হঠাৎ বন্যায় ভাসতে হলো প্লাস্টিক ড্রামের ভেলায়
- আপডেট টাইম : ১১:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯
- / 125
টানা ছয় দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন। সরকারি হিসেবে এই উপজেলার ৩ লাখ লোক পানিবন্দি। তাদের মধ্যে দেড় লাখ লোক গৃহহীন। বসতঘর চার থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ওই সব ঘরের লোকজন উঁচু স্থান কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
পানিবন্দি তিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের জন্য সাতকানিয়ায় পর্যাপ্ত নৌকা নেই। তাই সাধারণ মানুষ নৌকার বিকল্প হিসেবে কলাগাছের কলা গাছের ভেলা, বাঁশের বেলা ব্যবহার করছেন। এই দুই প্রকার বেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক ড্রামের বেলা। দুই থেকে চারটি প্লাস্টিকের ড্রাম পাশাপাশি বেধে এই বেলা তৈরি হয়। এমন বেলা তৈরি করে পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। আবার অনেকেই এই বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
প্লাস্টিক ড্রামের ভেলায় করে পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া কেউচিয়া গ্রামের বুচির পাড়া বাসিন্দা আব্দুল আলিম। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গত ২২ বছরে আমাদের গ্রামে এমন প্রবল বন্যা আর দেখিনি। এবার বন্যা শুরুর পরো বুঝতে পারিনি এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বন্যা। তাই নৌকার ব্যবস্থা করেনি। পরে পানি বাড়তে দেখে নৌকা ভাড়া করার জন্য আশপাশের ইউনিয়নে তথা শঙ্খ নদীর তীরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে নৌকা ভাড়ায় পাইনি। নৌকার কিনতে চাইলেও জেলেরা বিক্রি করেনি। তাই নিরাশ হয়ে গ্রামে ফিরতে হয়েছে। চরম বিপদের মুহূর্তে আশপাশের কয়েকজন বুদ্ধি দিল, প্লাস্টিকের ড্রামে ভেলা তৈরি করা সম্ভব। তখনই প্লাস্টিকের ড্রাম সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিক বেলা তৈরি করি। প্রতিবেশী চাচতো ভাইদের সহযোগিতায় বেলা তৈরির পর পরিবারের নারী শিশুসহ সব লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাই। না হলে বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে হতো। নৌকার বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলা এ বন্যায় ভালোই কাজ দিচ্ছে। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত এই প্লাস্টিকের ভেলার উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে।’
বন্যার সার্বিক বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে, ‘সাতকানিয়া ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এরমধ্যে দেড় লাখ মানুষ গৃহহীন। তারা আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা আত্মীয় স্বজনদের পাকা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দি মানুষদের কাছে সরকারিভাবে প্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। সোমবার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশা করছি মঙ্গলবার আরো উন্নতি হবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাহলে গৃহহীন লোকজন নিজেদের বসত করে ফিরতে পারবে।’