হাইপারলুপ ট্রেন চুম্বকের উপর ছুটবে
- আপডেট টাইম : ০৫:৫৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০
- / 78
হাইপারলুপ ট্রেন চুম্বকের উপর ছুটবে। তখন কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউরোপের সব শহরে পৌঁছে যাওয়া যাবে। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে মানুষ একের পর এক যান তৈরি করে চলেছে। কোন দেশ কার চেয়ে অধিক গতিসম্পন্ন যান তৈরি করবে এ নিয়েও রয়েছে প্রতিযোগিতা। এবার হাইপারলুপ রেল নেটওয়ার্ক নিমেষের মধ্যে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে ও প্রায় নীরবে পরিবহণের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে। এমনই মত বিশেষজ্ঞদের। মাত্র ১৫ সেকেণ্ডেই ৫০০ মিটার পাড়ি দেয়া সম্ভব হাইপালুপে।
হাইপারলুপ ট্রেন কেমন?
ভার্জিন কোম্পানির জন্য ব্রিটিশ ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন সারা বিশ্বে পরিচিত। বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি ২০১৭ সালে হাইপারলুপ টেকনোলজি সংস্থাকে কিনে নেয় ব্র্যানসনের ভার্জিন প্রতিষ্ঠান।
এর আগে, ২০১২ সালে এই হাইপারলুপ প্রযুক্তির দৈনন্দিন ব্যবহারে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখান টেসলা ও স্পেস-এক্সের প্রধান ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এলন মাস্ক। এরপর আরো অনেক উদ্যোক্তা যোগ দিতে থাকেন বাস্তবায়নে।
এই প্রযুক্তিতে ভ্যাকুয়াম-নিয়ন্ত্রিত যানের মাধ্যমে হাইপালুপ পড খুবই কম সময়ে লম্বা পথ পাড়ি দিতে পারে। হাইপারলুপ ট্রেন চুম্বকের উপর ছুটবে। তখন কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউরোপের সব শহরে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
হাইপারলুপ ডেভেলপার টিমের প্রধান হিসেবে টিম ফ্লেসহুয়ারের মতে, হাইপারলুপকে আমরা পরিবহণের পঞ্চম যান হিসেবে বর্ণনা করি। এটি হলো পরিবহণের ভবিষ্যত। এটি অনেকটা ট্রেনের মতো, যা পাইপের মধ্যে ভরা থাকে।
নল থেকে বাতাস বের করে নিয়ে প্রায় ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি করা হয়। ফলে বাতাসের ধাক্কা প্রায় আর থাকে না। তাছাড়া ট্রেন চুম্বকের উপর ভাসতে থাকে। ফলে ফ্রিকশন বা ঘর্ষণও হয় না। তাই অত্যন্ত কম জ্বালানি ব্যবহার করেও বিশাল গতিতে চলা সম্ভব হয়।
তবে কীভাবে ও কোথায় ভাসে সেই ট্রেন?
ডেভেলপার টিমের প্রধান টিম ফ্লেসহুয়ার বলেন, এখানে চুম্বক দেখা যাবে। বর্তমানে ভিতরে ছোট আকারের কিছু চুম্বক রয়েছে। এগুলোকে হলবাখ-অ্যারেস বলা হয়, যা অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক। এর সুবিধা হলো চৌম্বক শক্তি নীচের দিকে পরিচালিত হয়। তাই যাত্রীরা উপরে বসে কিছুই টের পাবেন না।
এই হলবাখ-অ্যারে আসলে বিশেষভাবে সাজানো চুম্বকের সমষ্টি, যার ফলে সম্মিলিত চৌম্বক শক্তি আরও বেড়ে যায়। রেল লাইন ও ট্রেনের চুম্বক পরস্পরকে ঠেলা মারে। ফলে ট্রেনটি ভাসমান অবস্থায় থাকে। এক ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ট্রেনটিকে রেলের উপর সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
হাইপারলুপ পেল প্রথম দুই যাত্রী
ভার্জিন এর দুই কর্মী চলতি মাসে আমেরিকার নেভাডা রাজ্যের মরুভূমিতে একটি বিশেষ পরীক্ষামূলক হাইপারলুপ যাত্রায় অংশ নেন। ৫০০ মিটারের দূরত্ব সেই যাত্রায় সম্পূর্ণ করতে লাগে মাত্র ১৫ সেকেণ্ড। যাত্রী সারা লুসিয়ান জানান যে হাইপারলুপে চড়ার অভিজ্ঞতা তার জন্য ‘শারীরিক ও মানসিক, দুই দিক দিয়েই ছিল অত্যন্ত উত্তেজক’। কোনো ধরনের অস্বস্তি বোধ করেননি সারা।
এই প্রযুক্তি পরীক্ষার স্তর পার হলে একবারে ২৮ জনকে নিতে পারবে, বলে মনে করছে ভার্জিন। ভার্জিন হাইপারলুপ এই খাতে এরই মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ৩৪০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ জোগাড় করেছে, যার মধ্যে রয়েছে দুবাই সরকারের ডিপি ওয়ার্লড সংস্থাও।
হাইপারলুপ যানের প্রথম সফল পরীক্ষামূলক যাত্রা নিয়ে রীতিমত উচ্ছ্বসিত ভার্জিন। তবে অন্যান্য মহলে এই যানের নিরাপত্তার মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সুইডেনের রয়েল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এক গবেষক জানান, এই ধরনের অতিগতিসম্পন্ন যাত্রায় যাত্রীদের ‘গা গুলিয়ে ওঠা’র সম্ভাবনা প্রবল।
নিউজ লাইট ৭১