এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল স্বাগতিকরা
- আপডেট টাইম : ০৬:২১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
- / 87
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিলান্ড। এ জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল স্বাগতিকরা।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সিরিজে টিকে থাকার ম্যাচে মাখন মাখা হাতে স্বাগতিকদের জয় উপহার দিয়েছে টাইগাররা। ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কিউইরা ম্যাচটি জিতেছে ৫ উইকেটে।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ। কিউইদের হয়ে ব্যাট করতে নামেন মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে বল ওপরে তুলে দেন গাপটিল। সহজেই ক্যাচ ধরে টাইগারদের আনন্দে ভাসান দ্যা ফিজ।
ব্যক্তিগত ২০ রানে গাপটিল ফেরেন। এরপর নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে হেনরি নিকোলসকে বোল্ড করেন আগের ম্যাচে অভিষিক্ত মাহেদী হাসান। তিনি করেন ১৩ রান। তার জোড়া আঘাতে এরপর মাত্র ১ রান করে বোল্ড হন উইল ইয়ং।
ম্যাচে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ডেভন কনওয়ে ও অধিনায়ক টম ল্যাথামের ব্যাটে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। দুজনে মিলে গড়েন ১১৩ রানের জুটি।
ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পূরণ করার পর শতকের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কনওয়ে। কোনো বোলারই তাকে বা ল্যাথামকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না। এমতাবস্থায় দলের ত্রাতা হয়ে আসেন তামিম। তার ডাইরেক্ট থ্রোতে রান আউট হয়ে ৭২ রানে সাজঘরে ফেরেন কনওয়ে।
এরপর ম্যাচে ফেরার সুযোগ খুব ভালোভাবেই পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কখনো মুশফিক, কখনো মাহেদী সহজ ক্যাচ ফেলেছেন। আবার বাজে ফিল্ডিংয়ে প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন ফিল্ডাররা। ফলে বেশ কয়েকবার জীবন পান নিশাম ও ল্যাথাম।
ব্যক্তিগত ৩০ রানে নিশাম ফিরলেও ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি পূরণ করেন ল্যাথাম। শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন কিউই অধিনায়ক। বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মাহেদী হাসান।
এর আগে মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টস হারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয়টিতেও টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম।
ওপেনিংয়ে আসেন অধিনায়ক তামিম ও লিটন দাস। শুরুটা একদমই বাজে হয় বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশ হারায় লিটন কুমার দাশের উইকেট। কোনো রান না করেই তিনি সাজঘরে ফেরেন।
ম্যাট হেনরির শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ ডাক, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম। এ সময় বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৪।
পঞ্চম ওভারের বোল্টের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করেন তামিম। তার প্যাডে লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। ডানদিকে ঝাপিয়ে বল তালুবন্দি করেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। নিউজিল্যান্ডের উইকেটের আবেদনে আম্পায়ার ওয়েন নাইটস সাড়া দেন। তামিম সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায় বল তামিমের প্যাডে আঘাত পেয়ে ল্যাথামের গ্লাভসে জমা হয়। রিভিউ থাকায় বেঁচে যান টাইগার দলপতি।
তামিম-সৌম্যর ব্যাটে ক্রমেই লিটনকে হারানোর চাপ সামলে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে মিচেল স্যান্টনারের বলে ক্রিজের বাইরে এসে মারতে গিয়ে টম ল্যাথামের হাতে স্ট্যাম্পিং হন সৌম্য (৩২)। দলীয় রান তখন ৮৪।
এরপর ধীরে ধীরে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০ তম অর্ধশত তুলে নেন তামিম। ফিফটির পর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তুলছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ড বোলারদের জন্য ক্রমেই হয়ে উঠছিলেন থ্রেট। তাকে ফেরাতে টম ল্যাথাম বোলিংয়ে এনেছিলেন ম্যাট হেনরিকেও। কিন্তু কাজ হয়নি।
দারুণ ব্যাটিংয়ে তামিম এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভুল এক ডাকে সব শেষ। নিশামের বল দেখেশুনে খেলেছিলেন মুশফিক। বল ছিল উইকেটের একদম কাছে। তামিম রান নেয়ার জন্য কল দেন। মুশফিকও সাড়া দেন। কিন্তু নিশাম নিজের বোলিংয়ে ফিল্ডিং করে তামিমকে রান আউট করেন। পা দিয়ে উইকেট ভাঙেন নিশাম। তামিমের ইনিংসটি শেষ হয় ৭৮ রানে। ১০৮ বলে ১১ চারে ইনিংসটি সাজান তামিম।
মিচেল স্যান্টনারকে মিড অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন মুশফিক। বল গেল হেনরি নিকোলসের হাতে। বৃত্তের ভেতরে থেকে সহজেই ক্যাচ নেন নিকোলস। মুশফিক সাজঘরে ফেরেন ৫৯ বলে ৩৪ রান করে। তামিম আউট হওয়ার পর মুশফিক ও মিথুনের জুটি ছিল ৫১ রানের।
নিশামের ফুলটস বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি তার তৃতীয় ফিফটি, ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয়।
শেষ দিকে রান বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন ছিল আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের। মিথুন একপ্রান্তে চেষ্টা চালালেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি। ৪৮তম ওভারে জেমিসনের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ১৮ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান।
নিজে বেশি কিছু করতে না পারলেও পঞ্চম উইকেটে মিথুনের সঙ্গে জুটি গড়তে বড় ভূমিকা রাখেন রিয়াদ। তাদের ৪২ বলের জুটিতে আসে ৬৩ রান। এরপর বোল্টের বলে নিকোলসের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহেদী হাসান (৭)।
শেষ পর্যন্ত ৭৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মোহাম্মদ মিথুন। এ রান করতে তিনি খেলেছেন মাত্র ৫৭ বল। তার এই ইনিংসটি ৬টি চার এবং ২টি ছয়ে সাজানো ছিল। অন্যপ্রান্তে ৪ বলে ৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন সাইফউদ্দিন।
নিউজ লাইট ৭১