আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের আর্জি
- আপডেট টাইম : ০৭:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / 111
দেশে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধ এবং ভিডিও সরাতে করা রিটের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মতামত জানতে ছয়জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতকে আইনগত মতামত দিয়ে সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
অ্যামিকাস কিউরি হওয়া ছয় আইনজীবী হলেন- সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, কামাল উল আলম, আব্দুল মতিন খসরু, ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও ড. শাহদীন মালিক।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় তাদের মতামত শুনবে আদালত।
আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে আদালতে করা রিট গ্রহণযোগ্য কি না, রিটকারী এভাবে রিট করতে পারেন কি না, আদালত সম্প্রচার বন্ধে কোন আদেশ দিতে পারে কি না- এসব বিষয়ে ছয় আইনজীবীকে আইনগত মতামত দিতে হবে।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী এবং বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজা ই রাকিব।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন সোমবার বাদী হয়ে এ রিট করেন। আবেদনে চ্যানেলটিতে প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার ও ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
রিটের শুনানিতে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. মজিবুর রহমান মিয়া বলেন, সুনির্দিষ্ট আইন ও কর্তৃপক্ষ থাকার পরেও গত দশ দিনে কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ওই ভিডিও অপসারণ করা গেল না? এখন তো দেশ ও বিদেশের কোটি কোটি লোক এটা প্রত্যক্ষ করেছে। এখন এটা বন্ধ বা অপসারণ করা না করা একই কথা।
তিনি বলেন, বিটিআরসি যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে না পারে, তাহলে তারা ওখানে বসে আছে কেন?
বিটিআরসির আইনজীবী রেজা ই রাকিব তখন বলেন, আদালত আদেশ দিয়ে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি প্রচার না করা হয়, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আদালত আদেশ দিতে পারে, যেমনটা নোয়াখালীর এক নারীর নির্যাতনের ঘটনায় দেওয়া হয়েছিল। আর দেশের মধ্যে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, বিটিআরসির উচিত ছিল পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে।
রিট আবেদনকারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- আল-জাজিরায় সম্প্রচারিত তথ্যচিত্রে তিনি কীভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে রিট আবেদনের আগে সংশ্লিষ্টদের উকিল নোটিস দেওয়া হয়েছিল কিনা এবং এই রিটকে তিনি ‘জনস্বার্থে’ বলছেন কীভাবে।
জবাবে রিটকারী আইনজীবী এম এনামুল কবির ইমন বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে এই রিট করা হয়েছে।
আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সরকারিভাবে এ প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এ প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আল জাজিরা টিভি নেটওয়ার্কের ওই প্রতিবেদনটিকে অসত্য ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, আল জাজিরায় প্রচারিত ও প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদরদপ্তর।
এদিকে, আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
সম্প্রতি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আইনি পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করব। আমরা এটি খতিয়ে দেখব। যেখানে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি। দেখা যাক।
মন্ত্রী জানান, তারা শুনেছেন যে আল জাজিরা টাকা নিয়ে এই কাজটি করেছে।
মিথ্যা সংবাদ প্রচারের জন্য তারা (আল জাজিরা) বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক, বলেন তিনি।
ড. মোমেন আরও বলেন, আল জাজিরার এ জাতীয় একটি প্রতিবেদন করা অনুশোচনীয় এবং এ জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
চ্যানেলটি মুসলিম দেশগুলোকে টার্গেট করে সংবাদ প্রচার করে- এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা বাংলাদেশের অর্জন পছন্দ করে না। এটি ঈর্ষা।
বাংলাদেশ চ্যানেলটি বন্ধ করে দেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন জানান, এমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই কারণ বিশ্ব উন্মুক্ত।
তবে আমরা আশা করি আল জাজিরা আরও দায়িত্বশীল হবে, বলেন তিনি।
নিউজ লাইট ৭১