ঢাকা ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস পরিচয়

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০
  • / 77

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস পরিচয় দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) চাকরির তদ্বির করতে গিয়ে মেহাম্মদ মোজাম্মেল হক ইয়াছিন (৩৩) নামে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান।

গ্রেপ্তার মেহাম্মদ মোজাম্মেল হক ইয়াছিন ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তোলা ছবি কয়েকদিন পর পর নিজের ফেসবুকে প্রচার করতেন ইয়াছিন। ক্যাপশনে লিখতেন ‘ভালোবাসার শেষ ঠিকানা’। ফেসবুক আইডি’র কভার ফটোতেও দীর্ঘদিন ধরে সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি রেখেছেন তিনি। ছবি প্রচার করে জানান দিতেন মন্ত্রীর সঙ্গে তার দারুণ সখ্য আছে। 

এছাড়াও পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারি আরো অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলেও ফেসবুকে প্রচার করতেন অভিযুক্ত। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে পরিচয় দিতেন সেতুমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে। আর এই পরিচয় দিয়ে ভাগিয়ে নিতেন চাকরি, টেন্ডার, বিভিন্ন পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তার পোস্টিং। এছাড়া মন্ত্রীর স্বাক্ষর, সিল জাল করেও নানা প্রতারণা করতেন তিনি।

মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, ইয়াছিন গত ২১ ডিসেম্বর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এসে অস্থায়ী কার্য সহকারী পদে মাঈন উদ্দিন নামে একজনের চাকুরির দরখাস্ত জমা দেন। দরখাস্তে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশ রয়েছে। দরখাস্ত জমা দেওয়ার সময় ইয়াছিন নিজেকে মন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দেন।

এলজিইডির সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদ ইমাম মোরশেদ বলেন, দরখাস্ত পাওয়ার পর মন্ত্রীর সুপারিশ দেখে তাদের সন্দেহ হয়। তাছাড়া দরখাস্ত জমা দেওয়ার পর ইয়াছিন নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য এপিএস পরিচয় দিয়ে বার বার ফোন করছিলেন।

এরপর বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে জানানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ দুই দিন তদন্ত করে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে। এই ব্যক্তিই সেই ইয়াছিন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে তাদের অফিসে আনা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাইফুর বলেন, ইয়াছিন সেতুমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে এলজিইডিতে একজনের চাকুরির তদ্বির করা ছাড়াও নিজেকে এই মন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে ফায়ার সার্ভিসে একটি বড় অংকের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। এপিএস পরিচয়ের পাশপাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিচয় দিতেন, যা ঠিক নয়। তবে সে ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তার বাড়ি নেত্রকোণায় হলেও কামরাঙ্গীরচরের জাউলহাটি চৌরাস্তায় একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে শেরে বাংলানগর থানায় একটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর একান্ত সচিব গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা ফোন করে গতকাল (বুধবার) দুপুরে ওই প্রতারকের বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা ওই কর্মকর্তাকে বলেছি মোজাম্মেল হক ইয়াছিন নামে স্যারের (সেতুমন্ত্রী) কোনো এপিএস নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন তাদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটিও আমরা বলেছি।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস পরিচয়

আপডেট টাইম : ০৬:৩২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস পরিচয় দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) চাকরির তদ্বির করতে গিয়ে মেহাম্মদ মোজাম্মেল হক ইয়াছিন (৩৩) নামে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান।

গ্রেপ্তার মেহাম্মদ মোজাম্মেল হক ইয়াছিন ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তোলা ছবি কয়েকদিন পর পর নিজের ফেসবুকে প্রচার করতেন ইয়াছিন। ক্যাপশনে লিখতেন ‘ভালোবাসার শেষ ঠিকানা’। ফেসবুক আইডি’র কভার ফটোতেও দীর্ঘদিন ধরে সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি রেখেছেন তিনি। ছবি প্রচার করে জানান দিতেন মন্ত্রীর সঙ্গে তার দারুণ সখ্য আছে। 

এছাড়াও পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারি আরো অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলেও ফেসবুকে প্রচার করতেন অভিযুক্ত। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে পরিচয় দিতেন সেতুমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে। আর এই পরিচয় দিয়ে ভাগিয়ে নিতেন চাকরি, টেন্ডার, বিভিন্ন পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তার পোস্টিং। এছাড়া মন্ত্রীর স্বাক্ষর, সিল জাল করেও নানা প্রতারণা করতেন তিনি।

মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, ইয়াছিন গত ২১ ডিসেম্বর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এসে অস্থায়ী কার্য সহকারী পদে মাঈন উদ্দিন নামে একজনের চাকুরির দরখাস্ত জমা দেন। দরখাস্তে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশ রয়েছে। দরখাস্ত জমা দেওয়ার সময় ইয়াছিন নিজেকে মন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দেন।

এলজিইডির সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদ ইমাম মোরশেদ বলেন, দরখাস্ত পাওয়ার পর মন্ত্রীর সুপারিশ দেখে তাদের সন্দেহ হয়। তাছাড়া দরখাস্ত জমা দেওয়ার পর ইয়াছিন নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য এপিএস পরিচয় দিয়ে বার বার ফোন করছিলেন।

এরপর বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে জানানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ দুই দিন তদন্ত করে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে। এই ব্যক্তিই সেই ইয়াছিন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে তাদের অফিসে আনা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাইফুর বলেন, ইয়াছিন সেতুমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে এলজিইডিতে একজনের চাকুরির তদ্বির করা ছাড়াও নিজেকে এই মন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে ফায়ার সার্ভিসে একটি বড় অংকের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। এপিএস পরিচয়ের পাশপাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিচয় দিতেন, যা ঠিক নয়। তবে সে ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তার বাড়ি নেত্রকোণায় হলেও কামরাঙ্গীরচরের জাউলহাটি চৌরাস্তায় একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে শেরে বাংলানগর থানায় একটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর একান্ত সচিব গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা ফোন করে গতকাল (বুধবার) দুপুরে ওই প্রতারকের বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা ওই কর্মকর্তাকে বলেছি মোজাম্মেল হক ইয়াছিন নামে স্যারের (সেতুমন্ত্রী) কোনো এপিএস নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন তাদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটিও আমরা বলেছি।

নিউজ লাইট ৭১