ঐতিহ্য বহন করে চলেছে নৌযান
- আপডেট টাইম : ০৬:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
- / 33
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যাতায়াত ব্যবস্থা এখনো ঐতিহ্য বহন করে চলেছে নৌযান। এক সময় নৌকা ছিল প্রধান যোগাযোগের অন্যতম বাহন। বর্তমানে শুধু বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চল বন্যাপ্রবণ এলাকায় মানুষের পারাপারের একমাত্র বাহন নৌকা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নৌকা তৈরি ও বিক্রয় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সূত্রধরেরা। বংশপরম্পরায় এ পেশার সঙ্গে মিশে আছে আজো।
উপজেলার চাঁপাই ইউনিয়নের সীমার পাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ সূত্রধর পরিবার বসবাস করে আসছে। এরা বংশপরম্পরায় কাঠের নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখানকার তৈরি নৌকার খ্যাতি রয়েছে দেশের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধ নৌকা ব্যবহৃত এলাকাতে। কালিয়াকৈর উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধ এলাকায় এখানকার তৈরি ছোট নৌকা, ইঞ্জিন সংযোজিত নৌকা, জেলেদের মাছ ধরার বড় নৌকা, বাইচ খেলা নৌকা কোশা, কোন্দাসহ কৃত্রিম হৃদে তাদের তৈরি বাহারি নকশাযুক্ত নৌকার সুনামের সঙ্গে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিগত দুই বছর করোনার কারণে তাদের ব্যবসা অনেকমন্দা ছিল।
মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করলেও নৌকা তৈরির কাঁচামাল ও বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকার কারণে নৌকা তৈরি করতে বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বাড়তি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে নৌকা। অন্যদিকে উপজেলার নদী, বিল ও খালের ঘাট পার এলাকাগুলোতে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে পুরাতন ছোট-বড় নৌকা ও ইঞ্জিনযুক্ত নৌকা মেরামতের কাজ। কেউ নতুন নৌকা তৈরি অথবা কেউ বা মাছধরার কাজে ব্যবহৃত নৌকার রং ও আলকাতরা দিয়ে পানিতে ব্যবহার উপযোগী করে তুলছেন।
নৌকার মালিক ও কারিগর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় শত শত নৌকা নির্মাণ হচ্ছে। সীমারপাড়া, বাঁশতলী, হাটুরিয়াচালা, ফুলবাড়িয়া, কৌচাকুরি, সিনাবহ, সুরিচালা, শ্রীফলতলী, বলিয়াদী, উল্টোপাড়া গ্রামগুলোতে নৌকা ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। এসব গ্রামে প্রায় বাড়িতে বর্ষাকালে যাতায়াতের জন্য নৌকার ব্যবহার করে। এক সময় বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় পালতোলা নৌকা চলাচল করত। বিভিন্ন হাটবাজারে মালামাল আনা নেওয়ার জন্য বড় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার হতো।
সীমারপাড় এলাকার সুব্রত সূত্রধর জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে নৌকা তৈরির কাজ করছি। আগে বছরের সব সময় নৌকা তৈরি ও বিক্রি হতো। এখন বর্ষা এলে নৌকা তৈরির কাজ বারে। প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। কড়াই, হিজল ও মেহগনি দিয়ে বেশির ভাগ নৌকা তৈরি করি। এছাড়াও মাটিয়ার তেল, আলকাতরা, তারকাটা ও গজল ইত্যাদি লাগে। প্রতিদিন চারজন লোক একটি ডিঙ্গি নৌকা তৈরি করতে পারি। একটু ছোট নৌকা তৈরি করতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয় বিক্রি হয় সাত থেকে আট হাজার টাকায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, কাঠের নৌকা তৈরি শিল্প কর্মসংস্থানের ভালো উদ্যোগ। কারিগরদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের বিভিন্ন দফতরে আলাদা আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। আগ্রহীরা যদি আবেদন করেন তাহলে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
নিউজ লাইট ৭১