ঢাকা ০১:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:২৭:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২
  • / 30

চালের গুদাম। ছবি : নিউজ লাইট ৭১

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা এবং ওএমএস-এর ৩০ টাকা দরের চালে নিম্নমানের পচা, ছত্রাকযুক্ত, দুর্গন্ধ মাছি চাল প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভুক্তভোগীরা চাল উত্তোলনের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে উত্তোলনকারী কুমারখালীর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম (৪৫) বলেন, সরকারিভাবে যে চাল দিচ্ছে তা কোনোভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়, বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রান্না করার সময় মাছি চালের সাথে বাজারের ভালো চাল মিশিয়ে রান্না করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, পচা, ছত্রাকযুক্ত, পোকামাকড় ও দুর্গন্ধ চাল দেওয়া হচ্ছে। গরীব মানুষ আমরা। বাধ্য হয়ে এখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে কম টাকায় চাল কিনি। কিন্তু তা খাওয়া যায় না।

জানা গেছে, কুমারখালী পৌরসভার দুইটি পয়েন্টে সরকারি চাল বিক্রয় করা হয়। সোমবার সরেজমিনে উপজেলার পৌর এলাকার দুইটি ওএমএস চালের ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কুমারখালী খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত চালের মধ্যে বেশ কয়েক বস্তা পচা, ছত্রাকযুক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত মাছি চাল। ভালো চালের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ওএমএস চালের ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ডিলাররা ফুড অফিস থেকে চাল সংগ্রহ করি। মাঝে মধ্যেই দেখি ভালো চালের মধ্যে খারাপ চালের মিশ্রণ পাওয়া যায়। সব বস্তা তো আর দেখে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, খাদ্য গুদাম যা দেয়, তাই বিতরণ করি। কিন্তু জনগণ নিতে চায় না।

আরেক ডিলার মোতালেব হোসেন বলেন, ডিলাররা অসহায়, কিছু বলতে গেলে ডিলারশিপ বাতিলের ভয়ে কিছু বলতে পারি না। খাদ্য গুদাম সার্চ করলে এরকম বহু বস্তা নষ্ট মাছি চাল পাওয়া যাবে।

চাল উত্তোলন করতে আসা মালিয়াট গ্রামের আকলিমা খাতুন (৪০) বলেন, আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে এই সরকারি চাল কিনে খাই। মাঝে মধ্যেই পচা লাল চাল দেয় কিন্তু কিছু বলতে পারি না। কারণ গরীবের কথা শুনবে কে?

আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার বাটিকামারা এলাকার শাহনাজ বেগম জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন পচা চাল পায়, তখন আর মনে চায় না সরকারি চাল নিতে আসি। কিন্তু নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে আসি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এরশাদ আলী বলেন, খাদ্য গুদামের চালের অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে নিম্নমানের চাল যাতে গুদামে না আসে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবাল বলেন, চাল ডিলাররা দেখে শুনে বুঝে নিয়ে যায়। চালের মান নিয়ে কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে অভিযোগ শুনেছিলাম। চালের মান নিয়ে ডিলারদের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ডিলার প্রত্যয়ন দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আগের মতোই সব চলতে থাকলে ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ লাইট ৭১

 

Tag :

শেয়ার করুন

খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল

আপডেট টাইম : ০৫:২৭:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা এবং ওএমএস-এর ৩০ টাকা দরের চালে নিম্নমানের পচা, ছত্রাকযুক্ত, দুর্গন্ধ মাছি চাল প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভুক্তভোগীরা চাল উত্তোলনের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে উত্তোলনকারী কুমারখালীর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম (৪৫) বলেন, সরকারিভাবে যে চাল দিচ্ছে তা কোনোভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়, বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রান্না করার সময় মাছি চালের সাথে বাজারের ভালো চাল মিশিয়ে রান্না করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, পচা, ছত্রাকযুক্ত, পোকামাকড় ও দুর্গন্ধ চাল দেওয়া হচ্ছে। গরীব মানুষ আমরা। বাধ্য হয়ে এখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে কম টাকায় চাল কিনি। কিন্তু তা খাওয়া যায় না।

জানা গেছে, কুমারখালী পৌরসভার দুইটি পয়েন্টে সরকারি চাল বিক্রয় করা হয়। সোমবার সরেজমিনে উপজেলার পৌর এলাকার দুইটি ওএমএস চালের ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কুমারখালী খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত চালের মধ্যে বেশ কয়েক বস্তা পচা, ছত্রাকযুক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত মাছি চাল। ভালো চালের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ওএমএস চালের ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ডিলাররা ফুড অফিস থেকে চাল সংগ্রহ করি। মাঝে মধ্যেই দেখি ভালো চালের মধ্যে খারাপ চালের মিশ্রণ পাওয়া যায়। সব বস্তা তো আর দেখে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, খাদ্য গুদাম যা দেয়, তাই বিতরণ করি। কিন্তু জনগণ নিতে চায় না।

আরেক ডিলার মোতালেব হোসেন বলেন, ডিলাররা অসহায়, কিছু বলতে গেলে ডিলারশিপ বাতিলের ভয়ে কিছু বলতে পারি না। খাদ্য গুদাম সার্চ করলে এরকম বহু বস্তা নষ্ট মাছি চাল পাওয়া যাবে।

চাল উত্তোলন করতে আসা মালিয়াট গ্রামের আকলিমা খাতুন (৪০) বলেন, আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে এই সরকারি চাল কিনে খাই। মাঝে মধ্যেই পচা লাল চাল দেয় কিন্তু কিছু বলতে পারি না। কারণ গরীবের কথা শুনবে কে?

আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার বাটিকামারা এলাকার শাহনাজ বেগম জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন পচা চাল পায়, তখন আর মনে চায় না সরকারি চাল নিতে আসি। কিন্তু নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে আসি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এরশাদ আলী বলেন, খাদ্য গুদামের চালের অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে নিম্নমানের চাল যাতে গুদামে না আসে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবাল বলেন, চাল ডিলাররা দেখে শুনে বুঝে নিয়ে যায়। চালের মান নিয়ে কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে অভিযোগ শুনেছিলাম। চালের মান নিয়ে ডিলারদের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ডিলার প্রত্যয়ন দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আগের মতোই সব চলতে থাকলে ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ লাইট ৭১