামাজিক অবক্ষয়ের মুখে নতুন প্রজন্ম
- আপডেট টাইম : ০৫:২২:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০২২
- / 36
নরসিংদী সদর উপজেলার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাধবদী পৌরসভা। ভ্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে উঠা এ শিল্প নগরীতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ শহরে মরণ নেশা মাদক এতটাই ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাধবদী পৌরসভাধীন বাঙ্গালপাড়া, ছোট মাধবদী, কাশিপুর, আলগী মনোহরপুর, আনন্দী ঋষিপাড়া, নওপাড়া ও বিরামপুরে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
অবিলম্বে এ সকল এলাকার মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে নতুন প্রজন্ম সামাজিক অবক্ষয়ের মুখে পড়ে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে এবং পারিবারিক কলহ, খুন, রাহাজানিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ।
মাধবদী পৌরসভাধীন পাঁচতালা এলাকার আনোয়ারের বাড়ি ও বাঙ্গালপাড়ার আঠারবাড়ি নামে পরিচিত দুটি (পরিত্যক্ত) বাড়িতে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। এখানে মাদকের আস্তানা খুলে দেধারছে মাদক বিক্রি করছে ছোট মাধবদীর রাজ্জাক মিয়ার কু-পুত্র মাদক সম্রাট রুহুল আমিন, ঝিনু বেগম, হানিফা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা সহজলভ্য হওয়ায় উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দ্রুত বিস্তার ঘটছে। ফলে ভেঙে পড়েছে সামাজিক ও পারিবারিক শৃঙ্খলা।
মাধবদী পৌর এলাকাসহ আশপাশের পাড়া মহল্লায় এখন গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যের ছড়াছড়ি। ফলে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও গাড়ির ড্রাইভার থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা।
মাধবদী শহর এলাকা ছাড়াও আশপাশের গ্রামের বহু শ্রমিক, যুবক ও ছাত্র মাদকাসক্ত হয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অসামাজিক ও অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন- মাধবদীতে মাদকের ছড়াছড়ি থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ মাদক ব্যবসা চলছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়ে ও উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী যাদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে তারাই মাদকের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সম্প্রতি আনারের প্রাচীর ঘেরা (পরিত্যক্ত) বাড়ি থেকে নরসিংদী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে ৮/১০ জন মাদক সেবীদের হাতেনাতে ধরে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি তাদের মাদক বাণিজ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, পৌরসভার তিন নাম্বার ওয়ার্ড থানার এতো কাছাকাছি হওয়ার পরেও কিভাবে মাদক কারবারিরা এলাকার মহল্লায় পাড়ায় পাড়ায় মাদকের রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গার আশপাশে অলিতে গলিতে চলছে মাদকের কেনাবেচা। পৌরসভায় ২০টির ও বেশি স্পটে মাদক কেনাবেচা হয়। পুলিশ প্রশাসন মাঝেমধ্যে সামান্য গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা জব্দ করলেও চিহ্নিত মাদক কারবারিরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই মাদক নির্মূল করতে হলে এর নেপথ্যে কারা রয়েছে তা চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্থানীয় কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
নিউজ লাইট ৭১