বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কারও ওপরই কোনো চাপ প্রয়োগ করতে পারে না চীন
- আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯
- / 135
নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক – রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন- বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাই কারও ওপরই কোনো চাপ প্রয়োগ করতে পারে না চীন। উল্লেখ্য, চীনের গুড অফিস ব্যবহার করে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে ঢাকার অব্যাহত আহ্বানের প্রেক্ষিতে বেইজিংয়ের দূত তার দেশের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বলেই ধারণা। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কৌশল সন্ধান’ বিষয়ক সেমিনারে রাষ্ট্রদূত লি এসব কথা বলেন। ইংরেজি দৈনিক ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় চীনের রাষ্ট্রদূত অবশ্য বলেন, মিয়ানমার বন্ধু রাষ্ট্র হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের প্রতি কোন পক্ষপাত নেই চীনের। পুঞ্জিভূত ওই সঙ্কটের টেকসই সমাধানের চেষ্টায় বাংলাদেশের প্রতি যেমন মিয়ানমারের প্রতিও তেমন (সমান) আচরণ করছে চীন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেইজিং বরাবরই সক্রিয় এবং উদ্বিগ্ন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্কটের সমাধানে চীন একটি নিজস্ব রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে। শান্তিপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনেই চীনের পূর্ণ মনোযোগ। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে চীন এ ব্যাপারে অন্যন্য ভূমিকা পালন করছে। গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ওই সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের ভূয়সী প্রসংশা করেছেন। তিনি বলেন, তার দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ওই আলোচনা জারি রেখেছে। চীন কারও প্রতি একচোখা বা এক পেশে আচরণ করবে না। এমন একটি সমাধানে যেতে চায় বেইজিং যাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’পক্ষই লাভবান হয়। গত দুই বছরে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোই ত্রিদেশীয় ওই বৈঠকের উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর স্থানীয় প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতেই হবে। এটাই সমাধান। তবে তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ফেরতের পর যেনো কোন রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে আসতে বাধ্য না হয় এমন পরিবেশ মিয়ানমার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববাসী এমন পরিবেশের নিশ্চয়তাই চায় সুচি সরকারের কাছে। প্রত্যাবাসন মোটেও অসম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের একটাই চাওয়া তা হলো নিজের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা। তারা নিজ দেশে নিজেদের যথাযথ মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে চায়। এটি নিশ্চিত করা গেলে রোহিঙ্গারা এখনই মিয়ানমারে ফিরে যাবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের কষ্টের জীবনের কথা বলতে গিয়ে জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার ৩০ বছরের সার্ভিস জীবনে এমন অবর্ণনীয় ক্যাম্প দেখিনি। বাধ্য হয়ে তারা সেখানে বসবাস করছে। ৯৭ জন রোহিঙ্গা বলেছেন তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে এখনই ফেরত যাবে। ওই কর্মকর্তা শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের কথা পূণর্ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা হয়েছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি তার সরকারের পক্ষে সেখানে লড়বেন। এখন দেখার বিষয় কী ঘটে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাক। কিন্তু দুর্ভাগ্য একজন রোহিঙ্গা এখনও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) তার বক্তৃতায় বলেন, মানবিক অপরাধের কারণে সারা বিশ্ব মিয়ানমারের বিপক্ষে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। তারা এখানে সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক নানা রকম ঝুঁকি তৈরি করছে। শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে সুদৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকারও আহ্বান জানান ওই বিশ্লেষক। সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তারা এমন আলোচনার আয়োজন করেছেন। তার মতে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান বিশেষত বাস্তুচ্যুতদের দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিকে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই সরব হতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে এটি গোটা বিশ্বের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অনুষ্টানে ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিক প্রমুখ বক্তৃতা করেন।