কীভাবে এসেছে এই দিবসটি
- আপডেট টাইম : ০৬:১৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / 84
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস `সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে`। এই দিনটি অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত হয়। দিবসটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে, যদিও অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়। কিন্তু কীভাবে এসেছে এই দিবসটি? অনেকেই হয়তো ভ্যালেন্টাইন’স ডে-এর ইতিহাস জানেন না।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে বসন্ত উৎসব তথা “পহেলা ফাল্গুন” উদযাপিত হয়। তার ঠিক পরের দিনই ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় বিধায় অনেকের কাছেই এই দিবসটি বেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। তবে কখনো কখনো অধিবর্ষের কারণে পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবস একই দিনে পালিত হয়। যেমনটা হচ্ছে চলতি বছর।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে কীভাবে এসেছে এই সম্পর্কে একটি গল্পে জানা যায়, ‘ভ্যালেন্টাইন’ নামে এক কিংবদন্তি তৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের একজন যাজক ছিল। সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সিদ্ধান্ত নেয় যে বিবাহিত পুরুষদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষ, সৈন্য হিসেবে বেশি ভালো।
তাই তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ভ্যালেন্টাইন রাজার অবিচার বুঝতে পেরে গোপনে তরুণ প্রেমিক প্রেমিকাদের বিয়ে দিতে থাকেন। যখন ভ্যালেন্টাইন এর এই কার্য ফাস হয়ে যায় তখন রাজা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু কার্যকর করা হয়। এরপর থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
অন্য এক গল্পে জানা যায়, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন খ্রিস্টান যুবক, যিনি জেল-সুপারের কনিস্ট কন্যার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন, জেল-সুপার ঘটনা জানতে পেরে তাকে ধরে এনে কারাগারে বন্দী করে এবং প্রচন্ড প্রহার করতে থাকে।
কারা রক্ষকদের কঠোর অত্যাচারে ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং মৃত্যুর আগে জেল খানায় বসে তিনি তার প্রেমিকাকে ভালোবাসা জানিয়ে এক খানা চিঠি লিখে যান যা ভ্যালেন্টাইন ডে তে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। যার ফলে এখন সবাই ভালোবাসার মানুষকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানায়।
এছাড়া ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র অন্য একটি ইতিহাস থেকে জানা যায়, বহু বছর আগে রোমে বিয়ে এবং সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে দুইটি উৎসব প্রথা চালু ছিল। এর অন্যতম উৎসব ছিল লুপারকালিয়া। উৎসবটি হত ১৫ ফেব্রুয়ারি।
এ উৎসবের কারণে দেবতা লুপারকাস রোম শহর নেকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন। উৎসবে তরুণরা প্রায় নগ্ন হয়ে উল্লাস করত এবং নবনিবাহিতাকে চাবুক দিয়ে পেটাত। তরুণরা মনে করত এতে সন্তান উৎপাদন সহজ হবে।
এর আগের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি তরুণ-তরুণীরা লটারি করে তাদের নাচের পার্টনার নির্বাচন করতো। ৪শ’ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ২ দিনের উৎসবকে কমিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি এক দিনের উৎসব নির্ধারণ করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমানরা বক্সের ভেতর নাম রেখে লটারি করে তাদের প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে বেছে নিত। তাই এ দিনটি তাদের কাছে পার্টনার বেছে নেয়ার দিন।
আবার অনেকের ধারণা, ১৪ ফেব্রুয়ারি পাখিরা তাদের পার্টনার বেছে নেয়। ফলে এ দিনটি ভালোবাসা দিবসের জন্য উপযুক্ত। ১৭শ’ সালের দিকে ইংরেজ নারীরা কাগজে তাদের পরিচিত পুরুষের নাম লিখে কাদামাটি মিশিয়ে পানিতে ছুড়ে মারত। যার নাম প্রথমে ভেসে উঠত সে-ই হত প্রকৃত প্রেমিক। মূলত এসব ঘটনাকে সামনে রেখেই বিশ্বে ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
অবশ্য বর্তমান যুগে ভালোবাসা দিবসকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কৃতিত্বটা শুভেচ্ছা কার্ড তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান হলমার্কের। ১৯১৩ সাল থেকে হলমার্ক যখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে হাজার হাজার কার্ড তৈরি শুরু করে, মূলত তখন থেকেই দিবসটির কথা ব্যাপকভাবে প্রচার পায় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে।
এদিকে বাংলাদেশেও বর্তমানে এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” নামে এটি পালিত হয়।
নিউজ লাইট ৭১