ঢাকা ০৬:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাজনদের রমরমা কারবারে নিঃস্ব উপকূলবাসী

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • / 32

নিঃস্ব নারী (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চল খুলনার কয়রায় বর্তমানে সুদের ব্যবসা জমজমাট। সুদ ব্যবসায়ী ও সুদি মহাজনরা মানুষের কাছ থেকে অস্বাভাবিক চড়া সুদ আদায় করছে। এদের খপ্পরে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এছাড়াও এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।

প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন ব্যাংকের শাখা আছে।এসব প্রাতিষ্ঠানিক ঋণদান সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি কেন্দ্রিক ঋণ দান ব্যবসা চলছে। নাম মাত্র একটি এনজিও ও গ্রাম্য সমিতি খুলেও করছে রমরমা সুদের কারবার।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, সুদখোর মহাজনরা ঋণ দান করে মাসিক শতকরা ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। এরা পাঁচ দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ত্রিশ /চল্লিশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।

আলামিন ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, সুদ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি কেউ বিপদে পড়ে ৫০ হাজার টাকা সুদে নেন, তাহলে পাঁচ মাস পর পাঁচ লাখ টাকা দিয়েও সুদ ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ হয় না। সুদ ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের জমি পর্যন্ত জোরপূর্বক লিখে নিচ্ছে। এরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে আমাদী ইউনিয়নের এক ব্যক্তি বলেন, আমি ব্যবসার জন্য একজন ব্যক্তি কাছ থেকে কয়েক বছর আগে ১ লক্ষ টাকা নেন, এ পর্যন্ত ৩ লক্ষ টাকা শোধ করলেও আমারে কাছ থেকে নেওয়ার স্ট্যাম্প নিয়ে আবার আমার কাছে টাকার দাবি করে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও করছে।

ঋণ দান কালে এরা ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে ব্যাংকের খালি পাতার চেকে সই নিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংক চেকের পাতায় ইচ্ছামত অংক বসিয়ে নেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে চাপ দিতে থাকে। কোনো কোনো মহাজন আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। এরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে পারে না।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কয়রা উপজেলা ব্যাপী জমজমাটভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মহাজনরা,কিছু জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) এছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোড় সমিতি ও এনজিওর নামে দাদন ব্যবসা চালিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সুদ সিন্ডিকেটের ওপর নজর দিতে এলাকাবাসী প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছেন।

কয়রা থানার ওসি এ বি এম এস দোহা (বিপিএম) বলেন, সুদ ব্যবসায়ীরা বেপরোয়ার কথাটি শুনেছি। এছাড়া সুদ ব্যবসার টাকার জন্য কারও জমি, কারও বাড়ি, এমনকি কাউকে মারধর করা হয়েছে- এমন ঘটনা যদি কেউ থানায় অভিযোগ করে তাহলে সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামার তালুকদার বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button
Tag :

শেয়ার করুন

মহাজনদের রমরমা কারবারে নিঃস্ব উপকূলবাসী

আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চল খুলনার কয়রায় বর্তমানে সুদের ব্যবসা জমজমাট। সুদ ব্যবসায়ী ও সুদি মহাজনরা মানুষের কাছ থেকে অস্বাভাবিক চড়া সুদ আদায় করছে। এদের খপ্পরে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এছাড়াও এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।

প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন ব্যাংকের শাখা আছে।এসব প্রাতিষ্ঠানিক ঋণদান সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি কেন্দ্রিক ঋণ দান ব্যবসা চলছে। নাম মাত্র একটি এনজিও ও গ্রাম্য সমিতি খুলেও করছে রমরমা সুদের কারবার।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, সুদখোর মহাজনরা ঋণ দান করে মাসিক শতকরা ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। এরা পাঁচ দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ত্রিশ /চল্লিশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।

আলামিন ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, সুদ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি কেউ বিপদে পড়ে ৫০ হাজার টাকা সুদে নেন, তাহলে পাঁচ মাস পর পাঁচ লাখ টাকা দিয়েও সুদ ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ হয় না। সুদ ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের জমি পর্যন্ত জোরপূর্বক লিখে নিচ্ছে। এরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে আমাদী ইউনিয়নের এক ব্যক্তি বলেন, আমি ব্যবসার জন্য একজন ব্যক্তি কাছ থেকে কয়েক বছর আগে ১ লক্ষ টাকা নেন, এ পর্যন্ত ৩ লক্ষ টাকা শোধ করলেও আমারে কাছ থেকে নেওয়ার স্ট্যাম্প নিয়ে আবার আমার কাছে টাকার দাবি করে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও করছে।

ঋণ দান কালে এরা ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে ব্যাংকের খালি পাতার চেকে সই নিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংক চেকের পাতায় ইচ্ছামত অংক বসিয়ে নেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে চাপ দিতে থাকে। কোনো কোনো মহাজন আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। এরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে পারে না।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কয়রা উপজেলা ব্যাপী জমজমাটভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মহাজনরা,কিছু জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) এছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোড় সমিতি ও এনজিওর নামে দাদন ব্যবসা চালিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সুদ সিন্ডিকেটের ওপর নজর দিতে এলাকাবাসী প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছেন।

কয়রা থানার ওসি এ বি এম এস দোহা (বিপিএম) বলেন, সুদ ব্যবসায়ীরা বেপরোয়ার কথাটি শুনেছি। এছাড়া সুদ ব্যবসার টাকার জন্য কারও জমি, কারও বাড়ি, এমনকি কাউকে মারধর করা হয়েছে- এমন ঘটনা যদি কেউ থানায় অভিযোগ করে তাহলে সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামার তালুকদার বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ লাইট ৭১

facebook sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button