রাজনৈতিক দলের পরামর্শে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব: রাষ্ট্রপতি
- আপডেট টাইম : ১২:৩১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১
- / 30
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সবার মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠনের আশা প্রকাশ করেছেন।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শেষ হতে চলায় নতুন ইসি গঠনে সোমবারই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
বঙ্গভবনে প্রথম দিনে সোমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তিনটি দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তারা সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন এবং সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আরেকটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।
তারা আরও বলেন, যদি এই সময়ের মধ্যে আইন প্রণয়ন সম্ভব না হয়, তাহলে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে।
আইন প্রণয়ন কিংবা অধ্যাদেশ জারি সম্ভব না হলে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে জাতীয় পার্টি।
সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলাপ হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছি। উনি প্রস্তাবগুলো মোটামুটি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তার ভাষ্যে প্রস্তাব তিনটি হচ্ছে- ১. নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, ২. সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন, ৩. রাষ্ট্রপতি নিজে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব বের করে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় যে প্রস্তাবটি দিয়েছি যদি কোনো কারণে আইন প্রণয়ন করতে না পারেন তাহলে যেটা সব সময় করা হয় সার্চ কমিটি গঠন, সেটাও আপনারা করতে পারেন।’
সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে কয়েকজনের নামের প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটির গঠনের জন্য কিছু যোগ্য এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তি লাগে বলে আমরা মনে করি। সে জন্য উনাকে (রাষ্ট্রপতি) ৪ থেকে ৫ জনের একটি তালিকা দিয়েছি। যেটা আমরা এখানে প্রকাশ করব না।’
রাষ্ট্রপতি যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তাতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি না- প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যাব না, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি।’
বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসে জাতীয় পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বিকেল সাড়ে ৫টায় তা শেষ হয়।
জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন- মুজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ।
মহামারির এই সময়ে তাদের সবাইকে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে তবেই বঙ্গভবনে যেতে হয়েছে।
ইসি গঠনে আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপের সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার আগে সোমবার দুপুরে বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব দলের সঙ্গে সংলাপের তারিখ জানানো হয়।
এর আগে সোমবার জাতীয় পার্টি এবং বুধবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সঙ্গে আলোচনার সূচি জানানো হয়েছিল।
সোমবার আরও সাত দলের নাম আসায় এ পর্যন্ত মোট নয় দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সূচি চূড়ান্ত হল।
সূচি অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মতবিনিময় হবে রাষ্ট্রপতির।
পরদিন ২৭ ডিসেম্বর তরীকত ফেডারেশনের সঙ্গে বিকেল ৪টায় এবং খেলাফত মজলিশের সন্ধ্যা ৬টায় সংলাপ হবে।
১৪ দলের আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বসবেন রাষ্ট্রপতি।
পরদিন ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এবং ইসলামি ঐক্যজোটের সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায় সংলাপ হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল এখন তিন ডজনের বেশি। তবে কতটি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।
২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংলাপ শুরু হয়ে এক মাস ধরে চলে, তাতে অংশ নেয় ৩১টি দল।
বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা জানান, এবার এক মাস ধরে এই সংলাপ নাও হতে পারে। মহামারির কারণে কম সময়ে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করবেন।
নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে।
নিউজ লাইট ৭১