ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিন দিন এলপিজির চাহিদা লাগামহীন বেড়েই চলেছে।

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • / 79

৭১: দশ বছর আগে হয়েছিল আইন। সেই আইন ধরে যত্রতত্র এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ। কারণ- গত এক বছরে সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা একেবারে কম না। ৮১টি এলপিজি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১০০। নড়ে ওঠা ছাড়া উপায় ছিল না জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও চাওয়া হয়। কিন্তু আইনি জটিলতায় ভেস্তে গেছে সব। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা যায় ‘বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০’এ এমন কোনো বিধানই নেই। মাত্র ১০ বছর আগের করা আইনে এলপিজি ব্যবসায়ীদের অনিয়ম ধরার বিধান সংযুক্ত না হওয়াকে বিস্ময়কর মনে করছেন অনেকেই, বিস্মিত খোদ জ্বালানি বিভাগও। নিজেদের তৈরি সেই গ্যাস আইনে এবার নিজেরাই ত্রুটি খুঁজে বের করে সংশোধনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র বলছে, দেশে পাইপলাইনে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় এখন দেশের প্রধান জ্বালানি হয়ে উঠেছে এলপিজি। দিন দিন এলপিজির চাহিদা লাগামহীন বেড়েই চলেছে। অথচ বিক্রি, ব্যবহার ও সংরক্ষণে মানা হচ্ছে না সতর্কতা। অনেকে নাকি জানেনই না সিলিন্ডারের ভয়াবহতা। তাই সাধারণ মানুষ খুব সহজেই এটি পেতে চাইছেন। আর মানুষের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে তাই বিক্রিও হচ্ছে যত্রতত্র।

বিস্ফোরক পরিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, এলপিজি বাতাসের চেয়ে ভারী। এজন্য এটি বাতাসের সঙ্গে উড়ে না গিয়ে আবদ্ধ জায়গায় জমা হয়। কোনো কারণে স্পার্ক করলে বা আগুনের সংস্পর্শে এলেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কোথাও এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তাপের কারণে সিলিন্ডারের বাল্ব খুলে গিয়ে গ্যাস বেরিয়ে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য এলপিজি বিক্রি থেকে ব্যবহার প্রতিটি পর্যায়ে সতর্ক থাকতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না।

বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণ না ঘটলেও মানব শরীরে বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। ঘটতে পারে নীরব মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঘটনা। কারণ ফুসফুসে প্রবেশ করার পর এই গ্যাস অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এক্সচেঞ্জে (অদলবদলে) বাধা দেয়। ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। অক্সিজেনের ঘাটতিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাথা ঝিমঝিম করে, মাথা খালি খালি লাগে, অজ্ঞান হওয়ার সমস্যা হয়। এতে দম বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।

গত ১৩ অক্টোবর জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত মাসিক সমন্বয় সভার কার্যপত্রে এলপিজির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের এমপি লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা এবং অদক্ষতার কারণে বিভিন্ন সময়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিমন্ত্রী এ সময় এলপিজি বিস্ফোরণ রোধ এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। এই কার্যক্রমের মধ্যে সিলিন্ডার সংরক্ষণের স্থান এবং সিলিন্ডার পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও জানান। যদিও সে সময় মোবাইল কোর্টের কথা বলেননি মন্ত্রী। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের একজন যুগ্মসচিব বলেন, বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০-এ এ ধরনের বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান না থাকাতে তাদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়েছে। ফলে আপাতত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এজন্য গ্যাস আইন ২০১০ সংশোধন প্রয়োজন। পরে জ্বালানি সচিব গ্যাস আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধনের আদেশ দেন।

Tag :

শেয়ার করুন

দিন দিন এলপিজির চাহিদা লাগামহীন বেড়েই চলেছে।

আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

৭১: দশ বছর আগে হয়েছিল আইন। সেই আইন ধরে যত্রতত্র এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ। কারণ- গত এক বছরে সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা একেবারে কম না। ৮১টি এলপিজি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১০০। নড়ে ওঠা ছাড়া উপায় ছিল না জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও চাওয়া হয়। কিন্তু আইনি জটিলতায় ভেস্তে গেছে সব। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা যায় ‘বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০’এ এমন কোনো বিধানই নেই। মাত্র ১০ বছর আগের করা আইনে এলপিজি ব্যবসায়ীদের অনিয়ম ধরার বিধান সংযুক্ত না হওয়াকে বিস্ময়কর মনে করছেন অনেকেই, বিস্মিত খোদ জ্বালানি বিভাগও। নিজেদের তৈরি সেই গ্যাস আইনে এবার নিজেরাই ত্রুটি খুঁজে বের করে সংশোধনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র বলছে, দেশে পাইপলাইনে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় এখন দেশের প্রধান জ্বালানি হয়ে উঠেছে এলপিজি। দিন দিন এলপিজির চাহিদা লাগামহীন বেড়েই চলেছে। অথচ বিক্রি, ব্যবহার ও সংরক্ষণে মানা হচ্ছে না সতর্কতা। অনেকে নাকি জানেনই না সিলিন্ডারের ভয়াবহতা। তাই সাধারণ মানুষ খুব সহজেই এটি পেতে চাইছেন। আর মানুষের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে তাই বিক্রিও হচ্ছে যত্রতত্র।

বিস্ফোরক পরিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, এলপিজি বাতাসের চেয়ে ভারী। এজন্য এটি বাতাসের সঙ্গে উড়ে না গিয়ে আবদ্ধ জায়গায় জমা হয়। কোনো কারণে স্পার্ক করলে বা আগুনের সংস্পর্শে এলেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কোথাও এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তাপের কারণে সিলিন্ডারের বাল্ব খুলে গিয়ে গ্যাস বেরিয়ে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য এলপিজি বিক্রি থেকে ব্যবহার প্রতিটি পর্যায়ে সতর্ক থাকতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না।

বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণ না ঘটলেও মানব শরীরে বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। ঘটতে পারে নীরব মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঘটনা। কারণ ফুসফুসে প্রবেশ করার পর এই গ্যাস অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এক্সচেঞ্জে (অদলবদলে) বাধা দেয়। ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। অক্সিজেনের ঘাটতিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাথা ঝিমঝিম করে, মাথা খালি খালি লাগে, অজ্ঞান হওয়ার সমস্যা হয়। এতে দম বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।

গত ১৩ অক্টোবর জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত মাসিক সমন্বয় সভার কার্যপত্রে এলপিজির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের এমপি লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা এবং অদক্ষতার কারণে বিভিন্ন সময়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিমন্ত্রী এ সময় এলপিজি বিস্ফোরণ রোধ এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। এই কার্যক্রমের মধ্যে সিলিন্ডার সংরক্ষণের স্থান এবং সিলিন্ডার পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও জানান। যদিও সে সময় মোবাইল কোর্টের কথা বলেননি মন্ত্রী। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের একজন যুগ্মসচিব বলেন, বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০-এ এ ধরনের বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান না থাকাতে তাদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়েছে। ফলে আপাতত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এজন্য গ্যাস আইন ২০১০ সংশোধন প্রয়োজন। পরে জ্বালানি সচিব গ্যাস আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধনের আদেশ দেন।