ঢাকা ০২:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনন্য উদ্যোগ শিক্ষকের

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩১:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
  • / 34

বন্যার পানিতে টইটম্বুর চারাপাশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। কোথাও খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। ফলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে চার দেয়ালের মাঝে অনেকটা বন্দি সময় কাটাচ্ছিলো শিশুরা। এতে সবচেয়ে বেশি তাদের ক্ষতি হচ্ছে পড়ালেখার। এই অবস্থায় শিশুদের মনের ওপর যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেজন্য এসব শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস।

তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা সেসব কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করছেন। শুধু তাই নয়, বিনামূল্যে তাদের বই, খাতা, কলমও কিনে দিয়েছেন। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাসের এমন উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা শিশুদের পাশপাশি তাদের অভিভাবকরাও খুশি।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বড়লেখা উপজেলায় ২০০ গ্রাম প্লবিত হয়। এতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে মানুষজন পরিবার নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। এরমধ্যে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৪ পরিবার আশ্রয় নেয়। এসব পরিবারের কোমলমতি শিশুরা আছে। বর্তমানে তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। কারণ বন্যায় তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হওয়ায় তা বন্ধ রয়েছে।

এতে তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। ফলে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। চারিদিকে বন্যার পানি থাকায় কোথাও খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। তাই আশ্রয় কেন্দ্রে শিশুরা বন্দি সময় কাটাচ্ছিলো। এই অবস্থায় শিশুদের মনের যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেজন্য এসব শিশুদের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। তিনি তাদের পাঠদানের উদ্যোগ নেন। গত ২২ জুন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দুটি শিফটে চলে পাঠদান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালেয়র একটি শ্রেণি কক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরমধ্যে দুজন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আর বাকি ৭ জন দাসেরবাজার ও ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসময় তাদের ইংরেজি বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। এর আগে তাদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাসিম আলী।

শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বাড়ি ঘরে বন্যার পানি উঠায় পরিবারের সাথে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। বিদ্যালয়ে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস তাদের বই, খাতা, কলম কিনে দিয়েছেন। এখানে তাদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। এতে তারা খুশি।

অভিভাবক শামীম আহমদ ও আবুল হোসেন বলেন, কবে বন্যার পানি নামবে। কবে স্কুল খুলবে। স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। এসব নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস ও মো. হাসেম আলী তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন। বই-খাতা কিনে দিয়েছেন। এতে তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে। এজন্য তারা শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ৫৪ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের ছোট শিশু আছে। বন্যায় বাড়িঘর ছেড়ে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে। বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। শিশুরা সারাদিন আশ্রয় কেন্দ্রে বন্দি সময় কাটাচ্ছিলো। এভাবে দীর্ঘদিন থাকলে এসব শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে পারে। অনেকে ঝরে পড়তে পারে। আমিও সারাদিন বিদ্যালয়ে থাকি। তাই শিশুদের পাঠদানের উদ্যোগ নিই। বই-খাতা কিনে দিয়েছি। আমি আর আমার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাসেম আলী মিলে তাদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াচ্ছি। এতে শিশুরাও খুশি। তাদের পরিবারও খুশি।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

অনন্য উদ্যোগ শিক্ষকের

আপডেট টাইম : ০৫:৩১:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২

বন্যার পানিতে টইটম্বুর চারাপাশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। কোথাও খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। ফলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে চার দেয়ালের মাঝে অনেকটা বন্দি সময় কাটাচ্ছিলো শিশুরা। এতে সবচেয়ে বেশি তাদের ক্ষতি হচ্ছে পড়ালেখার। এই অবস্থায় শিশুদের মনের ওপর যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেজন্য এসব শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস।

তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা সেসব কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করছেন। শুধু তাই নয়, বিনামূল্যে তাদের বই, খাতা, কলমও কিনে দিয়েছেন। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাসের এমন উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা শিশুদের পাশপাশি তাদের অভিভাবকরাও খুশি।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বড়লেখা উপজেলায় ২০০ গ্রাম প্লবিত হয়। এতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে মানুষজন পরিবার নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। এরমধ্যে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৪ পরিবার আশ্রয় নেয়। এসব পরিবারের কোমলমতি শিশুরা আছে। বর্তমানে তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। কারণ বন্যায় তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হওয়ায় তা বন্ধ রয়েছে।

এতে তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। ফলে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। চারিদিকে বন্যার পানি থাকায় কোথাও খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। তাই আশ্রয় কেন্দ্রে শিশুরা বন্দি সময় কাটাচ্ছিলো। এই অবস্থায় শিশুদের মনের যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেজন্য এসব শিশুদের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। তিনি তাদের পাঠদানের উদ্যোগ নেন। গত ২২ জুন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দুটি শিফটে চলে পাঠদান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালেয়র একটি শ্রেণি কক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরমধ্যে দুজন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আর বাকি ৭ জন দাসেরবাজার ও ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসময় তাদের ইংরেজি বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। এর আগে তাদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাসিম আলী।

শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বাড়ি ঘরে বন্যার পানি উঠায় পরিবারের সাথে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। বিদ্যালয়ে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস তাদের বই, খাতা, কলম কিনে দিয়েছেন। এখানে তাদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। এতে তারা খুশি।

অভিভাবক শামীম আহমদ ও আবুল হোসেন বলেন, কবে বন্যার পানি নামবে। কবে স্কুল খুলবে। স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। এসব নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস ও মো. হাসেম আলী তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন। বই-খাতা কিনে দিয়েছেন। এতে তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে। এজন্য তারা শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ৫৪ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের ছোট শিশু আছে। বন্যায় বাড়িঘর ছেড়ে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে। বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। শিশুরা সারাদিন আশ্রয় কেন্দ্রে বন্দি সময় কাটাচ্ছিলো। এভাবে দীর্ঘদিন থাকলে এসব শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে পারে। অনেকে ঝরে পড়তে পারে। আমিও সারাদিন বিদ্যালয়ে থাকি। তাই শিশুদের পাঠদানের উদ্যোগ নিই। বই-খাতা কিনে দিয়েছি। আমি আর আমার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাসেম আলী মিলে তাদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াচ্ছি। এতে শিশুরাও খুশি। তাদের পরিবারও খুশি।

নিউজ লাইট ৭১