স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে খুন করেন রিকশাচালক
- আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / 30
চট্টগ্রামের পটিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধর খুনের প্রাথমিক রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। খুব অল্প সময়ে কোটিপতি হতে এবং স্বর্ণের বার ও টাকার লোভে গলা কেটে হত্যা করে রিকশাচালক। পটিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা আটক আইয়ুব আলীর দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ খুনের রহস্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় মামলার ১০ দিনের মাথায় মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রথমে বাপ্পু ধর ও জিল্লুর রহমান নামের সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পটিয়া জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক বিশ্বেশ্বর সিংহের আদালতে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে তাদের পৃথক পৃথক ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মন্জুর করেন আদালত। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে ফটিকছড়ি উপজেলার পাইনদং এলাকার নানার বাড়ি থেকে আইয়ুব আলী (১৯) নামের এ খুনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে গ্রেপ্তার আইয়ুব আলী চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত-২ এর বিচারক নাজমুন নাহারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
রোববার সকালে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিক রহমান আলোচিত ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে।
জবানবন্দিতে আইয়ুব আলী জানায়, তার প্রতিবেশী রিকশাচালক জিল্লুর রহমান গত ৩ সেপ্টেম্বর তাকে অতি অল্প সময়ে কোটিপতি হয়ে স্বাছন্দ্যে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখায়। এজন্য তারা উপজেলার জঙ্গলখাইন এলাকার বিটা ট্রেনিং সেন্টার এলাকায় গিয়ে পরিকল্পনা করে ধনী হতে একটি অপরাধ সংঘটিত করতে হবে। এতে তারা টার্গেট করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে। তারা জানত, চট্টগ্রাম নগরে বিমান ধরের ৭টি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন রাতে বিমান ধর দোকান বন্ধ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার নিয়ে বাড়িতে ফিরে। এমন ধারণায় তাকে আটকানোর পরিকল্পনা নেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ২ দিন বিমান ধরের অপেক্ষায় রাতে লড়িহরা এলাকায় নির্জন এলাকায় তারা ২ জন পাহারা দিয়ে আসছিল। ওই সময় রাস্তায় লোকজন থাকায় তাকে আটকানো সম্ভব হয়নি।
গত ৬ সেপ্টেম্বর একইভাবে রাত ১১টায় বিমান ধর মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা দিয়ে বিমান ধরের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় হত্যাকারীরা তার নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার খোঁজাখুজি করতে চাইলে বিমান ধর বাধা দেয়। এক পর্যায়ে জিল্লুর হাতে থাকা হাসুয়া (দা) দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। তাতে অপারগ হলে আইয়ুব আলীর হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে তার গলায় আঘাত করার জন্য বলে। আইয়ুব আলী বিমান ধরের গলায় ধারালো দা বসিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে জোরালোভাবে বিমান ধরের গলায় ধারালো দা বসিয়ে তার গলা কেটে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিমান ধরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসতে দেখে আইয়ুব আলী বিমান ধরকে জবাই করে পাশের জমির উপর দিয়ে ও রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধারে পুলিশবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করেছে। পুলিশ সুপার স্যার, দক্ষিণের পুলিশ সুপার ক্রাইম স্যারের দিক নির্দেশনায় আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করি। খুনিদের ধরা খু্ব মুশকিল ছিল। তারা পেশাদার খুনি নয় বলে তাদের ধরতে বেগ পেতে হয়েছে। অপেশাদার খুনি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে এলাকায় রিকশা চালাতে থাকেন জিল্লুর রহমান। আর আইয়ুব আলীও রাজমিস্ত্রির কাজ করতে থাকেন সাধারণের মতো। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল, স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে পথরোধ করে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা স্বর্ণের বার ছিনতাই করে রাতারাতি বড় লোক হয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কারা জড়িয়ে থাকতে পারে, তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমান ধরের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করব। তবে তিনি এ আসামিদের গ্রেপ্তারের পেছনের রহস্য তুলে না ধরলেও তাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান।
নিউজ লাইট ৭১