খালেদা কারাগারে রাজার হালে আছেন
- আপডেট টাইম : ১২:১৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 79
নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য নতুন কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে হুইলচেয়ারে করে শপিং করেছেন, এমনকি হজও করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রাজার হালেই রয়েছেন। জেলখানা থেকে এখন হাসপাতালে। তার জন্য আবার মেইড সার্ভেন্ট দেয়া হয়েছে। মানুষ এমনিতে কাজের বুয়া পায় না। আর খালেদা জিয়ার জন্য স্বেচ্ছায় একজন কারাবরণ করছে, তার সেবা করার জন্য। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিন বছর পর দলের এই ফোরামটির সভা বসে।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া যে অসুস্থ, সেটি তো পুরনো খবর। তিনি যখন ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসেন, তখন আমেরিকায় গিয়ে পায়ের নি-ক্যাপ রিপ্লেস করেছিলেন, অপারেশনও হয়। তারপর আবার সৌদি আরবে অপারেশন করান। খালেদা জিয়া যখন বিদেশে গেছেন, তখন তো হুইল চেয়ারে শপিং করতেন। কাজেই এই যে হুইল চেয়ারে বসা, এটি নতুন কিছু না। এটি তো আমরা বহু যুগ ধরে দেখে আসছি। তারপরও আবার তার জন্য আন্দোলন। তিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আল্লাহ তো বলে দিয়েছেন যে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে, আল্লাহ নিজেই তার ব্যবস্থা নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ কি এই দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবে যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে সেবার জন্য তার নিজস্ব কাজের বুয়া দেয়া হয়? সেটিও কিন্তু খালেদা জিয়া কারাগারে বসে পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের গডমাদার হচ্ছে খালেদা জিয়া। সে এই বাংলা ভাই সৃষ্টি থেকে শুরু করে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, ঠান্ডা মাথায় হরতাল অবরোধ ডেকে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এতিমের নামে টাকা এসেছে, সে টাকা সে চুরি করছে। আর সে মামলা দিয়েছে তারই প্রিয় ব্যক্তিরা, যারা ক্ষমতায় ছিল। তার বিরুদ্ধে গ্যাটকোর কেস, তার বিরুদ্ধে নাইকোর কেস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া পরিবারটাই খুনি পরিবার। ভোট চুরি, মানুষ হত্যা, আগুন দিয়ে পোড়ানো, এতিমের অর্থ আত্মসাত, দুর্নীতি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ মানুষ হত্যা অর্থাৎ জিয়া যেমন খুনি ছিল, খালেদা জিয়াও আরেক খুনি, তার ছেলেও খুনি। এই পরিবারটাই খুনের পরিবার। তারা মানুষ খুন, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ করা ছাড়া আর কিছুই জানে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখি। খালেদা জিয়া যে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করলো এটা তারা ভুলে যায় কেন? মানুষকে কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে সেটা ভুলে যায় কেন? তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে, কত বোন আগুনে পুড়ে বিকৃত চেহারা হয়েছে। ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, আইনজীবি কেউ তো বাদ যায়নি।
সে বীভৎস অবস্থাটা নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে। তারপর এই দরদটা যারা দেখায়, তাদের আবার আগুনে পোড়া মানুষের চেহারাটা একটু দেখে আসা উচিত। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ‘ক্লিনহার্ট’ অভিযান চালানোর নামে মূলত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা এবং হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া খুনিদের বৈধতা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে সেনা ও বিমান বাহিনী কর্মকর্তাসহ কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি বিল পাস করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ‘মিরাকল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন, যে নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলতে চায় বিএনপি। এটা তারা ভুলে যায় যে এক-একটা সিটের পিছনে তারা দুই তিনজনকে মনোনয়ন দিয়েছিলো। যে যখন যার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে তাকেই মনোনয়ন দিচ্ছে।
একভাগ দিতে হচ্ছে লন্ডনে আর দুইভাগ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশে। গুলশানের অফিসকেও সন্তুষ্ট করতে হয়েছে, পুরানো পল্টনের অফিসকেও। একটা সিটের জন্য দুই তিনজনে যারা মনোনয়ন দেয় তারা নির্বাচনে জেতার জন্য না। মনে হয় এটাকে একটা বাণিজ্য হিসাবে নিয়েছিলো তারা। আসলে আন্তর্জাতিকভাবে যে সার্ভেটা হয়েছিলো তাতে সবাই দেখতে পেয়ছিলো যে বিএনপি সিট পাবে না, সেই জন্য নির্বাচনটাকে তারা ব্যবসা বাণিজ্য হিসাবে নিয়ে নেয়। সেখানে সিট না পেয়ে অন্যদের দোষারোপ দেয়ার কোন মানে হয় না। দেশে কথা বলার অধিকার নেই বলে যারা সরকারের সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টক শোতে যেয়ে টক মিষ্টি কথা বলার কত সুযোগ মানুষ পাচ্ছে। টক টক কথা তো বলেই যাচ্ছে। আজকে মানুষের এত কথা বলার সুযোগ, অত কথা বলার পরেও বলছে এ সরকারের আমলে কথা বলার অধিকার নেই। বলে যাচ্ছে কিন্তু। আসলে এ ধরনের পরচর্চা করা তাদের অভ্যাস। তিনি বলেন, এই যে এতগুলি টেলিভিশন সেটা কে দিয়েছে?
এতে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করেছে সেটা কে করেছে? এগুলো আমাদের সরকার করেছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীনতো করেনি। আমি যখনই প্রধানমন্ত্রী হয়েছি তখনই বেসরকারি টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি এটা শুধু টেলিভিশন না, এর মাধ্যমে কত লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে অনেকে অনেক কিছুই বলতে পারে। এটা হয়েছে ওটা হয়েছে। ও এনজিও করেছে তার জন্য দেশ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি যদি হতো তাহলে দারিদ্র্যের হার কমেনি কেন? প্রবৃদ্ধির হার বাড়েনি কেন? মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়নি কেন? একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন হয়েছে। আজকে আমরা ৮ দশমিক ১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামে গঞ্জে মা বোন থেকে শুরু করে প্রত্যেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, স্বাক্ষরতার হার, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিলো। আমরা প্রতিটি সেক্টরকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এতে আমাদের অর্থনীতির চাকা আরও সচল হয়। দূর্ভাগ্য হলো ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারি নাই। আমাদের আসতে দেয়া হয়নি, সেটা একটা গভীর চক্রান্ত ছিলো। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছিলো। এই নির্যাতনের শিকার শুধু আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তা না, একদিনে ১৩ জন সচিবের চাকরি নাই। শত শত সেনা অফিসার, সিভিল প্রাশসকদের চাকুরীচ্যুত করা হলো। আর যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি তাদের ওএসডি করা হয়েছিলো, যতদিন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলো তারা ওএসডি ছিলো। এভাবে তারা অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। সভা পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সভাপতির একপাশে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সভাপতিমন্ডলির সদস্যরা ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, আবুল মাল আবদুল মুহিত, তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিমন্ডলির সদস্যদের মধ্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, কর্নেল(অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর উপস্থিত ছিলেন।