ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
  • / 31

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলার পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। পানি ঢুকে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, সরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

গত কয়েকদিনের ন্যায় বুধবার (১৫ জুন) ভোর থেকেও সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপৎসীমার ১১৪ ও ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই পয়েন্টে সুরমার পানি দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমলসীদ, শেওলা ও শেরপুরেও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। সারিঘাটে সারি নদীর পানি ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লোভা ও ধলাই নদীর পানিও বেড়ে চলছে।

এ ছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানির স্রোত প্রবাহিত হয়েছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ৯ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১১ সেন্টিমিটার ওপরে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে। গতকাল বিকেলে তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। এখনো তা অব্যাহত আছে। এমনটা থাকলে পুনরায় বন্যার আশঙ্কা আছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ফের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় এসব ইউনিয়নের ১৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ৬টি ইউনিয়নেরই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। উপজেলার একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। সদরের অধিকাংশ দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষজনের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।

এদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ উপজেলার ২৬৪টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ২০০টি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে।

এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর, জালালাবাদ, টুকেরবাজার ইউনিয়নসহ নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। খাদিমনগর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, আলীনগর, ছয়দাগ ও সাতগাছিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এদিকে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যহত হচ্ছে। ছড়া ও খালের চেয়ে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উল্টো সুরমার পানি শহরে প্রবেশ করা শুরু করেছে। ফলে নগরের নিচুঁ এলাকা সোবহানীঘাট, কালিঘাট, ঘাসিটুলা, উপশহর ও ছড়ারপাড়সহ বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে মানুষের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে গত ১৪ মে থেকে সিলেট নগরসহ ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানায়।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

সিলেটে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলার পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। পানি ঢুকে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, সরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

গত কয়েকদিনের ন্যায় বুধবার (১৫ জুন) ভোর থেকেও সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপৎসীমার ১১৪ ও ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই পয়েন্টে সুরমার পানি দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমলসীদ, শেওলা ও শেরপুরেও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। সারিঘাটে সারি নদীর পানি ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লোভা ও ধলাই নদীর পানিও বেড়ে চলছে।

এ ছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানির স্রোত প্রবাহিত হয়েছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ৯ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১১ সেন্টিমিটার ওপরে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে। গতকাল বিকেলে তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। এখনো তা অব্যাহত আছে। এমনটা থাকলে পুনরায় বন্যার আশঙ্কা আছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ফের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় এসব ইউনিয়নের ১৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ৬টি ইউনিয়নেরই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। উপজেলার একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। সদরের অধিকাংশ দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষজনের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।

এদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ উপজেলার ২৬৪টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ২০০টি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে।

এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর, জালালাবাদ, টুকেরবাজার ইউনিয়নসহ নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। খাদিমনগর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, আলীনগর, ছয়দাগ ও সাতগাছিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এদিকে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যহত হচ্ছে। ছড়া ও খালের চেয়ে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উল্টো সুরমার পানি শহরে প্রবেশ করা শুরু করেছে। ফলে নগরের নিচুঁ এলাকা সোবহানীঘাট, কালিঘাট, ঘাসিটুলা, উপশহর ও ছড়ারপাড়সহ বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে মানুষের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে গত ১৪ মে থেকে সিলেট নগরসহ ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানায়।

নিউজ লাইট ৭১