ভেজাল মদ পানে অনেকের মৃত্যু
- আপডেট টাইম : ০৭:১৪:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / 99
সম্প্রতি ভেজাল মদ পানে বেশকিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ এক বগুড়া জেলায় মদ পানে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ভেজাল মদ পানে অনেকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায় ভেজাল মদের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর প্রশ্ন এসেছে, ভেজাল মদ পানে এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে; তাহলে এসব পানীয় তৈরি হচ্ছে কীভাবে?
এবার সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দারুণ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, স্পিরিটের সঙ্গে ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে রাজধানীতে তৈরি হচ্ছে ভেজাল মদ। এরই মধ্যে রাজধানীতে ভেজাল মদ তৈরিতে যুক্ত কয়েকজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকার ভাটারা এলাকায় সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভেজাল মদের একটি কারখানায় পুলিশের অভিযানের তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ারহাউসগুলো থেকে মদ কেনায় কড়াকড়ি আরোপের কারণে বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে ঢুকে পড়েছে ভেজাল মদ, আর তা তৈরিতে কারখানাও গড়ে তোলা হয়েছে। ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেক এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ওই কারখানা ভেজাল মদ তৈরির সন্ধান মেলে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ (৩৫), রেদুয়ান উল্লাহ (৩৫), সাগর বেপারী (২৭), নাসির আহমেদ রুহুল (৪৮), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও সৈয়দ আল আমিন (৩০) নামে ছয়জনকে।
বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদসহ, মদ তৈরির নানা সরঞ্জাম, মদের পুরনো বোতলও পাওয়া যায় সেখানে।
এই প্রসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, এই কারখানার মালিক নাসির আহমেদ রুহুল, ‘ম্যানেজার’ সৈয়দ আল আমিন এবং ‘চিফ কেমিস্ট’ জাহাঙ্গীর আলম।
তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের বাড়ি চাঁদপুরে। একসময় ভাঙারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিডফোর্ডে বিক্রি করাই তার কাজ ছিল।
তিনি বলেন, পড়ালেখা না জানা এই জাহাঙ্গীরই তিন মাস ধরে কারখানাটিতে ভেজাল মদ তৈরি করছিলেন। এজন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা পেতেন বলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের এ উপকমিশনার আরও বলেন, এই ভাঙারি দোকানদার চড়ামূল্যে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দিত মদ নামক বিষ। তারা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রং সংগ্রহ করে, চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে নকল মদ তৈরি করতো। এই চক্রের ‘হোতা’ নাসির দীর্ঘদিন ধরেই মদ বিক্রি করে আসছিল। ‘ম্যানেজার’ আল আমিন বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার মাধ্যমে সেবনকারী পর্যায়ে বিক্রি করত।
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ নকল বিদেশি মদ, খালি মদের বোতল, মদের বোতল আটকানোর ছিপি, স্টিকার, স্পিরিট, কৃত্রিম রঙ, সিলগালার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ভেজাল মদ পানে এক ব্যক্তির মৃত্যুর সূত্র ধরে এই কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়। মৃত ওই ব্যক্তি মদ পেয়েছিলেন কীভাবে, তা একটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর বিক্রেতাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে পুলিশ।
তারা জানান, রেদুয়ান এবং মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ মোটরসাইকেল যোগে ২৮ জানুয়ারি ১ বোতল মদ দিয়ে গিয়েছিল ওই ব্যক্তিকে, যা এই কারখানায় অবৈধভাবে কৃত্রিম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। এরপর রেদুয়ান ও মনতোষের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকেন গোয়েন্দারা। পরে সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তেজগাঁওর একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁর সামনে থেকে তাদের এবং সাগর বেপারীকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারার বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে নকল মদের কারখানা পাওয়া যায়।
নিউজ লাইট ৭১