পশ্চিম রেলে নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ!
- আপডেট টাইম : ০৮:০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / 47
পশ্চিমাঞ্চল রেলে টিএলআর থেকে পোর্টার পদে স্থায়ীকরণে ব্যাপক ঘাপলাসহ মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জিএম, সিপিও, এসডাবও বড় বাবু সৈকত আহম্মেদ মিলে ২২ জন পোর্টার পদ প্রাপ্তিদের নিকট থেকে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ।
জানা যায়, অস্থায়ী টিএলআর পদে কর্মরত ২৩ জন চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০১৯ সালে মামলা করেন। যাহার মামলা নং ৩০৩। এই মামলার রায় নিয়ে চলছে লুকোচুরি। ২০২০ সালের শেষের দিকে আইন কর্মকর্তার এক চিঠির জবাবে ১৯ জনকে পোর্টার পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে আবার সেই আইন কর্মকর্তার ২য় চিঠিতে নিয়োগ স্থগিত করার আদেশ দিলেও এখন পর্যন্ত সেই নিয়োগ স্থগিত না করে সময়ক্ষেপন করছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান জিএম নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে অদৃশ্য শক্তিবলয়ে এখনো বহাল আছেন। সিসিএম থেকে যাত্রা করে জিএম পর্যন্ত রেলের কেনাকাটা ব্যাপক ঘাপলা করেন তিনি। অস্থায়ীভাবে সিওপিএস দপ্তরে ১০০ জন ও সিসিএম দপ্তরে ৮০ জন নিয়োগ দেন মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্যে। পশ্চিম রেলের সিসিএম ও জিএম পদে থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক শত কোটি টাকা।
সম্প্রতি সিপিও এর যোগসাজশে স্কুলের (টিএলআর) পিয়ন পদে ৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছে এসডাবøু অফিসের বড় বাবু সৈকত। উক্ত চারজন ব্যক্তি সৈকতের নিজ এলাকার লোক। প্রতিজনের কাছে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ করে। আর এই সকল কাজ হয় জিএম পশ্চিমের নির্দেশে বলে নিশ্চিত করেন সৈকত। এ যাবৎ যত নিয়োগ হয়েছে সব নিয়োগপ্রাপ্তদের কাগজ পরীক্ষার নামে প্রতিটি পদের বিপরীতে ১ লাখ করে নিয়েছেন এস ডাবøু অফিসের সৈকত। অভিযোগ উঠেছে কয়েক বছরে ১৫-২০ কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছেন সৈকত।
উক্ত বিষয়ে এস ডাবøু অফিসের বড় বাবু সৈকত বলেন, ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ সঠিক নয়। আমি কাউকে নিয়োগ দিতে পারি না। এগুলো অফিসারদের বিষয়, আমি শুধু ফাইল পুটআপ করি। মামলার প্রেক্ষিতে ২৩ জন পোর্টার মধ্যে ২২ জনকে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। আইন কর্মকর্তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরে আইন কর্মকর্তা ২য় চিঠিতে জানায় পূর্বের রায়ের কপিটি জাল ছিল। সেই সাথে নিয়োগ স্থগিতের সুপারিশ করেন তিনি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা বলতে পারেনি সৈকত।
আইন কর্মকর্তা আল মাহমুদ বলেন, প্রথম রায়ের যে কপি দিয়ে মামলার বাদি জিএম বরাবর যে আবেদন করেন, সেটা আমার নিকট ফরোয়ার্ড করা হলে আমি সুপারিশ করি। পরবর্তীতে কোট অর্ডার না আসায় আমি আদালতে খোঁজ নিলে জানতে পারি রায়টি ভুয়া। পরে ২য় চিঠিয়ে দিয়ে নিয়োগ স্থগিত করার সুপারিশ করি। কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি।
জানতে চাইলে সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার এসএম আকতার হোসেন আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আইন কর্মকর্তার প্রথম চিঠির বলে আমরা নিয়োগ দিয়েছি, আবার তার দ্বিতীয় চিঠি আসলে এই নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া ফাইল পুটআপ করেছি । আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে কোন কিছুই করার এখতিয়ার নাই, যেহেতু আইন কর্মকর্তা দ্বিতীয় চিঠিতে বলেছেন, আদালতের আগের কাগজটি অরিজিনাল নয়, সেটা ভুয়া ছিল। তারপরেও আমরা আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা তিনি বলতে পারেননি।
পিওন পদে চারজন নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে চিফ পার্সোনেল অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়, অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬ মাসের নিয়োগে সর্বোমোট বেতন পাবে ৮৪ হাজার টাকা, আর ঘুষ দিয়েছে ১০ লাখ টাকা, এটা হতে পারে না।
এ বিষয়ে পশ্চিম রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বসতে না বলে ব্যাঙ্গ করে বলেন কিছু হলেই সাংবাদিকরা একটা চুংগা নিয়ে হাজির হয়, আর কয় সাক্ষাৎকার দেন। আমি সাক্ষাৎকার দিতে পারি না, উর্ধতন অফিসারে পারমিশন ছাড়া টিভি সাক্ষাৎকার দেওয়া যায় না। পজেটিভ নিউজের সাক্ষাৎকার দেওয়া যায়, নেগেটিভ নিউজের সাক্ষাৎকার দেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সুপারি আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমাঞ্চল রেলের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ মিহির কান্তি গুহর নামে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
নিউজ লাইট ৭১/ জহিরুল ইসলাম