নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আরও সতর্ক হওয়ার তাগিদ
- আপডেট টাইম : ০৫:২৩:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / 53
মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আরও সতর্ক হওয়ার তাগিদ এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। একই সঙ্গে, নিজ কার্যালয়ে বসে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবেন না উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে ঘটনাস্থলে।
পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার বলে মনে করে আদালত।
নেত্রকোনার আটপাড়ায় বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে দুই কিশোর-কিশোরীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনায় করা রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
এর আগে গত ৪ আগস্ট এক আদেশে আটপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিয়া সুলতানার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। এ ঘটনায় রাজিয়া সুলতানা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনে যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সেটি ২৬ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলেছিল আদালত। এর ধারাবাহিকতায় তার ব্যাখ্যার বিষয়টি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। তাতে রাজিয়া সুলতানা ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। আদালত তার আদেশে রাজিয়া সুলতানার ব্যাখ্যা সংক্রান্ত এ আবেদনটি নেত্রকোনার জেলা প্রশাসনকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
ভার্চুয়ালি রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
শিশির মনির বলেন, ‘নেত্রকোনায় দুই শিশুকে দণ্ড দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এনেছিলাম। বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট। আদালত তার তিনটি পর্যবেক্ষণের একটিতে বলেছেন, এই যে অফিসে ডেকে নিয়ে এসে অথবা খাস কামরায় মোবাইল কোর্ট বসানো, এটি করা যাবে না। মোবাইল কোর্ট অবশ্যই স্পটে হতে হবে। এছাড়া মোবাইল কোর্ট যারা পরিচালনা করেন তাদের আইনের ব্যাপারে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সময় আইনের প্রয়োগ যেন সঠিকভাবে হয় সেটির বিষয়ে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘আদালতের পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’
বাল্য বিয়ের অভিযোগে নেত্রকোনার আটপাড়ায় গত ১ আগস্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল ১৫ বছরের দুই কিশোর-কিশোরীকে। গত ৪ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুজনের মুক্তি চেয়ে ওই দিন হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। এতে বলা হয়, দুই শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালত যে আটকাদেশ দিয়েছেন, তা এখতিয়ারবহির্ভূত। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭-এর ৭ (২) ধারার শর্তে বলা হয়েছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক কেউ বাল্য বিয়ে করলে তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। এখানে বিচার বা শাস্তির ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের শিশু আইন প্রযোজ্য হবে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বিষয়টি আমলে নিয়ে দুই শিশুকে তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) টেলিফোনে আদালতের আদেশ জানানো হলে তিনি (ডিসি) জানান, সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি করে ইতিমধ্যে দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শিশির মনির।
নিউজ লাইট ৭১