কোমরব্যথার কারণ ও প্রতিকার
- আপডেট টাইম : ০৫:২১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০
- / 96
৭১: আমাদের মধ্যে কম-বেশি অনেকেরই ঘাড়, পিঠ বা কোমরব্যথার সমস্যায় রয়েছে। মেরুদণ্ড, ঘাড়, পিঠ ও কোমরের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। বিশেষত বয়স্কা মহিলারা বেশি কষ্ট পান।
আঘাতহীন ব্যথার জন্য মেরুদণ্ডে হালকা ব্যথা হলেও পরবর্তী সময়ে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরের অন্য অংশে। তাই মেরুদণ্ডের ব্যথায় সবার আগে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় ও সঠিক-কার্যকর চিকিৎসা। তা না হলে রোগীর যন্ত্রণা বাড়তে থাকে।
এমন মানুষ হয়তো পৃথিবীতে পাবেন না যিনি তার জীবনে একবারও কোমরে ব্যথা অনুভব করেননি। আমাদের মেরুদণ্ডের গঠন অনুযায়ী মাথার খুলির নিচ থেকে প্রথম ৭টি হাড় বা কশেরুকা নিয়ে ঘাড়, পরবর্তী ১২টি হাড় নিয়ে পিঠ, তার নিচের ৫টি হাড় নিয়ে কোমড় গঠিত।
মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি বা ডিস্কের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে এ ব্যথার সূত্রপাত হয়। তরুণাস্থির এই পরিবর্তনের সাথে সাথে মেরুদণ্ডের নিচের দিকে সংবেদনশীলতার পরিবর্তন হয়। সাধারণত এ পরিবর্তন ৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগের উপসর্গও বাড়তে থাকে।
কারণ : সাধারণত দেখা যায় মেরুদণ্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা, কশেরুকার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে কোমরব্যথা হয়ে থাকে। চলাফেরা, খুব বেশি ভার বা ওজন তোলা, মেরুদণ্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করা, মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া, সর্বোপরি কোমরের অবস্থানগত ভুলের জন্য এ ব্যথা দেখা দেয়।
অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত মেরুদণ্ডে ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআথ্র্যাটিস বা গেঁটে বাত, অস্টিওপোরেসিস, এনকাইলজিং স্পনডাইলাইটিস, মেরুদণ্ডের স্নায়ুবিক সমস্যা, টিউমার, ক্যান্সার, বোন টিবি, কোমরের মাংসে সমস্যা, বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুড়ি, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।
লক্ষণ : কোমরের ব্যথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে বা হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। নড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যথা কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে অথবা পা থেকে কোমর পর্যন্ত উঠতে পারে। অনেক সময় কোমর থেকে ব্যথা মেরুদণ্ডের পেছন দিক দিয়ে মাথা পর্যন্ত উঠতে পারে।
রোগী অনেকক্ষণ বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ব্যথার সঙ্গে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন-ঝিন জাতীয় ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোনো এক পায়ে নামতে পারে।
অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশীর ক্ষমতা কমে আসে এবং শুকিয়ে যেতে পারে, সর্বোপরি রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
সতর্কতা : নিচ থেকে কিছু তোলার সময়— * কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন। কোনো কিছু বহন করার সময় * ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না। * ভারী জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন। * পিঠের ওপর ভারী কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করুন।
শোয়ার সময়— * উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙ্গা খাট, ফোম বা স্প্রিংয়ের খাটে শোবেন না।* সমান তোশক ব্যবহার করুন। * বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে।* শক্ত বিছানা বলতে সমান কিছুর ওপর পাতলা তোশক বিছানোকে বোঝায়।
দাঁড়িয়ে থাকার সময়— * ১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না। * হাঁটু না ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। * দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল পরবেন না।* অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।* দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট ব্যবহার করুন।
বসে থাকার সময়— * আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না। * সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না। * কোমরের পেছনে
সাপোর্ট দিন। * এমনভাবে বসুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে। * নরম গদি বা স্প্রিংযুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসবেন না। * যানবাহনে চড়ার সময় গাড়ি চলানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। * সোজা হয়ে বসুন। * ভ্রমণে ব্যথার সময় লাম্বার করসেট ব্যবহার করুন। * কোমরব্যথা বেশি হলে বিছানা থেকে শোয়া ও ওঠার নিয়ম চিৎ হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাঁজ করুন।* এবার অন্য হাঁটুটি ভাঁজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রাখুন।* এবার ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন।* পা দুটি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, এবার কাত হওয়া দিকের হাতের কনুই এবং অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন।* দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা রাখুন। এবার দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান।
মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন অল্প হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পরুন, বিভিন্ন জুতোর হিলের উচ্চতা বিভিন্ন না হওয়াই উচিত। * তরকারি কাটা, মসলা পেষা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদণ্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখুন। * কোমর ঝুঁকে বাচ্চাকে কোলে নেবেন না। * ঝাড়ু দেয়া, টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন। * মার্কেটিং বা শপিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পর বিশ্রামের জন্য একটু বসবেন। * বিছানা গোছানোর সময় কোমর ভাঁজ না করে বরং হাঁটু ভেঙে বসা উচিত।
খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন
গরু, খাসির মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন এবং যাদের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তা বন্ধ করে রাতে শিগগিরই শুয়ে পড়ুন।
হোমিও প্রতিবিধান
রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য রোগীর পুরা লক্ষণ মিলিয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে কোমরে ব্যথা রোগীর চিকিৎসা দেয়া আল্লাহর রহমতে সম্ভব। ইদানীং কিছু কিছু হোমিও চিকিৎসক বের হয়েছে, তারা রোগীকে পেটেন্ট, টনিক, মিশ্রপ্যাথি, মলমসহ অনেক অপচিকিৎসা বাত-ব্যথারোগীদের দিয়ে থাকে। যেটাকে ডা. স্যামুয়েল হানেমান বলেন শংকরজাতের হোমিওপ্যাথ।
বাতব্যথা রোগীদের লক্ষণের ওপর যেসব ওষুধ আসতে পারে— একোনাইট, লিডাম পাল, রাসটক্স, রডোডেন্ড্রন, কলোফাইলাম, ল্যাক ক্যানিনাম, ব্রায়োনিয়া, আর্টিকা ইউরেন্স, মেডোরিনাম, ফেরামফস, আর্নিকা মন্ট, ম্যাগ ফস, কষ্টিকাম। অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করলে রোগ আরও জটিল আকারে পৌঁছতে পারে।