ঢাকা ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ১৫ কোটি টাকা জরিমানা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / 76

স্ক্র্যাপ বিক্রির মাধ্যমে আয় বাড়িয়ে দেখানো, কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধি করে করপোরেট পরিচালকের বিপুল পরিমাণের শেয়ার বিক্রির দায়ে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট পাঁচ পরিচালকের (স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে) প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ও করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে এসইসি।

গতকাল এসইসির নিয়মিত সভায় জরিমানার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৮ ও ১৯ সালে মুন্নু গ্রুপভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিক ও মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স লিমিটেডের (পরিবর্তিত নাম মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ লিমিটেড) হঠাৎ করে আয় বাড়িয়ে দেখিয়ে ও শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ানো হয়। এতে মুন্নু গ্রুপের দুই কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি গ্রুপটির করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সম্পৃক্ততাও পায় এসইসি। কারসাজির মাধ্যমে দরবৃদ্ধি করে সে সময়ে মুন্নু গ্রপের ওই দুই কোম্পানির বিপুল পরিমাণের শেয়ার বিক্রি করে করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

বর্তমানে মুন্নু সিরামিকসে সাত জন পরিচালক রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আফরোজা খান, যিনি মুন্নু গ্রুপের উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে। এছাড়া কোম্পানির আরও তিন পরিচালক পদে রয়েছেনÑ হুরুন নাহার রশিদ, রশীদ সামিউল ইসলাম ও রশীদ রাফিউল ইসলাম। এই পরিচালকদের প্রত্যেককেই এক কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

পরিচালকদের মধ্যে মুন্নু সিরামিকসের চেয়ারম্যান আফরোজা খানের হাতে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৬ বা ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক রশীদ মায়মুনুল ইসলাম ও হুরুন নাহার রশিদ যথাক্রমে ২ দশমিক ০১ ও ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। বাকি দুজন- রশীদ সামিউল ইসলাম ও রশীদ রাফিউল ইসলাম মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে পরিচালক। এই ফাউন্ডেশন মোট ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬২টি বা ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ  শেয়ারের মালিক।

১৯৮৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ৩১৭টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।

প্রসঙ্গত, কারসাজির মাধ্যমে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার দর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ ৪৪১ টাকায় উন্নীত করা হয়। স্ক্র্যাপ বিক্রির আয় দেখিয়ে হঠাৎ করেই মুন্নু সিরামিকের প্রান্তিক প্রতিবেদনে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানো হয়। একই ভাবে কারসাজির মাধ্যমে সে সময় মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের শেয়ার দর মাত্র দুই মাসে ১৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়। কারসাজির ফলে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই কোম্পানির শেয়ার দর ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দরবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে সে সময় মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু স্ট্যাফলার্সের বিপুল পরিমাণের শেয়ার বিক্রি করে।

২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কারসাজিতে সম্পৃক্ততার দায়ে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক ধারণকৃত মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুটের শেয়ার ফ্রিজ (শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্ধকসহ সব ধরনের লেনদেন) করার সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি। এছাড়া মুন্নু সিরামিকের শেয়ার লেনদেন, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম ও করপোরেট ঘোষণার মাধ্যমে মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক শেয়ার বিক্রি সংক্রান্ত এসইসির তদন্ত প্রতিবেদন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মুন্নু সিরামিক, মুন্নু ওয়েলফেয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এছাড়া মুন্নু সিরামিকের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে পরবর্তী কার্যদিবস থেকে স্পট মার্কেটে (নগদ টাকায় লেনদেন) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

পরে শেয়ার কারসাজিতে কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে মুন্নু গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের কারখানা ও প্রধান অফিস পরিদর্শন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বর্তমানে মুন্নু গ্রুপের এই দুই কোম্পানির দর ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ১৫ কোটি টাকা জরিমানা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

স্ক্র্যাপ বিক্রির মাধ্যমে আয় বাড়িয়ে দেখানো, কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধি করে করপোরেট পরিচালকের বিপুল পরিমাণের শেয়ার বিক্রির দায়ে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট পাঁচ পরিচালকের (স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে) প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ও করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে এসইসি।

গতকাল এসইসির নিয়মিত সভায় জরিমানার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৮ ও ১৯ সালে মুন্নু গ্রুপভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিক ও মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স লিমিটেডের (পরিবর্তিত নাম মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ লিমিটেড) হঠাৎ করে আয় বাড়িয়ে দেখিয়ে ও শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ানো হয়। এতে মুন্নু গ্রুপের দুই কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি গ্রুপটির করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সম্পৃক্ততাও পায় এসইসি। কারসাজির মাধ্যমে দরবৃদ্ধি করে সে সময়ে মুন্নু গ্রপের ওই দুই কোম্পানির বিপুল পরিমাণের শেয়ার বিক্রি করে করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

বর্তমানে মুন্নু সিরামিকসে সাত জন পরিচালক রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আফরোজা খান, যিনি মুন্নু গ্রুপের উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে। এছাড়া কোম্পানির আরও তিন পরিচালক পদে রয়েছেনÑ হুরুন নাহার রশিদ, রশীদ সামিউল ইসলাম ও রশীদ রাফিউল ইসলাম। এই পরিচালকদের প্রত্যেককেই এক কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

পরিচালকদের মধ্যে মুন্নু সিরামিকসের চেয়ারম্যান আফরোজা খানের হাতে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৬ বা ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক রশীদ মায়মুনুল ইসলাম ও হুরুন নাহার রশিদ যথাক্রমে ২ দশমিক ০১ ও ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। বাকি দুজন- রশীদ সামিউল ইসলাম ও রশীদ রাফিউল ইসলাম মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে পরিচালক। এই ফাউন্ডেশন মোট ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬২টি বা ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ  শেয়ারের মালিক।

১৯৮৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ৩১৭টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।

প্রসঙ্গত, কারসাজির মাধ্যমে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার দর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ ৪৪১ টাকায় উন্নীত করা হয়। স্ক্র্যাপ বিক্রির আয় দেখিয়ে হঠাৎ করেই মুন্নু সিরামিকের প্রান্তিক প্রতিবেদনে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানো হয়। একই ভাবে কারসাজির মাধ্যমে সে সময় মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের শেয়ার দর মাত্র দুই মাসে ১৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়। কারসাজির ফলে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই কোম্পানির শেয়ার দর ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দরবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে সে সময় মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু স্ট্যাফলার্সের বিপুল পরিমাণের শেয়ার বিক্রি করে।

২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কারসাজিতে সম্পৃক্ততার দায়ে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক ধারণকৃত মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুটের শেয়ার ফ্রিজ (শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্ধকসহ সব ধরনের লেনদেন) করার সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি। এছাড়া মুন্নু সিরামিকের শেয়ার লেনদেন, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম ও করপোরেট ঘোষণার মাধ্যমে মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক শেয়ার বিক্রি সংক্রান্ত এসইসির তদন্ত প্রতিবেদন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মুন্নু সিরামিক, মুন্নু ওয়েলফেয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এছাড়া মুন্নু সিরামিকের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে পরবর্তী কার্যদিবস থেকে স্পট মার্কেটে (নগদ টাকায় লেনদেন) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

পরে শেয়ার কারসাজিতে কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে মুন্নু গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের কারখানা ও প্রধান অফিস পরিদর্শন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বর্তমানে মুন্নু গ্রুপের এই দুই কোম্পানির দর ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে।

নিউজ লাইট ৭১