ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুবিধা নিতে স্ত্রীকে বোন বানালেন স্বামী!

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • / 29

অভিযুক্ত স্বামী-স্ত্রী (ছবি : সম্পাদিত)

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে অনৈতিকভাবে শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন এক নারী। শুধু তাই নয় দাখিল মাদরাসায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়েছেন শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে।

অভিনব এই প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে পরলে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। শুধু ওই মহিলাই নন তার স্বামীও জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে সরকারি চাকুরি গ্রহণের অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মামলাও দেয়া হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভাই-বোন পরিচয়ের এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আনিছুর রহমান ও সোনালী খাতুন।

আনিছুরের পিতার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক। তার বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালেবেরহাট গ্রামে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ সন্তানের মধ্যে আনিছুর রহমান সবার বড়। তার স্ত্রী সোনালী খাতুন একই জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগরাকুড়া গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে।

২০০৭ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সোনালী খাতুন তথ্য গোপন করে নিজের শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে ভোটার হন।

এই পরিচয়ে সে উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদরাসায় ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়। এই মাদরাসা থেকে সোনালী খাতুন ২০১৩ সালে জিপিএ ২.৯৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

অপর দিকে তার স্বামী আনিছুর রহমান ও তার ছোটভাই আজিজুল হক আলাদা ব্যক্তি হলেও তারা দুজন ভোটার আইডি কার্ডে একই নাম ব্যবহার করেন। সেখান আনিছুর রহমান ও আজিজুল হক দুজনে আনিছুর রহমান নাম ব্যবহার করেন।

এনআইডিতে দুইভাই একই নাম ব্যবহার করলেও তাদের ছবি ছিল আলাদা। একই এনআইডি কার্ড ও শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে আনিছুর রহমান বাংলাদেশ রেলওয়েতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরি নেন। তার অশিক্ষিত ছোট ভাই আজিজুল হক বড় ভাইয়ের ৮ম শ্রেণি পাশ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে চাকুরি নেন। এ নিয়ে ২০১৪ সালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন কমিশন তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে মামলা করেন। নাগেশ্বরী থানায় মামলা নং- ১১।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী রাশেদ জানান, অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের স্ত্রীকে বোন বানিয়েছে আনিছুর রহমান। কাজটি ঠিক করে নাই। সে চরম অন্যায় করেছে।

১নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। সে উলিপুর উপজেলায় বিয়ে করেছে। সোনালীর বাবার বাড়ি সেখানেই। ভোটার আইডিতে সোনালী খাতুনের পিতা-মাতার জায়গায় আনিছুরের পিতা-মাতার নাম ব্যবহার করেছে আমি জানি।

আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক ভোটার আইডি দেখে নিশ্চিত করেন সোনালী খাতুন তার ভাবী। তিনি স্বীকার করেন, যখন ভোটার হয়েছিল তখন মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ সুবিধা পেতে তার ভাই এমনটি করেছেন।

আনিছুর রহমান স্বীকার করেন ভুলবশত তার স্ত্রী এমনটি করেছেন। ভোটার আইডি ও শিক্ষা সনদ ঠিক করে নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে সোনালী খাতুন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এ ব্যাপারে সন্তোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের আটজন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। এই নামে তার পুত্রবধূ রয়েছে। সে আনিছুর রহমানের স্ত্রী।

এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, সোনালী খাতুন ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করণের সময় এসএসসি সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button
Tag :

শেয়ার করুন

সুবিধা নিতে স্ত্রীকে বোন বানালেন স্বামী!

আপডেট টাইম : ০৬:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে অনৈতিকভাবে শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন এক নারী। শুধু তাই নয় দাখিল মাদরাসায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়েছেন শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে।

অভিনব এই প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে পরলে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। শুধু ওই মহিলাই নন তার স্বামীও জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে সরকারি চাকুরি গ্রহণের অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মামলাও দেয়া হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভাই-বোন পরিচয়ের এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আনিছুর রহমান ও সোনালী খাতুন।

আনিছুরের পিতার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক। তার বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালেবেরহাট গ্রামে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ সন্তানের মধ্যে আনিছুর রহমান সবার বড়। তার স্ত্রী সোনালী খাতুন একই জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগরাকুড়া গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে।

২০০৭ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সোনালী খাতুন তথ্য গোপন করে নিজের শ্বশুর ও শাশুড়িকে পিতা-মাতার পরিচয় দিয়ে ভোটার হন।

এই পরিচয়ে সে উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদরাসায় ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়। এই মাদরাসা থেকে সোনালী খাতুন ২০১৩ সালে জিপিএ ২.৯৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

অপর দিকে তার স্বামী আনিছুর রহমান ও তার ছোটভাই আজিজুল হক আলাদা ব্যক্তি হলেও তারা দুজন ভোটার আইডি কার্ডে একই নাম ব্যবহার করেন। সেখান আনিছুর রহমান ও আজিজুল হক দুজনে আনিছুর রহমান নাম ব্যবহার করেন।

এনআইডিতে দুইভাই একই নাম ব্যবহার করলেও তাদের ছবি ছিল আলাদা। একই এনআইডি কার্ড ও শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে আনিছুর রহমান বাংলাদেশ রেলওয়েতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরি নেন। তার অশিক্ষিত ছোট ভাই আজিজুল হক বড় ভাইয়ের ৮ম শ্রেণি পাশ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে চাকুরি নেন। এ নিয়ে ২০১৪ সালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন কমিশন তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে মামলা করেন। নাগেশ্বরী থানায় মামলা নং- ১১।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী রাশেদ জানান, অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের স্ত্রীকে বোন বানিয়েছে আনিছুর রহমান। কাজটি ঠিক করে নাই। সে চরম অন্যায় করেছে।

১নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। সে উলিপুর উপজেলায় বিয়ে করেছে। সোনালীর বাবার বাড়ি সেখানেই। ভোটার আইডিতে সোনালী খাতুনের পিতা-মাতার জায়গায় আনিছুরের পিতা-মাতার নাম ব্যবহার করেছে আমি জানি।

আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক ভোটার আইডি দেখে নিশ্চিত করেন সোনালী খাতুন তার ভাবী। তিনি স্বীকার করেন, যখন ভোটার হয়েছিল তখন মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ সুবিধা পেতে তার ভাই এমনটি করেছেন।

আনিছুর রহমান স্বীকার করেন ভুলবশত তার স্ত্রী এমনটি করেছেন। ভোটার আইডি ও শিক্ষা সনদ ঠিক করে নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে সোনালী খাতুন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এ ব্যাপারে সন্তোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের আটজন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। এই নামে তার পুত্রবধূ রয়েছে। সে আনিছুর রহমানের স্ত্রী।

এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, সোনালী খাতুন ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করণের সময় এসএসসি সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button