ঢাকা ০৩:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শহীদ রফিকের স্মৃতিচিহ্ন নেই জাদুঘরে!

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 38

ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার (ছবি : নিউজ লাইট ৭১)

রাষ্ট্রভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন মরণোত্তর একুশে পদকে। তার নামে নির্মিত হয়েছে ‘ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ’ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। তবে এই স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও সেখানে নেই শহীদ রফিকের কোনো স্মৃতিচিহ্ন। তার নামে লেখা একটি মাত্র বই গ্রন্থাগারের আলমিরায় থাকলেও বাকি শহীদদের নিয়ে লেখা কোনো বই সেখানে নেই। শুধু তাই নয়, জাদুঘরে থাকা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বিরল ছবিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন দুরবস্থা দেখে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় দর্শনার্থীদের।

জানা যায়, ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পারিল গ্রামে (বর্তমানে রফিকনগর) আবদুল লতিফ মিয়া এবং বাফিজা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রফিক উদ্দিন আহম্মদ। তারা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে বড়।

১৯৪৯ সালে রফিক উপজেলার বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলনের সময় রফিক ঢাকার জগন্নাথ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল এলাকায় মিছিলে অংশ নেন রফিক। পাকিস্তান সরকার সেই মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি।

২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। তার স্মৃতি বিজড়িত পারিল গ্রামে ২০০৮ সালের ২৪ মে জেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।

সিংগাইর উপজেলার রফিকনগরে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের স্মরণে জাদুঘরের সামনে চলছে ৪ দিনব্যাপী মেলা। এতে দূর-দূরান্ত থেকে সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জাদুঘরে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের হতাশার কথা। তারা বলেন, ‘শুনেছি শহীদ রফিকের ব্যবহৃত চশমা, নকশিকাঁথা, কলম, রুমালসহ বেশকিছু জিনিস রয়েছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না এখানে। ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন কিংবা সে সময়ের স্মৃতি বিজড়িত কোনো কিছুই তো নেই। জাদুঘর গ্রন্থাগারে যে আলোকচিত্রগুলো দেখেছি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বোঝার উপায় নেই কোনটা কার ছবি। পাশাপাশি ভাষা শহীদদের ওপর লেখা ইতিহাসের বইগুলোও নেই।’

তারা আরও বলেন, ‘রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের ভেতরেও কিছু দেখতে পেলাম না। বই বলতে উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের ওপর লেখা বই এখানে অপ্রতুল। অন্যান্য ভাষা শহীদকে নিয়ে লেখা কোনো বই এখানে নেই। ফলে এখানকার নতুন প্রজন্ম বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তেমন অবগত হতে পারছে না।’

শহীদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ফরহাদ হোসেন খানও স্বীকার করলেন অব্যবস্থাপনার কথা। তিনি বলেন, ‘জাদুঘরে রফিকের কোনো স্মৃতিই নেই। আমি জেনেছি শহীদ রফিকের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র তার ছোট ভাই খোরশেদ আলমের কাছে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছি জিনিসপত্রগুলো জাদুঘরে আনার জন্য।’

গ্রন্থাগারের বই সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘এখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো বই আছে। তবে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, জেলার ইতিহাসসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বইয়ের জন্য আমি আবেদন করেছি।’

এসব বিষয়ে কথা হলে শহীদ রফিকের ভাই খোরশেদ আলম বলেন, ‘রফিকের স্মৃতিচিহ্ন বলতে যা বোঝায় তা খুব একটা নেই। একটি পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টেবিল-চেয়ার ও কাপড়ের ওপর রফিকের নিজ হাতে নকশা করা একটি টেবিল ক্লথ আছে। জাদুঘরে সংরক্ষণের অভাবে তা দেওয়া হয়নি।’

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভাষা শহীদ রফিকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র জাদুঘরে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। যদিও তার ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও দেওয়া হয়নি। পরিবার দিলে তা যথাযথ মর্যাদায় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

শহীদ রফিকের স্মৃতিচিহ্ন নেই জাদুঘরে!

আপডেট টাইম : ০৬:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

রাষ্ট্রভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন মরণোত্তর একুশে পদকে। তার নামে নির্মিত হয়েছে ‘ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ’ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। তবে এই স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও সেখানে নেই শহীদ রফিকের কোনো স্মৃতিচিহ্ন। তার নামে লেখা একটি মাত্র বই গ্রন্থাগারের আলমিরায় থাকলেও বাকি শহীদদের নিয়ে লেখা কোনো বই সেখানে নেই। শুধু তাই নয়, জাদুঘরে থাকা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বিরল ছবিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন দুরবস্থা দেখে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় দর্শনার্থীদের।

জানা যায়, ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পারিল গ্রামে (বর্তমানে রফিকনগর) আবদুল লতিফ মিয়া এবং বাফিজা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রফিক উদ্দিন আহম্মদ। তারা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে বড়।

১৯৪৯ সালে রফিক উপজেলার বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলনের সময় রফিক ঢাকার জগন্নাথ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল এলাকায় মিছিলে অংশ নেন রফিক। পাকিস্তান সরকার সেই মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি।

২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। তার স্মৃতি বিজড়িত পারিল গ্রামে ২০০৮ সালের ২৪ মে জেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।

সিংগাইর উপজেলার রফিকনগরে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের স্মরণে জাদুঘরের সামনে চলছে ৪ দিনব্যাপী মেলা। এতে দূর-দূরান্ত থেকে সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জাদুঘরে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের হতাশার কথা। তারা বলেন, ‘শুনেছি শহীদ রফিকের ব্যবহৃত চশমা, নকশিকাঁথা, কলম, রুমালসহ বেশকিছু জিনিস রয়েছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না এখানে। ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন কিংবা সে সময়ের স্মৃতি বিজড়িত কোনো কিছুই তো নেই। জাদুঘর গ্রন্থাগারে যে আলোকচিত্রগুলো দেখেছি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বোঝার উপায় নেই কোনটা কার ছবি। পাশাপাশি ভাষা শহীদদের ওপর লেখা ইতিহাসের বইগুলোও নেই।’

তারা আরও বলেন, ‘রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের ভেতরেও কিছু দেখতে পেলাম না। বই বলতে উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের ওপর লেখা বই এখানে অপ্রতুল। অন্যান্য ভাষা শহীদকে নিয়ে লেখা কোনো বই এখানে নেই। ফলে এখানকার নতুন প্রজন্ম বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তেমন অবগত হতে পারছে না।’

শহীদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ফরহাদ হোসেন খানও স্বীকার করলেন অব্যবস্থাপনার কথা। তিনি বলেন, ‘জাদুঘরে রফিকের কোনো স্মৃতিই নেই। আমি জেনেছি শহীদ রফিকের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র তার ছোট ভাই খোরশেদ আলমের কাছে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছি জিনিসপত্রগুলো জাদুঘরে আনার জন্য।’

গ্রন্থাগারের বই সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘এখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো বই আছে। তবে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, জেলার ইতিহাসসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বইয়ের জন্য আমি আবেদন করেছি।’

এসব বিষয়ে কথা হলে শহীদ রফিকের ভাই খোরশেদ আলম বলেন, ‘রফিকের স্মৃতিচিহ্ন বলতে যা বোঝায় তা খুব একটা নেই। একটি পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টেবিল-চেয়ার ও কাপড়ের ওপর রফিকের নিজ হাতে নকশা করা একটি টেবিল ক্লথ আছে। জাদুঘরে সংরক্ষণের অভাবে তা দেওয়া হয়নি।’

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভাষা শহীদ রফিকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র জাদুঘরে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। যদিও তার ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও দেওয়া হয়নি। পরিবার দিলে তা যথাযথ মর্যাদায় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’

নিউজ লাইট ৭১