ঢাকা ০৮:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামিনের আসামি পালানোর শঙ্কা আর থাকছে না

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১
  • / 88

জামিনের আসামি পালানোর শঙ্কা আর থাকছে না। শিগগিরই শেষ হচ্ছে ডাটাবেজ (ডিজিটাল তালিকা) তৈরির কাজ। দেশে মোট ৬৮টি কারাগারের মধ্যে অন্তত ৪০টিতে শেষ হয়েছে ডাটাবেজের কাজ। বাকিগুলোতেও দ্রুত গতিতে চলছে তথ্যসংযুক্তির কার্যক্রম। সব কাজ শেষ হলে এক ক্লিকেই বেরিয়ে আসবে আসামির বিগত অপরাধের তথ্য। জানা যাবে কোন বন্দি কোন কারাগারে আছে, তার অপরাধের ধরন, কী কারণে কারাগারে যেতে হলো, মামলার সংখ্যা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আদালতে হাজিরার তারিখসহ যাবতীয় তথ্য। ওই বন্দি কতদিন ও কতবার জেল খেটেছে তার তথ্যও থাকবে ডাটাবেজে। এক্ষেত্রে শুধু দাগি অপরাধী কিংবা দীর্ঘদিন কারাবন্দিই নয়, এক দিনের জন্যও কারাগারে গেলে তার তথ্যও থাকবে। এ ডাটাবেজ সংযুক্ত হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে। ফলে অপরাধীরা কোনোভাবেই আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে যেতে পারবে না বিদেশ। গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে পারবে না দেশেও। মুখচ্ছবি পরিবর্তন করলেও বিশেষ প্রক্রিয়ায় শনাক্ত করা যাবে তাকে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তত্ত্বাবধানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব এ ডাটাবেজ তৈরিতে কাজ করছে।

দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। নিয়মিত বন্দির সংখ্যা এখন ৮০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করে। ডাটাবেজে বন্দির ছবি, বায়োমেট্রিক ছাপ, চোখের মণির স্ক্যান ও আগের অপরাধের রেকর্ডসহ সব তথ্য থাকবে। ফলে আসামি শনাক্তে আগের মতো বেগ পোহাতে হবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। স্বচ্ছতা আসবে বন্দির নিরাপদ আটকের বিষয়ে।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা কারাগারে গেছে, তাদেরও নজরদারিতে রাখা সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডাটাবেজ বাস্তবায়িত হলে তথ্য-পরিচয় গোপন করে দাগি অপরাধীদের কোনো সংস্থায় চাকরি নেওয়ার পথ রুদ্ধ হবে বলে। প্রত্যেক কারাবন্দির আলাদা প্রোফাইল তৈরি হবে এতে। এতে কোন বন্দির জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেটাও সহজে জানানো যাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

কারা অধিদফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের জুন থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং গাজীপুর জেলা কারাগারে পাইলট ভিত্তিতে কারাবন্দিদের ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) আর্থিক সহযোগিতায় বায়োমেট্রিক তথ্য সংবলিত এ ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। ওই বছরের (২০১৯) ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং গাজীপুর জেলা কারাগারে পাইলট প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর কিছুদিন পর ডাটাবেজ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে এনটিএমসি। অবশ্য র‌্যাব ২০১৬ সালেই নিজস্ব উদ্যোগে অপরাধীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘র‌্যাব-প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল। তবে নানা জটিলতায় বাস্তবায়ন হয়নি সেটি।

ডাটাবেজ প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫টি কারাগারে কাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত শেষ হবে। এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, ডাটাবেজের কাজ চলছে দ্রুত। আশা করছি তিন মাসের মধ্যে শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষ জেলে গেলেই অপরাধী হয়ে যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিচারের মাধ্যমে কেউ অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত না হবে, ততক্ষণ কিন্তু সে অপরাধী নয়। তাই এ ডাটাবেজে নাম থাকা মানেই ওই ব্যক্তি অপরাধী নয়। অনেক দেশেই প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব মানুষকে আটক বা গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়, তাদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়। তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ দেশের অন্যান্য যত ডাটাবেজ আছে, সবর সঙ্গেই আমাদের সংযোগ আছে। সেগুলোর সঙ্গে এই ডাটাবেজেরও সংযোগ থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব অধিদফতরকেই ডিজিটালাইজড করার কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে কারাবন্দিদের এই ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। আশা করি এটি ভালো ফল বয়ে আনবে।

নিউজ লাইট ৭১ whatsapp sharing button

Tag :

শেয়ার করুন

জামিনের আসামি পালানোর শঙ্কা আর থাকছে না

আপডেট টাইম : ০৩:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১

জামিনের আসামি পালানোর শঙ্কা আর থাকছে না। শিগগিরই শেষ হচ্ছে ডাটাবেজ (ডিজিটাল তালিকা) তৈরির কাজ। দেশে মোট ৬৮টি কারাগারের মধ্যে অন্তত ৪০টিতে শেষ হয়েছে ডাটাবেজের কাজ। বাকিগুলোতেও দ্রুত গতিতে চলছে তথ্যসংযুক্তির কার্যক্রম। সব কাজ শেষ হলে এক ক্লিকেই বেরিয়ে আসবে আসামির বিগত অপরাধের তথ্য। জানা যাবে কোন বন্দি কোন কারাগারে আছে, তার অপরাধের ধরন, কী কারণে কারাগারে যেতে হলো, মামলার সংখ্যা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আদালতে হাজিরার তারিখসহ যাবতীয় তথ্য। ওই বন্দি কতদিন ও কতবার জেল খেটেছে তার তথ্যও থাকবে ডাটাবেজে। এক্ষেত্রে শুধু দাগি অপরাধী কিংবা দীর্ঘদিন কারাবন্দিই নয়, এক দিনের জন্যও কারাগারে গেলে তার তথ্যও থাকবে। এ ডাটাবেজ সংযুক্ত হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে। ফলে অপরাধীরা কোনোভাবেই আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে যেতে পারবে না বিদেশ। গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে পারবে না দেশেও। মুখচ্ছবি পরিবর্তন করলেও বিশেষ প্রক্রিয়ায় শনাক্ত করা যাবে তাকে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তত্ত্বাবধানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব এ ডাটাবেজ তৈরিতে কাজ করছে।

দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। নিয়মিত বন্দির সংখ্যা এখন ৮০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করে। ডাটাবেজে বন্দির ছবি, বায়োমেট্রিক ছাপ, চোখের মণির স্ক্যান ও আগের অপরাধের রেকর্ডসহ সব তথ্য থাকবে। ফলে আসামি শনাক্তে আগের মতো বেগ পোহাতে হবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। স্বচ্ছতা আসবে বন্দির নিরাপদ আটকের বিষয়ে।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা কারাগারে গেছে, তাদেরও নজরদারিতে রাখা সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডাটাবেজ বাস্তবায়িত হলে তথ্য-পরিচয় গোপন করে দাগি অপরাধীদের কোনো সংস্থায় চাকরি নেওয়ার পথ রুদ্ধ হবে বলে। প্রত্যেক কারাবন্দির আলাদা প্রোফাইল তৈরি হবে এতে। এতে কোন বন্দির জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেটাও সহজে জানানো যাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

কারা অধিদফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের জুন থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং গাজীপুর জেলা কারাগারে পাইলট ভিত্তিতে কারাবন্দিদের ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি) আর্থিক সহযোগিতায় বায়োমেট্রিক তথ্য সংবলিত এ ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়। ওই বছরের (২০১৯) ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং গাজীপুর জেলা কারাগারে পাইলট প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর কিছুদিন পর ডাটাবেজ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে এনটিএমসি। অবশ্য র‌্যাব ২০১৬ সালেই নিজস্ব উদ্যোগে অপরাধীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘র‌্যাব-প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল। তবে নানা জটিলতায় বাস্তবায়ন হয়নি সেটি।

ডাটাবেজ প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫টি কারাগারে কাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত শেষ হবে। এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, ডাটাবেজের কাজ চলছে দ্রুত। আশা করছি তিন মাসের মধ্যে শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষ জেলে গেলেই অপরাধী হয়ে যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিচারের মাধ্যমে কেউ অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত না হবে, ততক্ষণ কিন্তু সে অপরাধী নয়। তাই এ ডাটাবেজে নাম থাকা মানেই ওই ব্যক্তি অপরাধী নয়। অনেক দেশেই প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব মানুষকে আটক বা গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়, তাদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়। তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ দেশের অন্যান্য যত ডাটাবেজ আছে, সবর সঙ্গেই আমাদের সংযোগ আছে। সেগুলোর সঙ্গে এই ডাটাবেজেরও সংযোগ থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব অধিদফতরকেই ডিজিটালাইজড করার কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে কারাবন্দিদের এই ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। আশা করি এটি ভালো ফল বয়ে আনবে।

নিউজ লাইট ৭১ whatsapp sharing button