ঢালিউডের ‘তিন কন্যা’
- আপডেট টাইম : ০৬:৪১:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১
- / 92
ঢালিউডের ‘তিন কন্যা’ বলা হয় চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। ষাট-সত্তর-আশি ও নব্বই; এই চার দশক চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাতিয়ে রেখেছিলেন তারা তিন বোন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী সিনেমা। এরমধ্যে ববিতা দেশ ছাড়িয়ে সত্যজিত্ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমা দিয়ে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
তিন বোনের মধ্যে শুধু চম্পাকেই এখন মাঝেমধ্যে সিনেমাতে দেখা গেলেও সুচন্দা ও ববিতাকে দেখা যায় না প্রায় অনেক বছর। প্রায় ১৫ সপ্তাহ ধরে সিনেমা হলে চলছে চম্পা অভিনীত ‘বিশ্ব সুন্দরী’ সিনেমাটি। এছাড়াও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে এই অভিনেত্রীর ‘শান’ সিনেমা; যেটি আসছে ঈদেই মুক্তি পাবে। অন্যদিকে বড় বোন সুচন্দা তার দ্বিতীয় সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন অনেক আগে। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের নামকরা ‘বরফ গলা নদী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিতব্য সিনেমাটির নাম ‘বরফ গলা নদী’। শিগগিরই সেটির নির্মাণ কাজ শুরু করবেন তিনি। অন্যদিকে ববিতা সিনেমা থেকে অনেকটাই দূরে। ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বয়স বাড়ছে। চিত্রময় জীবনের যে কতটা বাক বদল দেখেছেন, সেটা তিনি নিজেই জানেন। এখনকার সময় কাটছে ঘরবন্দী জীবনের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ জার্নালের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছিলো তিন বোনের। এই সময়টাতে তারা কী করছেন, কেমন আছেন জানার জন্য। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় কোহিনূর আক্তার জানান, দুই মাস আগে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। শারীরিক অবস্থা মোটামুটি। অন্য দুই বোন ববিতা ও চম্পা করোনার টিকা নিলেও। নিতে পারেননি সুচন্দা। তার টিকা নেওয়ার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এখন বাসাতেই বিশ্রামে আছেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলছেন। কোথাও বের হচ্ছেন না।
ফরিদা আক্তার পপি অর্থাৎ চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, আমি সবসময়ের মত বাসাতেই আছি। কোথাও যাচ্ছি না। বাসায় ছাদ বাগান রয়েছে সেগুলোর পরিচর্যা এবং পাখিদের সঙ্গেই আমার সময় কেটে যাচ্ছে। এছাড়া ছেলে দেশের বাইরে রয়েছে তার সঙ্গে প্রতিদিন তিনবার করে কথা হচ্ছে। আমার ভাইয়াও দেশের বাইরে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি নিয়মিত। এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে গুলশান আরা আক্তার চম্পা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বাসাতেই সময় কেটে যাচ্ছে সুন্দরভাবে। এখন নতুন করে কোনো কাজ করছি না। এরমধ্যে বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব এলেও ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ, করোনার প্রকোপ দেখে এখন আর কোনো কাজে অংশ নিতে চাই না। যখন একদম স্বাভাবিক হবে তখন হয়তো করবো। এরমধ্যে আমার দুটি ছবির কাজ কিছু বাকি রয়েছে। সেগুলোও শেষ করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি আমার অভিনীত ‘বিশ্ব সুন্দরী’ সিনেমাটি এখনও সিনেমা হলে চলছে, এটা বেশ দারুণ খবর। ছবিটি থেকে ভালো প্রশংসা পেয়েছি। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। এখানে আমি সিয়াম আহমেদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ওর সঙ্গে আরও একটি ছবি রয়েছে আমার ‘শান’। দুইটা ছবির গল্প দুই রকম। দুটি ছবিতেই আমি সিয়ামের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি।
শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠার পরই তার দ্বিতীয় ছবিটি নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছিলেন সুচন্দা। তিনি বলেছিলেন, এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তবে ছবিটি আমি করবো। একটা ফিচার ফিল্ম বানানো তো সহজ কথা নয়, অনেক বড় একটি বিষয়। অনেক টাকা লগ্নির বিষয়। ছবিটা নির্মাণের জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। শুধু একটা ভালো সময়ের অপেক্ষায় আছি। তা নাহলে তো এরকম একটা ছবি করে লস দেওয়ার মত অবস্থা আর নেই। আমি এখনই কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না যে কবে নাগাদ ছবিটা করতে পারবো। এই সময়টাতে ছবিটা বানানোর সাহস করতে পারছি না আমি। সুযোগ সুবিধা মত যখন আমার করার মত অবস্থা দেখতে পাবো তখনই কাজ শুরু করবো।
‘জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলোতে আমি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের অনেকেই তো এখন পৃথিবীতে নেই, তাদের কথা খুব মনে পড়ে। এখনকার সময়ের লোকদের বিভিন্ন কাজ-কর্মের কথা শুনি; দেখা তো আর হয় না, তখন তাদের কথা আরও বেশি বেশি করে মনে পড়ে। যখন কোন কাজ থাকে না, তখন সে সময়গুলোর কথা ভীষণ মনে পড়ে। আর বয়স হওয়ার কারণে কিছু সময় বিভিন্ন অবসাদেও ভুগি।’ কথাগুলো বলছিলেন ষাটের দশকের নন্দিত অভিনেত্রী সুচন্দা।
‘বেহুলা’ খ্যাত এই নায়িকা বলেন, ‘এখনকার সময়ে চলচ্চিত্রকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন, এমন মানুষ হাতে গোনা। আর ইন্ডাস্ট্রিকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেওয়ার মানুষেরও বড়ই অভাব রয়েছে। যারা সত্যিকার অর্থেই চলচ্চিত্রকে ভালোবাসতেন তাদের মতো মানুষ আজ আর ইন্ডাস্ট্রিতে নেই বলেই চলে। খুবই কঠিন সময় পার করছে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সব ধরনের লোক। এমনও লোক আছে একদম বেকার, তাদের কথা ভাবলেও কষ্ট লাগে। এক সময় তারা কত সুন্দরভাবে কাজ করতেন।’
১৯৬৪ সালে কাজী খালেক পরিচালিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে প্রথম অভিনয় করেন সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত তাকে নায়িকা করে নির্মাণ করেন ‘কাগজের নৌকা’। চলচ্চিত্রটি সফল হলে রুপালি জগতে সুচন্দার পথচলা মসৃণ হয়। একই বছর খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান সুচন্দাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘বেহুলা’। চলচ্চিত্রটি বড়মাপের দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়। এরপর আশির দশক পর্যন্ত তিনি অভিনয় করেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং সেরা প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
সত্তর দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন ববিতা। ১৯৭৩ সালে ২৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে গোল্ডেন বীয়ার জয়ী সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। ববিতা ৩৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন ববিতা।
অন্যদিকে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা চম্পা দুই বোনের সঙ্গে ‘তিন কন্যা’ সিনেমায় অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। এরপর তার ক্যারিয়ারে অন্যতম মাত্রা যোগ করে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমাটি। জাতীয় চলচিচত্র পুরস্কারে তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী এবং দুইবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন।
নিউজ লাইট ৭১