ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমারকে বলেছি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা তাদেরকে করতে হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 100

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমারকে বলেছি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা তাদেরকে করতে হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, তারা যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায়। সেজন্য আমাদের আরো কিছু সহযোগিতা চেয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি এভিয়েশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি মিয়ানমার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেনাপ্রধান বলেন, মিয়ানমারে তিন দিনের সফর শেষে বুধবার দেশে ফিরেছি। আমার এই সফর পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। সাধারণত আপনারা জানেন, এই ধরনের বাহিনী প্রধানরা যখন অন্য কোন রাষ্ট্রে যান তার জন্য ৭/৮ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি চলে।সব ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়ে থাকে। আপনারা অনেক মিডিয়ায় দেখেছেন যে এটার সঙ্গে আইসিজে গত ১০, ১১ ও আজকে (১২নভেম্বর) যে শুনানি হচ্ছে তার সঙ্গে এই ভিজিটের কোন সম্পর্ক নেই। এই ভিজিট ৭/৮ মাস আগেই নির্ধারিত করা হয়েছিলো। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র লেভেল থেকে শুরু করে অন্যান্য পদবীর যারা আছেন তারা এ ধরনের গুডউইল ভিজিটে যান এবং সেটা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে।

নিজেদের মধ্যে ট্রাস্ট এন্ড কনফিডেন্স এবং ট্রেনিং এক্সচেঞ্জের এর অংশ হিসেবে যাতে এর ক্ষেত্র তৈরি করা যায় সেজন্য ভিজিট করে থাকে। তাছাড়াও প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এ ধরনের ভিজিট অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। সেখানে আমার ভিজিটে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারি, আমাদের এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে পারি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাঝে মাঝে কিছু কিছু ইনসিডেন্ট হয়েছে।

যেমন-সেখানে আমরা স্থল মাইনের কিছু উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। আইএডির উপস্থিতি পেয়েছি। এসব বিষয়ে আমাদের কনসার্ন মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধানকে জানানো হয়েছে যেন এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের স্থল মাইন সীমান্ত এলাকাতে স্থাপন করা বিশেষ করে পিস টাইমে কোনভাবেই কাম্য নয়। বিভিন্ন সময় তাদের হেলিকপ্টার এমনকি কখনও কখনও তাদের ড্রোন আকাশসীমা লংঘন করেছে। আমরা সেটা তাদেরকে জানিয়েছি এবং আমাদের উদ্বেগের কথা এবং এটা যে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় সেটা তাদেরকে বলে এসেছি। সেনাপ্রধান বলেন, তারা আশ্বস্থ করেছে। এ ধরনের ঘটনা যদি হয়ে থাকে তাহলে আনইনটেনশনালি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেজন্য গ্রাসরুট লেভেল পর্যন্ত তারা নির্দেশনা দেবে। ড্রোনের বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে। তাছাড়া মাঝে মাঝে বিভিন্ন মিডিয়াতে আসে যে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান আমাকে নিশ্চিত করে বলেছেন যে, তারা আমাদের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের যে অপারেশন হচ্ছে সেটা প্রতিনিয়তই চলছে। সেই অপারেশনের প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনী নিয়ে আসে। এবং এই সেনাবাহিনী পরিবর্তন করে থাকে। এর সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কে কোন ধরনের ভূল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই এবং যাতে না হয় সে বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করেছে। তারা এটাও বলেছে কোন ক্ষেত্রে যদি কোন ধরনের সন্দেহের অবকাশ হয় আমরা যেনো তাদেরকে জিজ্ঞেস করি তাহলে তারা সেটার ব্যাখা দেবে। তারপরও আমরা তাদেরকে জানিয়েছি, তারা যদি আমাদেরকে অপারেশনের বিষয়টি  ও উপস্থিতির বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়ে রাখে তাহলে কোন ধরনের ভূল বোঝাবুঝি হবে না। তারা আমাদের আরও রিকোয়েস্ট করেছে একই রিকোয়েস্ট তারা ভারতকেও করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। যেহেতেু তারা সীমান্তে ইনসার্জিকাল অপারেশনাল কাজ পরিচালনা করছে সেহেতু আমাদের বর্ডারের কাছাকাছি অপারেশন পরিচালনা করলে আমরা যেনো তাদের সহযোগিতা করি। যাতে কোন দুস্কৃতকারি তাদের তাড়া খেয়ে বর্ডার ক্রস করে এদিকে না আসতে পারে।

এ ধরনের সহযোগিতা আমরা ইতিপূর্বেও দিয়েছি। আমরা বলেছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা যে, আমাদের ভূমি আমরা কোন মিসক্রিয়েট, ইনসার্জেন বা কাউকে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবো না। আমরা সেটা তাদের আশ্বস্থ করেছি-আমাদের জাতীয় যে পলিসি আছে,আমাদের সরকারের যে নির্দেশনা আছে সেই অনুযায়ি এ ধরনের কোন ইনসার্জেন গ্রুপ এদিকে এসে তৎপরতা চালাবে সে সুযোগ নেই। আমরা সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।

সেনাপ্রধান বলেন, ইতিপূর্বে আমরা বেশ কিছু অপারেশন তাদের প্রয়োজনে নিয়েছিলাম যার জন্য তারা আমাদেরকে ধন্যবাদ দিয়েছে এ ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য। তাদের সৈনিকরা মাঝে মধ্যে বর্ডার ক্রস করে চলে এসেছে আমরা তাদেরকে ফেরত দিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের কনসার্ন তাদেরকে জানিয়েছি। সেনাপ্রধান বলেন, এছাড়া মূল আরেকটি বিষয় ছিলো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমস্যার সৃষ্টি করছে সেগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এখানে যে সিকিউরিটি কনসার্ন কি কি হতে পারে। যেমন তারা এখন ড্রাগ স্মাগলিংয়ে ইনভলব হচ্ছে। আর যেখানে ড্রাগ স্মাগলিং থাকে সেখানে অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। সেখানে হিউম্যান ট্রাফিকিং হবে। এটা আস্তে আস্তে কোনদিকে যেতে পারে, সিকিউরিটি কনসার্ন হতে পারে সেগুলো তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদেরকে বলা হয়েছে-এই সমস্যাটা মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে এটা তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। অর্থ্যাৎ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা তাদের করতে হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন তারা যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায়। সেজন্য আমাদের আরও কিছু সহযোগিতা চেয়েছে। কি কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য অতীতে নেয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে সে কারণগুলো আমি তুলে ধরেছি।

তাদেরকে বলেছি-এই কারণগুলো যদি এড্রেস করা না হয় যতই চেষ্টা করা হোক এখান থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া আলোচনার মধ্যেই থাকবে বাস্তবে রুপ নেবে না। তারই ধারাবাহিকতায় তারা আমাকে বলেছে তারা শিগগিরই আমাদের ফরেন মিনিস্টার, আসিয়ান গ্রুপের হিউম্যানিটি ইমার্জেন্সির রেসপন্স টিম এর প্রতিনিধিদের তারা সেখানে ভিজিটের জন্য আহ্বান জানাবে। আমি বলেছি তাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখতে হবে। তোমরা কি ব্যবস্থা করেছো তা যেন তারা স্বচক্ষে দেখতে পারে। তারা এসে যেনো আমাদের বলতে পারে এই এই আ্যারেন্‌জমেন্ট করা হয়েছে। তোমাদের স্যাটিসফাই আমাদেরকে না তোমাদের নাগরিক যারা তাদেরকে স্যাটিসফাই করতে হবে যে, তোমরা যদি ফেরত আসো তাহলে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এই আবাসস্থল, এই্‌ এই ব্যবস্থা আমরা করেছি। তারা স্যাটিসফাই হলেই কেবলমাত্র তারা যাবে। আমি বিষয়গুলো বললাম কারণ বিভিন্ন লেখা, অনেক ধরনের লেখা আসে।

এটা ছিলো সম্পুর্ণভাবে একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়। তার সাথে সাথে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় যেসব ব্‌িষয়গুলো আসে আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সেনাবাহিনী পিসটাইমে যেমন দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়গুলো দেখে থাকে সেটা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং যুদ্ধকালীন সময়ে দেশকে শত্রুমুক্ত বা যে কোন বহিরাঙ্গন আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকি। এসব ব্যাপারে সব সময় সচেতন ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি দুই বাহিনীর সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। সেটার আলোকে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সানুগ্রহে আজকে চারটি বিশেষ বিমান পেলাম। এর মধ্য দিয়ে ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে অত্যন্ত সহায়ক ভ্থমিকা পালন করবে।

আমাদের পরিকল্পনা আছে আরও একটি কাসা ক্রয়ের। এছাড়া আমাদের যেভাবে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে চাহিদা মেটানোর জন্য আরও ৬টি হেলিকপ্টার যেনো আমরা কিনতে পারি সেজন্য সরকারের নিকট আমাদের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। তাছাড়াও ভবিষ্যতে আমাদের এই ফ্লিটের জন্য ১১টি হেলিকপ্টার নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার আকাশ বলা চলে ক্রমান্বয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই আকাশ কমার্শিয়াল এয়ারলাইনসগুলো ব্যবহার করে। এই আকাশ সিভিল এভিয়েশনের এয়ারক্রাফটগুলো ব্যবহার করে। পাশাপাশি আমাদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপও ব্যবহার করে। সামগ্রিক বিবেচনায় সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের ট্রেনিং স্কুল লালমনিরহাটে করবো।

এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। যখন এটা কমপ্লিট হবে তখন ট্রেনিং স্কুলটি চলে যাবে লালমনিরহাট। কারণ আমাদের প্রশিক্ষণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এবং প্রশিক্ষণের জন্য ডেডিকেটেড স্থানেরও প্রয়োজন আছে। সেখানে অনেক ফ্রি এয়ার স্পেস পাওয়া যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এভিয়েশন গ্রুপের স্কুল স্থানান্তর ও প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিমান বহরে নতুনভাবে ৪ টি ডায়মন্ড ডিএ৪০এনজি প্রশিক্ষণ বিমান সংযোজিত হয়েছে। আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।

Tag :

শেয়ার করুন

জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমারকে বলেছি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা তাদেরকে করতে হবে।

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, মিয়ানমারকে বলেছি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা তাদেরকে করতে হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, তারা যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায়। সেজন্য আমাদের আরো কিছু সহযোগিতা চেয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি এভিয়েশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি মিয়ানমার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেনাপ্রধান বলেন, মিয়ানমারে তিন দিনের সফর শেষে বুধবার দেশে ফিরেছি। আমার এই সফর পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। সাধারণত আপনারা জানেন, এই ধরনের বাহিনী প্রধানরা যখন অন্য কোন রাষ্ট্রে যান তার জন্য ৭/৮ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি চলে।সব ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়ে থাকে। আপনারা অনেক মিডিয়ায় দেখেছেন যে এটার সঙ্গে আইসিজে গত ১০, ১১ ও আজকে (১২নভেম্বর) যে শুনানি হচ্ছে তার সঙ্গে এই ভিজিটের কোন সম্পর্ক নেই। এই ভিজিট ৭/৮ মাস আগেই নির্ধারিত করা হয়েছিলো। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র লেভেল থেকে শুরু করে অন্যান্য পদবীর যারা আছেন তারা এ ধরনের গুডউইল ভিজিটে যান এবং সেটা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে।

নিজেদের মধ্যে ট্রাস্ট এন্ড কনফিডেন্স এবং ট্রেনিং এক্সচেঞ্জের এর অংশ হিসেবে যাতে এর ক্ষেত্র তৈরি করা যায় সেজন্য ভিজিট করে থাকে। তাছাড়াও প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এ ধরনের ভিজিট অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। সেখানে আমার ভিজিটে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারি, আমাদের এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে পারি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাঝে মাঝে কিছু কিছু ইনসিডেন্ট হয়েছে।

যেমন-সেখানে আমরা স্থল মাইনের কিছু উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। আইএডির উপস্থিতি পেয়েছি। এসব বিষয়ে আমাদের কনসার্ন মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধানকে জানানো হয়েছে যেন এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের স্থল মাইন সীমান্ত এলাকাতে স্থাপন করা বিশেষ করে পিস টাইমে কোনভাবেই কাম্য নয়। বিভিন্ন সময় তাদের হেলিকপ্টার এমনকি কখনও কখনও তাদের ড্রোন আকাশসীমা লংঘন করেছে। আমরা সেটা তাদেরকে জানিয়েছি এবং আমাদের উদ্বেগের কথা এবং এটা যে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় সেটা তাদেরকে বলে এসেছি। সেনাপ্রধান বলেন, তারা আশ্বস্থ করেছে। এ ধরনের ঘটনা যদি হয়ে থাকে তাহলে আনইনটেনশনালি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেজন্য গ্রাসরুট লেভেল পর্যন্ত তারা নির্দেশনা দেবে। ড্রোনের বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে। তাছাড়া মাঝে মাঝে বিভিন্ন মিডিয়াতে আসে যে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান আমাকে নিশ্চিত করে বলেছেন যে, তারা আমাদের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের যে অপারেশন হচ্ছে সেটা প্রতিনিয়তই চলছে। সেই অপারেশনের প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনী নিয়ে আসে। এবং এই সেনাবাহিনী পরিবর্তন করে থাকে। এর সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কে কোন ধরনের ভূল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই এবং যাতে না হয় সে বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করেছে। তারা এটাও বলেছে কোন ক্ষেত্রে যদি কোন ধরনের সন্দেহের অবকাশ হয় আমরা যেনো তাদেরকে জিজ্ঞেস করি তাহলে তারা সেটার ব্যাখা দেবে। তারপরও আমরা তাদেরকে জানিয়েছি, তারা যদি আমাদেরকে অপারেশনের বিষয়টি  ও উপস্থিতির বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়ে রাখে তাহলে কোন ধরনের ভূল বোঝাবুঝি হবে না। তারা আমাদের আরও রিকোয়েস্ট করেছে একই রিকোয়েস্ট তারা ভারতকেও করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। যেহেতেু তারা সীমান্তে ইনসার্জিকাল অপারেশনাল কাজ পরিচালনা করছে সেহেতু আমাদের বর্ডারের কাছাকাছি অপারেশন পরিচালনা করলে আমরা যেনো তাদের সহযোগিতা করি। যাতে কোন দুস্কৃতকারি তাদের তাড়া খেয়ে বর্ডার ক্রস করে এদিকে না আসতে পারে।

এ ধরনের সহযোগিতা আমরা ইতিপূর্বেও দিয়েছি। আমরা বলেছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা যে, আমাদের ভূমি আমরা কোন মিসক্রিয়েট, ইনসার্জেন বা কাউকে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবো না। আমরা সেটা তাদের আশ্বস্থ করেছি-আমাদের জাতীয় যে পলিসি আছে,আমাদের সরকারের যে নির্দেশনা আছে সেই অনুযায়ি এ ধরনের কোন ইনসার্জেন গ্রুপ এদিকে এসে তৎপরতা চালাবে সে সুযোগ নেই। আমরা সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।

সেনাপ্রধান বলেন, ইতিপূর্বে আমরা বেশ কিছু অপারেশন তাদের প্রয়োজনে নিয়েছিলাম যার জন্য তারা আমাদেরকে ধন্যবাদ দিয়েছে এ ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য। তাদের সৈনিকরা মাঝে মধ্যে বর্ডার ক্রস করে চলে এসেছে আমরা তাদেরকে ফেরত দিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের কনসার্ন তাদেরকে জানিয়েছি। সেনাপ্রধান বলেন, এছাড়া মূল আরেকটি বিষয় ছিলো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমস্যার সৃষ্টি করছে সেগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এখানে যে সিকিউরিটি কনসার্ন কি কি হতে পারে। যেমন তারা এখন ড্রাগ স্মাগলিংয়ে ইনভলব হচ্ছে। আর যেখানে ড্রাগ স্মাগলিং থাকে সেখানে অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। সেখানে হিউম্যান ট্রাফিকিং হবে। এটা আস্তে আস্তে কোনদিকে যেতে পারে, সিকিউরিটি কনসার্ন হতে পারে সেগুলো তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদেরকে বলা হয়েছে-এই সমস্যাটা মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে এটা তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। অর্থ্যাৎ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা তাদের করতে হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন তারা যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায়। সেজন্য আমাদের আরও কিছু সহযোগিতা চেয়েছে। কি কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য অতীতে নেয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে সে কারণগুলো আমি তুলে ধরেছি।

তাদেরকে বলেছি-এই কারণগুলো যদি এড্রেস করা না হয় যতই চেষ্টা করা হোক এখান থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া আলোচনার মধ্যেই থাকবে বাস্তবে রুপ নেবে না। তারই ধারাবাহিকতায় তারা আমাকে বলেছে তারা শিগগিরই আমাদের ফরেন মিনিস্টার, আসিয়ান গ্রুপের হিউম্যানিটি ইমার্জেন্সির রেসপন্স টিম এর প্রতিনিধিদের তারা সেখানে ভিজিটের জন্য আহ্বান জানাবে। আমি বলেছি তাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখতে হবে। তোমরা কি ব্যবস্থা করেছো তা যেন তারা স্বচক্ষে দেখতে পারে। তারা এসে যেনো আমাদের বলতে পারে এই এই আ্যারেন্‌জমেন্ট করা হয়েছে। তোমাদের স্যাটিসফাই আমাদেরকে না তোমাদের নাগরিক যারা তাদেরকে স্যাটিসফাই করতে হবে যে, তোমরা যদি ফেরত আসো তাহলে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এই আবাসস্থল, এই্‌ এই ব্যবস্থা আমরা করেছি। তারা স্যাটিসফাই হলেই কেবলমাত্র তারা যাবে। আমি বিষয়গুলো বললাম কারণ বিভিন্ন লেখা, অনেক ধরনের লেখা আসে।

এটা ছিলো সম্পুর্ণভাবে একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়। তার সাথে সাথে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় যেসব ব্‌িষয়গুলো আসে আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সেনাবাহিনী পিসটাইমে যেমন দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়গুলো দেখে থাকে সেটা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং যুদ্ধকালীন সময়ে দেশকে শত্রুমুক্ত বা যে কোন বহিরাঙ্গন আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকি। এসব ব্যাপারে সব সময় সচেতন ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি দুই বাহিনীর সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। সেটার আলোকে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সানুগ্রহে আজকে চারটি বিশেষ বিমান পেলাম। এর মধ্য দিয়ে ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে অত্যন্ত সহায়ক ভ্থমিকা পালন করবে।

আমাদের পরিকল্পনা আছে আরও একটি কাসা ক্রয়ের। এছাড়া আমাদের যেভাবে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে চাহিদা মেটানোর জন্য আরও ৬টি হেলিকপ্টার যেনো আমরা কিনতে পারি সেজন্য সরকারের নিকট আমাদের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। তাছাড়াও ভবিষ্যতে আমাদের এই ফ্লিটের জন্য ১১টি হেলিকপ্টার নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার আকাশ বলা চলে ক্রমান্বয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই আকাশ কমার্শিয়াল এয়ারলাইনসগুলো ব্যবহার করে। এই আকাশ সিভিল এভিয়েশনের এয়ারক্রাফটগুলো ব্যবহার করে। পাশাপাশি আমাদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপও ব্যবহার করে। সামগ্রিক বিবেচনায় সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের ট্রেনিং স্কুল লালমনিরহাটে করবো।

এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। যখন এটা কমপ্লিট হবে তখন ট্রেনিং স্কুলটি চলে যাবে লালমনিরহাট। কারণ আমাদের প্রশিক্ষণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এবং প্রশিক্ষণের জন্য ডেডিকেটেড স্থানেরও প্রয়োজন আছে। সেখানে অনেক ফ্রি এয়ার স্পেস পাওয়া যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এভিয়েশন গ্রুপের স্কুল স্থানান্তর ও প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিমান বহরে নতুনভাবে ৪ টি ডায়মন্ড ডিএ৪০এনজি প্রশিক্ষণ বিমান সংযোজিত হয়েছে। আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।