ঢাকা ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাট পচাতে ব্যয় বেড়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:০৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২
  • / 23

ছবি- নিউজ লাইট ৭১

ফরিদপুরের নগরকান্দায় এবার পাটের ভালো ফলন হলেও পানি সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। একদিকে পাটগাছ বড় হওয়ার পর পানির অভাবে অনেক স্থানে পাটগাছের পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে পাট ক্ষেতের পাশের ডোবা গুলো পানি শূন্য। ফলে পাটগাছ কেটে জাগ দিতে তাদেরকে দূরের জলাশয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। পাটের উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে এসব পাট বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পাবেন কিনা তা নিয়েও আতঙ্কগ্রস্ত এই এলাকার পাট চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, পানি সঙ্কট থাকলে রিবন্ডিং রিবন রেটিং পদ্ধতিতে স্বল্প পরিসরে পাট পচানো সম্ভব। তবে বেশ কয়েক বছর এই পদ্ধতির ব্যাপারে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু কৃষকেরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে পাট কাটতে দেরি করেছেন অনেকে। এতে পাটগাছের গোড়ার আঁশ শক্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক গাছের গোড়ায় শিকড় গজিয়ে মরেও যাচ্ছে।

ফরিদপুরের ব্রান্ডিং পণ্য এই সোনালী আঁশ পাট। ‘সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’এটি এ জেলার প্রশাসনিক শ্লোগান।

দেশে পাট উৎপাদনে সেরা জেলার নগরকান্দা উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও কম বেশি প্রচুর পরিমাণ পাট উৎপাদিত হয়।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার ১ শো হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সরেজমিনে নগরকান্দা উপজেলা পরিদর্শনকরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে মাঠের পর মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট।

স্থায়ীয় কৃষকেরা জানান, এবছর জমিতে পাটের বীজ বপনের পরপরই কয়েক দফায় প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়েছিলো। এতে পাটচাষের শুরুর দিকে কৃষককে সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়নি। তবে শেষের দিকে এসে বৃষ্টি কমে গেছে। এতে পাটচাষে ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের শাকরাইল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেতের পাটগাছের উপরের দিকে পাতা মরে গেছে। জমির মাটি শুকিয়ে গেছে।

উপজেলার শাকরাইল গ্রামের পাটচাষী ইসরাইল মাতুব্বর জানান, এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খালে-বিলে পানি নেই। প্রচন্ড রোদে পাটগাছ পরিপক্ক হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাট কেটে কোথায় জাগ দিবো। অনেক চাষি পাট কেটে মাথায় করে নিয়ে যেয়ে দূরবর্তী জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

একই এলাকার সিরাজ মাতুব্বর নামে আরেকজন কৃষক বলেন, একার পক্ষেতো এতো পাট কেটে দূরের খালে নেয়া সম্ভব না। এজন্য অতিরিক্ত লোক লাগবে। অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে পাট কেটে জলাশয়ে নিতে অতিরিক্ত খরচ হবে। এক বিঘা জমির পাট কেটে খালে নিতে হলে অতিরিক্ত ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা খরচ হবে। কিন্তু পাটের দাম কি বাড়বে তাতে?

তাদের অভিযোগ, অনেক স্থানে সুইস গেট আটকে রাখার জন্য খালে পানি আসেনা। এতে তারা পাট জাগ দেয়ার পানি পাননা সময় মতো।

পাটগাছ ভালোভাবে জাগ দিতে না পারলে আঁশের মান ভালো হয় না। গত বছর মৌসুমের শুরুর দিকে পাটের মন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছালেও পরে দরপতন হয়। দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় এক মণ পাট বিক্রি হয়। এবার পাট জাগে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষককে পাট আবাদে অন্যান্য খাতেও বেশি খরচ করতে হয়েছে বলে কৃষকেরা জানালেন।

কৃষকের দাবি, চার হাজার টাকায় এক মণ পাট বিক্রি করতে পারলে তাদের ভালো লাভ হবে।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলক কুমার ঘোষ বলেন, এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় নগরকান্দা উপজেলায় পাটের আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।

অবশ্য মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় পাট জাগ দিতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে পাটচাষীদের ‘রিবনিং’ ও ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেই। তবে তারা এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নন।

তিনি আরও বলেন, এখনও অনেকে বৃষ্টির জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করছেন পাট কেটে জাগ দেয়ার জন্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে অনেক স্থানে পাট শুকিয়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪০ হেক্টর। এতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৫ শো মেট্রিকটন ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউজ লাইট ৭১

 

facebook sharing button
twitter sharing button
messenger sharing button
Tag :

শেয়ার করুন

পাট পচাতে ব্যয় বেড়েছে

আপডেট টাইম : ০৪:০৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২

ফরিদপুরের নগরকান্দায় এবার পাটের ভালো ফলন হলেও পানি সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। একদিকে পাটগাছ বড় হওয়ার পর পানির অভাবে অনেক স্থানে পাটগাছের পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে পাট ক্ষেতের পাশের ডোবা গুলো পানি শূন্য। ফলে পাটগাছ কেটে জাগ দিতে তাদেরকে দূরের জলাশয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। পাটের উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে এসব পাট বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পাবেন কিনা তা নিয়েও আতঙ্কগ্রস্ত এই এলাকার পাট চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, পানি সঙ্কট থাকলে রিবন্ডিং রিবন রেটিং পদ্ধতিতে স্বল্প পরিসরে পাট পচানো সম্ভব। তবে বেশ কয়েক বছর এই পদ্ধতির ব্যাপারে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু কৃষকেরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে পাট কাটতে দেরি করেছেন অনেকে। এতে পাটগাছের গোড়ার আঁশ শক্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক গাছের গোড়ায় শিকড় গজিয়ে মরেও যাচ্ছে।

ফরিদপুরের ব্রান্ডিং পণ্য এই সোনালী আঁশ পাট। ‘সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’এটি এ জেলার প্রশাসনিক শ্লোগান।

দেশে পাট উৎপাদনে সেরা জেলার নগরকান্দা উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও কম বেশি প্রচুর পরিমাণ পাট উৎপাদিত হয়।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার ১ শো হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সরেজমিনে নগরকান্দা উপজেলা পরিদর্শনকরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে মাঠের পর মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট।

স্থায়ীয় কৃষকেরা জানান, এবছর জমিতে পাটের বীজ বপনের পরপরই কয়েক দফায় প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়েছিলো। এতে পাটচাষের শুরুর দিকে কৃষককে সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়নি। তবে শেষের দিকে এসে বৃষ্টি কমে গেছে। এতে পাটচাষে ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের শাকরাইল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেতের পাটগাছের উপরের দিকে পাতা মরে গেছে। জমির মাটি শুকিয়ে গেছে।

উপজেলার শাকরাইল গ্রামের পাটচাষী ইসরাইল মাতুব্বর জানান, এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খালে-বিলে পানি নেই। প্রচন্ড রোদে পাটগাছ পরিপক্ক হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাট কেটে কোথায় জাগ দিবো। অনেক চাষি পাট কেটে মাথায় করে নিয়ে যেয়ে দূরবর্তী জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

একই এলাকার সিরাজ মাতুব্বর নামে আরেকজন কৃষক বলেন, একার পক্ষেতো এতো পাট কেটে দূরের খালে নেয়া সম্ভব না। এজন্য অতিরিক্ত লোক লাগবে। অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে পাট কেটে জলাশয়ে নিতে অতিরিক্ত খরচ হবে। এক বিঘা জমির পাট কেটে খালে নিতে হলে অতিরিক্ত ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা খরচ হবে। কিন্তু পাটের দাম কি বাড়বে তাতে?

তাদের অভিযোগ, অনেক স্থানে সুইস গেট আটকে রাখার জন্য খালে পানি আসেনা। এতে তারা পাট জাগ দেয়ার পানি পাননা সময় মতো।

পাটগাছ ভালোভাবে জাগ দিতে না পারলে আঁশের মান ভালো হয় না। গত বছর মৌসুমের শুরুর দিকে পাটের মন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছালেও পরে দরপতন হয়। দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় এক মণ পাট বিক্রি হয়। এবার পাট জাগে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষককে পাট আবাদে অন্যান্য খাতেও বেশি খরচ করতে হয়েছে বলে কৃষকেরা জানালেন।

কৃষকের দাবি, চার হাজার টাকায় এক মণ পাট বিক্রি করতে পারলে তাদের ভালো লাভ হবে।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলক কুমার ঘোষ বলেন, এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় নগরকান্দা উপজেলায় পাটের আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।

অবশ্য মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় পাট জাগ দিতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে পাটচাষীদের ‘রিবনিং’ ও ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেই। তবে তারা এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নন।

তিনি আরও বলেন, এখনও অনেকে বৃষ্টির জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করছেন পাট কেটে জাগ দেয়ার জন্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে অনেক স্থানে পাট শুকিয়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪০ হেক্টর। এতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৫ শো মেট্রিকটন ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউজ লাইট ৭১

 

facebook sharing button
twitter sharing button
messenger sharing button