ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাঁচি, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা থেকে অনেক সময় কানে তালা লাগার ঘটনা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১
  • / 76

হাঁচি, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা থেকে অনেক সময় কানে তালা লাগার ঘটনা ঘটে। অনেকেই কানে তালা লাগার বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে থাকেন কিন্তু এটি মোটেও তা নয়। কানে তালা লাগার এ অবস্থা দ্রুত মধ্যকর্ণে অর্থাৎ কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ বা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। কানে তালা মানে কান বন্ধ হয়ে থাকা, কিছু না শোনা।

যদিও বিষয়টি ওষুধের মাধ্যমে কমে যায়; তবে কানের এই সমস্যা একেবারে হালকা নয়। কানের পর্দা আমাদের কানকে বহিঃকর্ণে ও মধ্যকর্ণে বিভক্ত করে। এই রোগে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ হতে পারে, যাকে সংক্ষেপে বলে ঙ.গ.ঊ। মধ্যকর্ণের প্রদাহ বিভিন্ন রূপ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। কখনো মধ্যকর্ণে সামান্য তরল পদার্থের উপস্থিতি, কখনো মধ্যকর্ণে পুঁজ সৃষ্টি, আবার মধ্যকর্ণে পুঁজ হয়ে কানের পর্দা হয়ে সেই পুঁজ কান দিয়ে বেরিয়ে আসার মাধ্যমেও এই রোগের প্রকাশ ঘটতে পারে।

কেন কানে তালা লাগে-বন্ধ হয়ে যায় : অডিটরি টিউব যা নাকের সঙ্গে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপন করে।  কোনো কারণে এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা ঠিকমতো কাজ না করলে মধ্যকর্ণে পানি জমে প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত হাঁচি, সর্দি-কাশি বা ঠাণ্ডা লাগার কারণে কানের সঙ্গে নাক এবং গলার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সাময়িক বন্ধ থাকে। ফলে মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাসনালির ওপরের অংশে জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহ আপনার কানের সমস্যার কারণ হতে পারে। এ জন্য সর্দি ও সাইনোসাইটিস জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসা নিন। না হলে মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয়ে ফুলে গিয়ে পানি জমতে পারে।

কাদের এ সমস্যা হতে পারে : সাধারণত স্কুলগামী বাচ্চাদের এই সমস্যা বেশি দেখা গেলেও যেকোনো বয়সের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। যেসব বাচ্চার নাক ডাকার অভ্যাস আছে, তাদের মধ্যকর্ণে পানি জমা হতে পারে। এ রোগের উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর (Risk Factor) মধ্যে রয়েছে—

১. ঘন ঘন ঊর্ধ্বশ্বাসনালির সংক্রমণ (URTI) ; যেমন : সর্দি-কাশি-নাক বন্ধ।

২. প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস,

৩. ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন,

৪. শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া,

৫. নাকের হাড় বাঁকা-ক্রনিক সাইনোসাইটিসের সমস্যা,

৬. ভাইরাল ইনফেকশন।

৭. এ ছাড়া নাকের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংস (Nasopharynx) নামক স্থানে কোনো টিউমার হলে।

লক্ষণ কী-রোগী কী কী কষ্ট অনুভব করে—

* মধ্যকর্ণে পানি জমা হয়ে প্রদাহ হলে সর্দি-কাশির সঙ্গে হঠাৎ কান বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে একে কানে তালি দেয়া বলে অভিহিত করেন।

* হঠাৎ কানে বেশ ব্যথা মনে হয়।

* কানের মধ্যে ফড়ফড় করে এবং ভোঁ ভোঁ শব্দ হয় (Tinnitus)।

* কানে কম শোনা যায়।

* ইনফেকশন বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্ত মিশ্রিত পানির মতো পড়ে কিংবা পুঁজ পড়ে।

এ রকম সমস্যা দেখা দিলে জটিলতার আগেই একজন নাক-কান-গলা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন বর্তমানে কানের পর্দার অবস্থা কী রকম, পর্দা কি ফুটো হয়েছে, না হয়নি।

এ ধরনের রোগে চিকিৎসক কান পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত অ্যান্টি-হিস্টামিন; বয়স উপযোগী নাকের ড্রপ; প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। আর যদি আপনি চুইংগাম খেতে পছন্দ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতে চুইংগাম মুখে নিয়ে চিবাতে থাকুন আয়েশ করে। এটি চিকিৎসার অংশ হিসেবে কানের বন্ধভাব দূর করার খুব দ্রুত এবং সহজতর পদ্ধতি।

ওষুধের চিকিৎসার পরও যদি ১২ সপ্তাহে সমস্যার সমাধান না হয়, তবে নাক-কান-গলা সার্জনরা একটি ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ফুটো করে তরল পদার্থ বের করে থাকেন। যার নাম মাইরিংগোটমি  (Myringotomy)। সুতরাং এ ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করবেন না। সুস্থ থাকুন জীবনকে উপভোগ করুন।

লেখক : নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ ( প্রেষণে), ঢাকা; এক্স সহকারী রেজিস্ট্রার, সিওমেক হাসপাতাল

Tag :

শেয়ার করুন

হাঁচি, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা থেকে অনেক সময় কানে তালা লাগার ঘটনা

আপডেট টাইম : ০৪:৪৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১

হাঁচি, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা থেকে অনেক সময় কানে তালা লাগার ঘটনা ঘটে। অনেকেই কানে তালা লাগার বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে থাকেন কিন্তু এটি মোটেও তা নয়। কানে তালা লাগার এ অবস্থা দ্রুত মধ্যকর্ণে অর্থাৎ কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ বা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। কানে তালা মানে কান বন্ধ হয়ে থাকা, কিছু না শোনা।

যদিও বিষয়টি ওষুধের মাধ্যমে কমে যায়; তবে কানের এই সমস্যা একেবারে হালকা নয়। কানের পর্দা আমাদের কানকে বহিঃকর্ণে ও মধ্যকর্ণে বিভক্ত করে। এই রোগে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ হতে পারে, যাকে সংক্ষেপে বলে ঙ.গ.ঊ। মধ্যকর্ণের প্রদাহ বিভিন্ন রূপ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। কখনো মধ্যকর্ণে সামান্য তরল পদার্থের উপস্থিতি, কখনো মধ্যকর্ণে পুঁজ সৃষ্টি, আবার মধ্যকর্ণে পুঁজ হয়ে কানের পর্দা হয়ে সেই পুঁজ কান দিয়ে বেরিয়ে আসার মাধ্যমেও এই রোগের প্রকাশ ঘটতে পারে।

কেন কানে তালা লাগে-বন্ধ হয়ে যায় : অডিটরি টিউব যা নাকের সঙ্গে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপন করে।  কোনো কারণে এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা ঠিকমতো কাজ না করলে মধ্যকর্ণে পানি জমে প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত হাঁচি, সর্দি-কাশি বা ঠাণ্ডা লাগার কারণে কানের সঙ্গে নাক এবং গলার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সাময়িক বন্ধ থাকে। ফলে মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাসনালির ওপরের অংশে জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহ আপনার কানের সমস্যার কারণ হতে পারে। এ জন্য সর্দি ও সাইনোসাইটিস জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসা নিন। না হলে মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয়ে ফুলে গিয়ে পানি জমতে পারে।

কাদের এ সমস্যা হতে পারে : সাধারণত স্কুলগামী বাচ্চাদের এই সমস্যা বেশি দেখা গেলেও যেকোনো বয়সের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। যেসব বাচ্চার নাক ডাকার অভ্যাস আছে, তাদের মধ্যকর্ণে পানি জমা হতে পারে। এ রোগের উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর (Risk Factor) মধ্যে রয়েছে—

১. ঘন ঘন ঊর্ধ্বশ্বাসনালির সংক্রমণ (URTI) ; যেমন : সর্দি-কাশি-নাক বন্ধ।

২. প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস,

৩. ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন,

৪. শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া,

৫. নাকের হাড় বাঁকা-ক্রনিক সাইনোসাইটিসের সমস্যা,

৬. ভাইরাল ইনফেকশন।

৭. এ ছাড়া নাকের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংস (Nasopharynx) নামক স্থানে কোনো টিউমার হলে।

লক্ষণ কী-রোগী কী কী কষ্ট অনুভব করে—

* মধ্যকর্ণে পানি জমা হয়ে প্রদাহ হলে সর্দি-কাশির সঙ্গে হঠাৎ কান বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে একে কানে তালি দেয়া বলে অভিহিত করেন।

* হঠাৎ কানে বেশ ব্যথা মনে হয়।

* কানের মধ্যে ফড়ফড় করে এবং ভোঁ ভোঁ শব্দ হয় (Tinnitus)।

* কানে কম শোনা যায়।

* ইনফেকশন বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্ত মিশ্রিত পানির মতো পড়ে কিংবা পুঁজ পড়ে।

এ রকম সমস্যা দেখা দিলে জটিলতার আগেই একজন নাক-কান-গলা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন বর্তমানে কানের পর্দার অবস্থা কী রকম, পর্দা কি ফুটো হয়েছে, না হয়নি।

এ ধরনের রোগে চিকিৎসক কান পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত অ্যান্টি-হিস্টামিন; বয়স উপযোগী নাকের ড্রপ; প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। আর যদি আপনি চুইংগাম খেতে পছন্দ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতে চুইংগাম মুখে নিয়ে চিবাতে থাকুন আয়েশ করে। এটি চিকিৎসার অংশ হিসেবে কানের বন্ধভাব দূর করার খুব দ্রুত এবং সহজতর পদ্ধতি।

ওষুধের চিকিৎসার পরও যদি ১২ সপ্তাহে সমস্যার সমাধান না হয়, তবে নাক-কান-গলা সার্জনরা একটি ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ফুটো করে তরল পদার্থ বের করে থাকেন। যার নাম মাইরিংগোটমি  (Myringotomy)। সুতরাং এ ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করবেন না। সুস্থ থাকুন জীবনকে উপভোগ করুন।

লেখক : নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ ( প্রেষণে), ঢাকা; এক্স সহকারী রেজিস্ট্রার, সিওমেক হাসপাতাল