জোটেনি সরকারি বরাদ্দের ঘর
- আপডেট টাইম : ০৭:০৪:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / 36
‘আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ধরে’ কবি জসীমুদ্দীনের কবিতার সাথে মিলে রেখেই চলছে শাহাজাহান হাওলাদারের জীবন। তবে ভেন্না পাতার পরিবর্তে তালপাতা ও পলিথিনের ছাউনিতে কাঠগড়া বাওড় ও পুকুরের পাড়ে তৈরী জরাজীর্ণ ঘরে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন ভূমিহীন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। বলছিলাম জেলার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ শাহাজাহান হাওলাদারের কথা।
সহায় সম্পদ না থাকা ভূমিহীন শাহাজাহান দম্পতি প্রায় ৩০ বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছ থেকে পায়নি কোন সাহায্য সহযোগিতা কিংবা একটু সহানুভূতি। বৃদ্ধা দম্পতি প্রকৃতির ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে আছে। প্রকৃতিই যেন তাদের অভিভাবক
সরেজমিনে দেখা যায়, তালপাতা ও পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি একটি মাত্র ঘর, যা বসবাসের অনুপযোগী। স্ত্রী নুরুন্নাহার অন্যের বাড়িতে ও ক্ষেতে কাজ করে এবং সে পুড়াপাড়া বাজারে সাহায্য তুলে চলে তাদের সংসার। নিজস্ব কোন জমি-জয়গা না থাকায় সরকারি সহায়তায় ভূমিহীনদের ঘর দেয়ার খবরে জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্বপ্ন বুনছেন শাহাজাহান হাওলাদার। তবে সেই স্বপ্ন কখনো বাস্তবে রূপ পাবে কিনা অনিশ্চিত তিনি। কারণ অনেকবার চেয়ারম্যান মেম্বারদের বলেও কোন লাভ হয়নি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজে ও স্ত্রীকে নিয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ার স্বপ্ন তার।
প্রতিবেশিরা জানান, একটু ঝড়বৃষ্টি হলেই তারা আমাদের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আছে, তারা অসহায় মানুষ। আমরা আপদ বিপদে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করার চেষ্টা করি। প্রধানমন্ত্রী তো দেশের অনেক গরীব অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাথা গোজার ঠাই করে দিচ্ছে। সরকার যদি তাদের একটা বাসস্থানের ব্যাবস্থা করে দেয় তাহলে খুব ভাল হয়।
ভূমিহীন অসহায় শাহাজাহান হাওলাদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার দেখার মতো কেউ নেই, এক ছেলে আছে সে পাশেই পরিবার নিয়ে থাকে। তারই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। কদিনই আর বাজবো বাবা কতবার চেয়ারম্যান মেম্বারদের বলেছি ঘর পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে যদি, সরকার যে ঘর দিচ্ছে, সে ঘর আমার দেয় তাহলে শেষ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে একটু মাথা গোজার ঠাই পেতাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিনুর রহমান জানান, সে সরকারি ঘর পাবার যোগ্য, নতুন করে বরাদ্ধ এসছে কিনা আমার জানা নেই, যদি আসে তাহলে সে অবশ্যই পাবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনিসুল রহমান বলেন, বিষয়টি আমি খোজ-খবর নিয়ে দেখছি, সে যদি ভূমিহীন হয় তাহলে অবশ্যই মুজিব বর্ষে প্রধান মন্ত্রীর উপহার ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের তালিকায় তাকে আনা হবে। এবং তাকে জমিসহ বাড়ি উপহার দেওয়া হবে।
নিউজ লাইট ৭১