শেখ হাসিনা সহযোগী সংগঠনে বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব চান
- আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৯
- / 80
সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতে বিতর্কমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব আনতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে তিনি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনাও দিচ্ছেন নিয়মিত। এর আগে অন্যান্য সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব দিতেন শেখ হাসিনা। এবার এখন পর্যন্ত কোনো নেতাকেই সুনির্দিষ্ট কোনো সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়ে দায়িত্ব দেননি তিনি। নিজেই সরাসরি দেখভাল করছেন সহযোগী সংগঠনগুলো।
মূলত বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব বাছাইয়ের সতর্কতা হিসেবেই তিনি এ প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েক নেতা। কারণ এর আগে সহযোগী সংগঠনগুলোর দায়িত্ব দলের অন্য নেতাদের হাতে ছেড়ে খুব একটা ভালো ফল পাননি তিনি। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে চলমান শুদ্ধি অভিযানে। দলটির নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা এবার খুব সতর্ক। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন থেকে শুরু করে শীর্ষ দুই নেতা বাছাই, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনÑ সবকিছু যাচাই-বাছাই করে করবেন তিনি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর যুবলীগ এবং ২৯ নভেম্বর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় সবকটি সম্মেলনেই প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারি দলে। এর ফলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীই ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগ প্রধান। এ কারণে তিনি নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি রাজধানীর ক্যাসিনো কারবারে আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। তাদের হাতকড়া পরিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। শুধু তা-ই নয়, সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কারও করেছেন। দলটির নেতারা বলছেন, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সহযোগী সংগঠনগুলোর এবারের সম্মেলন হবে মূলত সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান। অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে বাদ দিয়ে তাদের জায়গায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব আনবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে কথা বলতে গণভবনে যান যুবলীগের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাদের সাফ জানিয়ে দেন, অভিযুক্ত কাউকে যেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিতে না রাখা হয়। সূত্রমতে, তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে সম্মেলনের কোনো বিষয়ে না রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্মেলনের বিষয়ে সার্বিক নির্দেশনা চান যুবলীগের নেতারা। তিনি তাদের আগামী রবিবার বিকাল ৫টায় গণভবনে যেতে বলেন।
গণভবন সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের আগে ৫ সহযোগী সংগঠনের সঙ্গেই আলাদাভাবে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। আসন্ন সম্মেলনের সহযোগী সংগঠনগুলোতে নেতা নির্বাচনের গাইডলাইন দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক কার্যক্রমের শিডিউলের সঙ্গে মিলিয়ে তারিখগুলো নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে।
সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসের মতো অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তারা আমাদের মূল দলে এবং সহযোগী সংগঠন কোথাও কোনো স্থান পাবে না বলে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনগুলোতেও তার নির্দেশনার বিষয়টির প্রতিফলন ঘটবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দলের আদর্শ ও লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে সহযোগী সংগঠনগুলোতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে এসডিজির লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে হবে আমাদের। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে আমি মনে করি।