আদেশ উপেক্ষা করে মাদরাসার কমিটি গঠন
- আপডেট টাইম : ০৬:২৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
- / 33
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত সুন্দরগঞ্জ থানা সদও দাখিল মাদরাসার পরিচালনা কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। বিষযটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিভাবকরা।
জানা যায়, কমিটি গঠনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মাদরাসা পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত বছরের ২ নবেম্বর কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফশীর অনুযায়ী গত বছরের ১২ ডিসেম্বও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় মৃত কয়েকজন ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত থাকায় অভিভাবক সদস্য মতিয়ার রহমান জেলা সহকারী জজ আদালতে নির্বাচনের ৩ দিন আগে অর্থ্যাৎ ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিত চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে নির্বাচনের উপর অন্তরবর্তীকালিন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন বিজ্জ আদালত। এ আদেশের কপি আদালত থেকে ১১ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার পাওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর অভিভাবক সদস্যের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপরও চলতি বছরের ৬ মার্চ বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুন্দরগঞ্জ থানা সদর দাখিল মাদরাসা পরিচালনার জন্য (গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা ২০০৯ এর সংশ্লিষ্ট প্রবিধান অনুসারে দুই বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এ কমিটিতে সভাপতি পদে মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের নাম থাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানায়, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ একাধিক নাশকতা মামলার আসামি হওয়ায় এরকম ধূর্ত ব্যক্তিকে নির্বাচন ছাড়াই গোপনে সভাপতি করা হয়েছে। কমিটি গঠনে আদালতের অন্তরবর্তীকালিন নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কিভাবে কমিটি অনুমোদন হলো তা এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তুলছে।
অভিভাবক সদস্য আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন উপজেলার ভুরারঘাট সিনিয়র মাদরাসায় চাকুরি করাকালে জাল-জালিয়াতির কারণে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। সেই জালিয়াত ব্যক্তি কিভাবে সভাপতি হলেন তা মেনে নেওয়া যায় না। একারণে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।’
আদালতে মামলা দায়েরকারী ও বিতর্কিত কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে। কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছু জানিনা।’
বিতর্কিত এ কমিটির সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অনুমোদিত কমিটির কাগজ পেয়ে জানলাম সভাপতি হয়েছি। এছাড়া আমি কিছু জানিনা।
কমিটি গঠনের বিষয়ে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, ‘মাদরাসা পরিচালনা কমিটি গঠন কল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পর নির্বাচনের সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এমতাবস্থায় ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ পেয়ে পরদিন ১২ ডিসেম্বর অভিভাবক সদস্যের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপর আর কিছুই জানিনা। কিভাবে কমিটি অনুমোদন হলো তাও বলতে পারিনা।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মু. মাহমুদ হোসেন মন্ডল বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ সদর মাদ্রাসায় কোনো প্রকার নির্বাচন হয়নি। বোর্ড থেকে কমিটি অনুমোদন পাওয়ার জন্য কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমার স্বাক্ষরে যদি কোন কাগজ দাখিল করা হয়ে থাকে তাহলে তা জাল করে করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপেজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘কমিটি গঠনের বিষয়টি আমি অবগত নই। ফাইল দেখে বলতে পারব।’
উল্লেখ্য, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন পাশ্ববর্তী ভূরারঘাট এম.ইউ. বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসায় প্রভাষক (আরবি) ইনডেক্স নং- ৩৯৮৪৭৪ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু জাল জাতিয়াতির অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত কমিটি বিভিন্নভাবে তদন্তে তার জালিয়াতির বিষয় প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রীট পিটিশন ৮৮০২/১৮ নম্বর আদেশের বলে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অধীনে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সাখাওয়াত হোসেন চাকুরিচ্যুত হন।
নিউজ লাইট ৭১