ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে যেকোনো দিন
- আপডেট টাইম : ০৭:২৯:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 100
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান জটিলতা খতিয়ে দেখে কমিশনের আইন শাখা জানিয়েছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা নেই। সেটা জানার পরই ইসি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন সেই তফসিল ঘোষণা হতে পারে যেকোনো দিন।
তবে ইসির দায়িত্বশীলরা বলছেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতে এটা ঘোষণা হবে। জানুয়ারির শেষের দিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। তবে আনুষ্ঠানিক তফসিল যেদিনই ঘোষণা করা হোক, নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে—নথিপত্রে এমনটাই দেখা যেতে পারে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় হবে না বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে (ঋণখেলাপিসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তারা ৩ দিন সময় চায় ইসির কাছে) কমিশন ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকটি সংসদীয় আসন একত্রে গঠিত সিটি নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মাঠে দেখা যেতে পারে। সেনাবাহিনীতে বর্তমানে চলছে শীতকালীন মহড়া। সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২০ জানুয়ারি শেষ হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে এ সময় থেকে দু-এক দিন পিছিয়ে যেতে পারে।
এ নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নিতে যাচ্ছে ইসি। বিশাল পরিসরে ইভিএমের ব্যবহার এই প্রথম। ফলে বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে সেনাবাহিনীর মোতায়েন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রযুক্তির সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে রাজধানীর স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইভিএম অপারেশনে কাজে লাগাতে যাচ্ছে কমিশন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটিতেও একই পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে ইভিএমভীতি দূর করতে চায় ইসি। একে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস দলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী জানান, ঢাকার দুই সিটির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা যেকোনো দিন এ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করব। জানুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, তফসিলের ডেটলাইন ২২ ডিসেম্বর। পারলে এটা শনিবারও ঘোষণা হতে পারে। আর নির্বাচন হবে ৩০ জানুয়ারি, এটা নির্ধারণ আছে।
ইসির দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর এবং সম্ভাব্য সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কিছু দাবি-দাওয়া দেন। তাদের তিনটি দাবির কোনটিই আইনসম্মত বলে মনে হয়নি ইসির কাছে। দাবির প্রথমটি, নতুন হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের আসন্ন সিটি নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ না দিলে ইসির বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেওয়া হয়। ইসি অতীতেও বিদ্যমান তালিকা ধরে বড় পরিসরের নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।
দ্বিতীয় দাবি, নতুন সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের নবনির্বাচিতদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ ছাড়া তফসিল বন্ধ রাখা এবং সীমানা বিন্যাস জটিলতা এড়ানো। কমিশন বলছে, তাদের বহাল রেখে নির্বাচন দিলে ওই কাউন্সিলরদের জন্য মেয়র কে হবেন। কিন্তু সিটি আইনে বলা আছে, ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা নির্দিষ্ট কেউ নন, পুরো সিটির একটা অংশ। সিটি নির্বাচনের পর প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদোত্তীর্ণের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা। ক্ষণগণনা অনুযায়ী, সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের যুক্তিও অযৌক্তিক।
গত নির্বাচনের পর ঢাকার দুই সিটির সীমানাও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে ১৮টি ও ঢাকা উত্তরে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পরে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। এ ছাড়া একই দিনে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে নির্বাচিত ৪৮ কাউন্সিলর, সাধারণ ৩৬ এবং সংরক্ষিত আসন থেকে ১২ নারী কাউন্সিলর আরো বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করতে চান।
ইসির আইন শাখা, এসব আইনি দিক খতিয়ে দেখে কমিশনকে অবহিত করেছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাতে কোনো বাধা নেই। এর আগে স্থানীয় সরকার থেকে কমিশনকে ওভার টেলিফোনে জানিয়েছে দিয়েছে, সিটি নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। এরপরই জোরেশোরে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে থাকে কমিশন।
ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল এক দিনেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে ডিএনসিসিতে প্রথম বৈঠক ১৪ মে, ডিএসসিসিতে ১৭ মে এবং সিসিসিতে ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে হিসাবে ডিএসসিসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১৩ মে, ডিএনসিসির ১৬ মে এবং সিসিসি ৫ আগস্ট।
ডিএসসিসিতে একটি মেয়র পদ, ৭৫টি কাউন্সিলর পদ এবং ২৫টি সংরক্ষিত আসন (নারীদের জন্য) ও ডিএনসিসির একটি মেয়র পদ, ৫৪টি কাউন্সিলর পদ এবং ১৮টি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি।
এদিকে, ইসি সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা-প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের তালিকা করার কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক প্যানেল তৈরি করার জন্য ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।