দ্বৈত পাসপোর্টধারী ১৩ হাজার ৯৩১ জন
- আপডেট টাইম : ০৪:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১
- / 137
অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ করেছে অথবা কিনেছে, সেই বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো দিয়ে দেশে-বিদেশে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন তাদের সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৩১ জন। এমন একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ
বুধবার (৩১ মার্চ) পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারের পক্ষে (ইমিগ্রেশন) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ১৩ হাজার ৯৩১ দ্বৈত নাগরিকের তালিকাসহ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই তালিকা এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করা হবে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর স্বঃপ্রণোদিত হয়ে দেশ থেকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ বা ক্রয় করেছেন তাদের মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টধারীদের এবং যারা দেশের তিনটি (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে-বিদেশে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন, তাদের তালিকা চান হাইকোর্ট।
পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারকে (ইমিগ্রেশন) এ তালিকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এসব অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চান আদালত।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, তার কাছে ২৮টি কেস এসেছে। এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট দেশের বাইরে অর্থপাচারে জড়িত দুর্বৃত্তদের নাম, ঠিকানা ও পাচার করা অর্থে তাদের বিদেশে বাড়ি তৈরিসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতে শুনানিতে ওঠে। সেদিন আদালত দেশের বাইরে অর্থপাচারে জড়িত ও পাচার করা অর্থে যারা বিদেশে বাড়ি তৈরি করেছেন, তাদের নাম-ঠিকানা ও তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, দুদকসহ বিবাদীদের সময় দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ওই তালিকা দাখিল করা হয়।
কিন্তু এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে তথ্য দাখিল করা হয়। সেখানে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলার একটি তালিকা দিলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ‘আমাদের পুরানো কাহিনী শুনিয়ে কোনো লাভ নাই। নতুন কী তথ্য আছে সেট দিন। যারা কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করে গাড়ি-বাড়ি করেছে তাদের বিচারটা করা না গেলেও নামটাও কি দেশের জনগণ জানতে পারবে না?’ এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট অর্থপাচারকারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা তলব করে আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি।
দুদক আইনজীবী আদালতে বলেছিলেন, এ ধরনের তালিকা পেলে অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে।
আদালত বলেন, দ্বৈত নাগরিক ও পাসপোর্টধারী কারা, সেটা আমরাও জানতে চাই। দ্বৈত পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাতায়াতকারীদের তথ্য জানা প্রয়োজন।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গোপনে কানাডার টরেন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা সেখানে থাকে। মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন।
এ ছাড়া কিছু আছেন তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।
নিউজ লাইট ৭১