বৃটেনে বাড়ি-ঘরের দাম বাড়ছে হু হু করে
- আপডেট টাইম : ০৬:০৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / 86
করোনাভাইরাস মহামারী সত্ত্বেও বৃটেনে বাড়ি-ঘরের দাম বাড়ছে হু হু করে। শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক ধসের মুখে পড়া সত্ত্বেও হাউজিং মার্কেটের এই চিত্র সামগ্রিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদি করছে অর্থনীতির গবেষকদের।
মহামারী মোকাবেলায় গত বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ঘোষিত দেশব্যাপি লকডাউন পর আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যে ঘরের দাম ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়েছে।
এদিকে, চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের এই মর্মে সতর্ক করেছেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আসন্ন বাজেট নিয়ে মিডিয়া নানা ধরনের সম্ভাবনার কথা চাউর হওয়ার প্রেক্ষাপটে চ্যান্সেলর বলেন, ট্যাক্স বা কর বাড়ানোর মাত্রাটা ভয়ংকর হবে না।
মহামারী জনিত অর্থনৈতিক সংকটকে অস্বীকার করে একটি বাড়ির গড় মূল্য নতুন রেকর্ডে উন্নীত হয়েছে। বাড়ি ঘরের জোরালো চাহিদার কারণেই মূল্য বৃদ্ধির এই ধারা সৃষ্টি হয়েছে।
ন্যাশনওয়াইড বিল্ডিং সোসাইটির তথ্য অনুযায়ি, গত বছর আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যে একটি বাড়ির গড় মূল্য উন্নীত হয়েছে ২২৪, ১২৩ পাউন্ডে, যা নতুন রেকর্ড। এই এক মাসে মূল্য বেড়েছে ২ শতাংশ হারে। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়েও গত আগস্ট মাসের মূল্য বৃদ্ধির হার অনেক দ্রুতগতির।
রেকর্ড শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে গভীর মন্দায় ভুগলেও মহামারীজনিত লকডাউন সহ নানা বিধিনিষেধ সত্বেও গত এক বছরে বাড়ি ঘরের দাম বেড়েছে ৩.৭ শতাংশ। চলতি ১২ মাসের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বের হয়ে আসা, মধ্যবর্তী নির্বাচনের অনিশ্চয়তা সহ নানা সংকটে ছিলো দেশ।
তবে, বাড়ি ঘরের মূল্য পতন রোধে অনেকগুলো পদক্ষেপ কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে চাহিদা নিয়ন্ত্রিত থাকা এবং চ্যান্সেলর রিশি সুনাকের স্টাম্প ডিউটি হলিডে ঘোষণা, যার অর্থ হলো ইংল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ডের ক্রেতাদের ২০২১ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ লাখ পাউন্ডের কম মূল্যের কোনো বাড়ি কিনতে কোনোরূপ টেক্স দিতে হবে না। স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের ক্ষেত্রে পৃথক হার ও থ্রেশহোল্ড প্রযোজ্য।
ইউকের সর্ববৃহত্তম বাড়ি নির্মাণ কোম্পানী ব্যার্যাট ডেভেলপমেন্ট গত অর্থ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪৬ শতাংশ কম মুনাফা করেছে। তবে কোম্পানীর চীফ এক্সিকিউটিভ ডেভিড টমাস আগামী অর্থবছর সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন সময়কালে বাড়ি ঘরের অত্যন্ত জোরালো চাহিদা ছিলো। এসময় ১৫ হাজার ৬৬০টি বাড়ি অর্ডার তারা পান, যা গত অর্থ বছরের তুলনায় বেশি।
ন্যাশনওয়াইডের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবার্ট গার্ডনার বলেছেন, লকডাউন নিষেধাজ্ঞা হ্রাস করার পর থেকে আবাসন মার্কেটের উত্থান অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি ক্রেতাদের ‘ঘরে থেকে কাজ করার’ মতো আচরণ গত পরিবর্তনকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে বলেন, ‘ঘরে বসে কাজ করার’ সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে ক্রেতারা সুপরিসর রুমের বাড়ি ঘরের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি জানান, ন্যাশনওয়াইড এর এক জরিপে অংশ নেয়া ১৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, লকডাউনের ফল হিসেবে তারা ঘর পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করছেন।
বৃটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক তাঁর আসন্ন বাজেটে ৩০ বিলিয়ন পাউন্ডের করের বোঝা আরোপ করতে চলেছেন বলে মিডিয়ায় জোর গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারীর কারণে দেশের ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ২ ট্রিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে গেছে।
যদিও এই বাজেট ঘোষনার আরো অনেক সপ্তাহ বাকি রয়েছে, তারপরও ক্ষমতাসীন পার্টির মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই তিব্র আকার ধারন করছে।
ওয়ার্ক এন্ড পেনশন সেক্রেটারী ট্রেসা কফি বলেছেন, চ্যান্সেলরের উচিত হবে কর বৃদ্ধি নয়, কর হ্রাস করা। লেবার পার্টিও বলছে, যেকোন ধরনের কর বৃদ্ধিকে তারা সমর্থন করবে না।
এদিকে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারের সাথে সাক্ষাত করার অঙ্গিকার করেও শেষ মূহুর্তে তা বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
মহামারী মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি নিয়ে শোকাহত পরিবারের একটি গ্রুপ প্রধান মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী রাজীও হয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহুর্তে তিনি তাদের সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট।
নিউজ লাইট ৭১