টাকার ফাঁদে ফেলে কম বয়সী নারী পাচার
- আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১
- / 35
বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কম বয়সী নারীদের ফাঁদে ফেলা হতো। বিভিন্ন পেশায় লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির কথা বলে প্রথমে লোভ দেখাতো একটি মানবপাচারকারী চক্র।
এসব নারীদের কাছ থেকে প্রথমে কোনো টাকাই নেয়া হতো না। উল্টো তাদেরই দেয়া হতো টাকা। টাকা নেয়ার পর কোনও নারী বিদেশ যেতে না চাইলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হতো। বাধ্য হয়ে তখন অনেকে যেতে রাজি হয়। পরে তাদের দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করে বিক্রি করে দিত। পাচারকৃত এসব নারীদের জোর করে ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো হতো।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অন্যতম হোতা শামসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব তথ্য জানায়।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় দুটি মোবাইল ফোন, একাধিক ব্যক্তির পাসপোর্ট, একটি বিএমইটি কার্ড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া চক্রটির মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার সময় একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ভিকটিমকে উদ্ধার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষদের ফাঁদে ফেলে দুবাইয়ে নিয়ে যেত। তাদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী।
আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, দুবাইয়ে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনের প্রলোভনে কমবয়সী তরুণীদের টার্গেট করত মানবপাচারকারী চক্রটি। শতাধিক তরুণীকে দুবাই পাচার করেছে তারা। ড্যান্স ক্লাবে চাকরির কথা থাকলেও তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসাসহ অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত করতে বাধ্য করা হতো। চক্রটি ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কার্ড তৈরি করত। গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কার্ড তৈরি করা হলেও তাদের মূলত দুবাইয়ে পাচার করা হতো। এই চক্রের অন্যতম হোতা শামসুদ্দিনকে আটক করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার শামসুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে দুবাই অবস্থানরত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে তারা এই চক্রের কাজ করত। জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারক চক্র মেয়েদের বিদেশে যেতে প্রলুব্ধ করে। কোনো তরুণী বিদেশ যেতে রাজি না হলে নানা হুমকি দেয়া হতো। এছাড়াও চক্রটি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক অনেক পুরুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
তিনি আরও বলেন, র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে জানা যায় জিয়া চক্রের মাধ্যমে এক নারীকে পাচারের চেষ্টা করছে। এরপর অভিযান চালিয়ে ওই নারী ও তিন পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জিয়ার নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা প্রথমে অল্পবয়সী নারীদের টার্গেট করে। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ঢাকায় এনে হোটেলে রেখে পাসপোর্ট ও ‘বিএমইটি’ কার্ড তৈরি করে দেয়া হতো। এছাড়া বিদেশে যেতে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেটও করে দিত। এরপরেই নারীদের বিদেশে পাচার করে দেয়া হতো।
র্যাব ১ এর অধিনায়ক বলেন, চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া পাচার করত। বিএমইটি কার্ডটি কোনো রকম ট্রেনিং ছাড়াই করে দিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একজন দক্ষকর্মী হিসেবে বিএমইটি কার্ড তৈরি করতে একমাস সময় লাগত। আমরা একজন ভিকটিমকে পেয়েছি, যাকে ট্রেনিং ছাড়াই বিএমইটি কার্ড দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেটি হারিয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতেই আবারও কার্ড ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, পাচারের টার্গেট করতে যাওয়া একজন নারীকে দেশে থাকা অবস্থায় ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। তাকে আরও টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তবে উদ্ধার পুরুষ ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর জন্য দালাল চক্র তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের পাঠানো কোনো টাকা নেয়া হতো না। চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও টাকা নেয়ার পর কোনো নারী বিদেশ যেতে না চাইলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। তখন বাধ্য হয়ে অনেকে যেতে রাজি হয়।
নিউজ লাইট ৭১