ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২
  • / 32

ফাইল ফটো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আজকের দিনে সে প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি।

এ সময় দেশের বিদ্যমান অগ্রগতি ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাল্লাহ যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দুখী মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব। দেশবাসীকেও আমি সে আহ্বানই জানাই- আজকের যে অগ্রগতিটা হয়েছে সেটা ধরে রেখে আমরা যেন আরো এগিয়ে যেতে পারি সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।’

সোমবার অপরাহ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন তিনি। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রামপুরাস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টারের (বিটিভি) শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন। যখনই জাতির পিতা সাধারণ মানুষ তথা তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ নিলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের আঘাতটা এল। এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা নয়, এই আঘাত ছিল একটি স্বাধীন দেশের আদর্শ ও চেতনাকে হত্যা করা। কেননা ১৫ আগষ্টের পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সেভাবেই রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল। ১৫ আগস্টের খুনীরা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী- তারাই ক্ষমতায় বসেছিল। আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো চেষ্টাই তারা করেনি। কাজেই যে মানুষগুলোর জন্য তিনি (জাতির পিতা) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য।’

ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বার বার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সব থেকে বড় কথা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার স্মরণে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি পালন করতে পারছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস-এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।

ছোট ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপরই এতে মুজিববর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতার স্বদেশে ফিরে আসার ওপর একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার তার বাবাকে নিয়ে লেখা ‘বাবা’ এবং মাকে নিয়ে লেখা ‘রেনু আমার মা’ কবিতা দুটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করে শোনান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।

জাতির পিতার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। এরপর থেকে জাতি দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তার এই ভাষণে আমরা পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ কী আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে; অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ; ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ; উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় তিনি (বঙ্গবন্ধু) ব্যক্ত করেছিলেন।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ”তিনি তার ভাষণে এটাও বলেছিলেন যখন তাকে ফাঁসি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় একটি দাবি তিনি শুধু করেছিলেন, ‘আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।’ তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন সেই ভাষণে, ‘আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে, বারবার মরে না।’ মৃত্যুকে কখনো ভয় করেননি তিনি, বরং জয় করেছিলেন।”

পাকিস্তানি কারাগারে জাতির পিতার ওপর যে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল তা কেউ কখনো জানতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ”ছোট বোন শেখ রেহানা বার বার বিষয়টি জানতে চাইলে জাতির পিতা শুধু একটা কথাই বলতেন- ‘এটা আমি বলতে চাইনা, তোরা সহ্য করতে পারবিনা।’ এই একটি কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি পাকিস্তানের কারাগারে কী দুঃসহ ষন্ত্রনার মধ্যে তাকে থাকতে হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা হয়তো জাতির পিতা সশরীরে আমাদের মাঝে ছিলেন না, কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাদের হৃদয়ে যে প্রেরণা তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটা ধারণ করে এবং তার আজীবন লড়াই-সংগ্রামের ফসলই ধারণ করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। কেননা শরণার্থীদের পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই জাতির পিতা করে যান।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাথে সাথে পাকিস্তানী বাহিনী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমণ করে জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আর পরদিন সেই বাড়ি আবার আক্রমণ করে তার মা ও রাসেলসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আটকে রাখে। দেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও তারা ১৭ ডিসেম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়ির পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং তখনও জানতেন না তার বাবার ভাগ্যে কী ঘটেছে। এরপর ৮ তারিখে পিতার প্রথম কোনো সংবাদ জানতে পেরে তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ জানুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রিয় স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। তার ফিরে আসাটা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ এই বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে তিনি উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন এবং পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ফিরে পরিবারের কাছে না এসে তিনি আগে তার জনগণের কাছে চলে গিয়েছিলেন।’

নিউজ লাইট ৭১

 

Tag :

শেয়ার করুন

জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য

আপডেট টাইম : ০২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আজকের দিনে সে প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি।

এ সময় দেশের বিদ্যমান অগ্রগতি ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাল্লাহ যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দুখী মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব। দেশবাসীকেও আমি সে আহ্বানই জানাই- আজকের যে অগ্রগতিটা হয়েছে সেটা ধরে রেখে আমরা যেন আরো এগিয়ে যেতে পারি সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।’

সোমবার অপরাহ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন তিনি। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রামপুরাস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টারের (বিটিভি) শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন। যখনই জাতির পিতা সাধারণ মানুষ তথা তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ নিলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের আঘাতটা এল। এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা নয়, এই আঘাত ছিল একটি স্বাধীন দেশের আদর্শ ও চেতনাকে হত্যা করা। কেননা ১৫ আগষ্টের পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সেভাবেই রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল। ১৫ আগস্টের খুনীরা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী- তারাই ক্ষমতায় বসেছিল। আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো চেষ্টাই তারা করেনি। কাজেই যে মানুষগুলোর জন্য তিনি (জাতির পিতা) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য।’

ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বার বার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সব থেকে বড় কথা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার স্মরণে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি পালন করতে পারছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস-এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।

ছোট ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপরই এতে মুজিববর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতার স্বদেশে ফিরে আসার ওপর একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার তার বাবাকে নিয়ে লেখা ‘বাবা’ এবং মাকে নিয়ে লেখা ‘রেনু আমার মা’ কবিতা দুটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করে শোনান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।

জাতির পিতার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। এরপর থেকে জাতি দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তার এই ভাষণে আমরা পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ কী আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে; অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ; ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ; উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় তিনি (বঙ্গবন্ধু) ব্যক্ত করেছিলেন।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ”তিনি তার ভাষণে এটাও বলেছিলেন যখন তাকে ফাঁসি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় একটি দাবি তিনি শুধু করেছিলেন, ‘আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।’ তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন সেই ভাষণে, ‘আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে, বারবার মরে না।’ মৃত্যুকে কখনো ভয় করেননি তিনি, বরং জয় করেছিলেন।”

পাকিস্তানি কারাগারে জাতির পিতার ওপর যে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল তা কেউ কখনো জানতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ”ছোট বোন শেখ রেহানা বার বার বিষয়টি জানতে চাইলে জাতির পিতা শুধু একটা কথাই বলতেন- ‘এটা আমি বলতে চাইনা, তোরা সহ্য করতে পারবিনা।’ এই একটি কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি পাকিস্তানের কারাগারে কী দুঃসহ ষন্ত্রনার মধ্যে তাকে থাকতে হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা হয়তো জাতির পিতা সশরীরে আমাদের মাঝে ছিলেন না, কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাদের হৃদয়ে যে প্রেরণা তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটা ধারণ করে এবং তার আজীবন লড়াই-সংগ্রামের ফসলই ধারণ করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। কেননা শরণার্থীদের পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই জাতির পিতা করে যান।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাথে সাথে পাকিস্তানী বাহিনী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমণ করে জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আর পরদিন সেই বাড়ি আবার আক্রমণ করে তার মা ও রাসেলসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আটকে রাখে। দেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও তারা ১৭ ডিসেম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়ির পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং তখনও জানতেন না তার বাবার ভাগ্যে কী ঘটেছে। এরপর ৮ তারিখে পিতার প্রথম কোনো সংবাদ জানতে পেরে তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ জানুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রিয় স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। তার ফিরে আসাটা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ এই বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে তিনি উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন এবং পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ফিরে পরিবারের কাছে না এসে তিনি আগে তার জনগণের কাছে চলে গিয়েছিলেন।’

নিউজ লাইট ৭১