প্রবাসে নির্যাতিত আসমার অন্যরকম প্রতিবাদ
- আপডেট টাইম : ১০:২৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯
- / 146
নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক- সরাইলের কালিকচ্ছ ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের দেওয়ান আলীর কন্যা আসমা (১৯)। গোটা পরিবার দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে বসবাস করছে। বেড়ে উঠেছে অভাব অনটনের মধ্যে। জন্মের পর সুখ দেখেনি। পড়ালেখাও করতে পারেনি। মা-বাবাসহ পরিবারের সবার শান্তির জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। প্রথমে গার্মেন্টে চাকরি ও পরে টাকার জন্য পাড়ি দেয় প্রবাসে। দেশ ছেড়েও সুখ পায়নি আসমা।
হতে হয়েছে অমানবিক নির্যাতনের শিকার। নিজেকে বাঁচাতে ভাগ্যে বরণ করে নিয়েছে প্রবাসের কারাবাস। কষ্টের অভিজ্ঞতা সীমাহীন। জেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নিজেকে পৃথিবী থেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। সকল কষ্টের বোঝা মাথায় করে আবার নিজের দেশে ফিরে আসে।
এখানেও তার ওপর নানা সমালোচনা। নির্বাক নিস্তব্ধ আসমা। খাওয়া দাওয়া বন্ধ। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ রুপি কিছু হায়েনা ও নরপশুর বীভৎসতা কিশোরী আসমার হৃদয়কে ভেঙে চুরমার করেছে। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েই ওইসব জানোয়ারদের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাল আসমা। গত ২০শে নভেম্বর বুধবার রাতে সরাইলের কালিকচ্ছ নন্দিপাড়া ভগ্নীপতি হোসেন মিয়ার বসতঘরে নিজের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে আসমা। পরিবারের অভিযোগ না থাকার পরও লাশের ময়নাতদন্ত নিয়ে হয়েছে নানা নাটকীয়তা। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ৬ মাস আগে যায় সৌদী আরব। যাওয়ার পরই পাসপোর্ট নিয়ে নেয় কফিল। শুরুতে ভালই কাটছিল আসমার দিন কাল। তিনমাস বাড়িতে ১৮ হাজার করে টাকা পাঠিয়েছে। পরিবারে এবার সচ্ছলতা ফিরে আসবে এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন মা রহিমা বেগম (৫২)। এরপরই বেতন বন্ধ হয়ে যায়। ভাল কোন খবর নেই। চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারের লোকজন। মানুষ নামের হায়েনা (কপিল) আসমার উপর নির্যাতন চালায়। বাঁচার কোন পথ নেই আসমার। সব হারিয়ে আসমা পাগল প্রায়। অবশেষে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে সে দেশের পুলিশের কাছে ধরা দেয়। নিয়ে যায় হাজতে। সেখানেও অবর্ণনীয় কষ্ট।
কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এক মাসেরও অধিক সময় সৌদীতে হাজতবাসের পর গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে আসমা। সর্বস্ব খুঁইয়ে বাকরুদ্ধ আসমা। চোখে মুখে তার বিষাদের চাপ। সর্বক্ষণই মন মরা। আসমাকে গত ১৪ নভেম্বর সিলেট থেকে কালিকচ্ছে নিয়ে আসেন ভগ্নিপতি হোসেন মিয়া। এখানেও তার বড় বোন সহ কারো সাথে কথা বলে না। শুধু এদিক ওদিক চেয়ে থাকে। খাবার খায় না। গত ২০ নভেম্বর সিলেট চলে যাওয়ার কথা বললে বোন আনোয়ারা রাজি হননি। রাতে ভগ্নিপতি কাজে তাই বোনকে চিপস্ আনতে দোকানে পাঠায় আসমা।
সুযোগে ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে আসমা। বোন এসে দেখেন দরজা ভেতরের দিকে লাগানো। অনেক চেষ্টার পর পেছনের দরজা ভেঙ্গে দেখে ফাঁসিতে ঝুলে আছে আসমা। রশি কাটলে আসমার নিথরদেহ মাটিতে পড়ে যায়। আসমাকে দ্রুত সরাইল হাসপাতালে নিয়ে যান হোসেন মিয়া। চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ আসমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নিহত আসমার মা রহিমা বেগম ও বোন আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের ধারণা মূলত সৌদী আরবে অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিল আসমার জীবন। যা সে সহ্য করতে পারছিল না। তাই জেল খেটে দেশে এসে মরার মত ছিল। অবশেষে আত্মহত্যা করেই প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসমার লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করেছি। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, এটা আত্মহত্যা। প্রবাসে কিশোরী বড় ধরণের কোন আঘাত পেয়েছে। আবার দেশে আসার পর তার প্রবাস জীবনের উপর লোকজনের নানা ধরণের আপত্তিকর আলোচনা। এ জন্য আসমার বিয়ের উপরও প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।