যৌন রোগের কারণ ও হোমিও প্রতিকার
- আপডেট টাইম : ০৫:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০২০
- / 109
৭১: পৃথিবী জুড়েই যৌন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যৌন রোগ থেকে ক্যান্সার, অন্ধত্ব, জন্মগত ত্রুটি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই যৌন রোগ ও এর কারণে সৃষ্ট অন্যান্য রোগগুলো থেকে বাঁচতে শুরুতেই এর চিকিৎসা জরুরি। নিচের উপসর্গগুলো কারো ভেতর দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সাধারণত যৌনাঙ্গ থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া, মূত্রে জ্বালাভাব, শারীরিক সম্পর্কের সময়ে ব্যথা বা রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত এবং গলায় সংক্রমণে সব উপসর্গের কোনোটি দেখলে অবশ্যই যৌন রোগের পরীক্ষা করানো উচিত।
এ ছাড়া এ বিষয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ বেশির ভাগ যৌন রোগই উপযুক্ত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে ওঠে। কিন্তু চিকিৎসায় অবহেলা করলে তা ভবিষ্যতে রোগের শঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আজ যৌন রোগে নিয়ে বিশেষ কলাম লিখেছেন, বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ও দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য সম্পাদক, ডা. এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন…সুস্থ শরীর নিয়ে আনন্দময় জীবনযাপন করাই আমাদের কাম্য। এখন প্রশ্ন কীভাবে জীবনযাপন করলে জীবন আনন্দময় হয়ে উঠবে, অর্থাৎ আমাদের লাইফ স্টাইল কী হবে? লাইফ স্টাইল হল অভ্যাস, দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ, সামাজিক এবং রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা, সংস্কৃতি, সর্বোপরি অর্থনৈতিক অবস্থা। এইসব মিলে তৈরি হয় লাইফ স্টাইল।
এই আনন্দময় জীবনযাপন থেকেই সৃস্টি, বর্তমানের যৌন সমস্যা, যা একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন এ রোগীর হার বেড়ে যাচ্ছে।এই সমস্ত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে আছে অনেক জটিলতা। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন চমকপ্রদ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান।
অনেকেই এসব রং বেরঙের প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা নিয়ে হচ্ছেন প্রতারিত। আমার কাছে অনেক রোগীরা আসে তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে অনেকে এ রোগ নিয়ে খুবই উদ্বেগে আছেন। অনেকে এ সমস্যা নিয়ে বিচলিত! কোথায় গেলে ভালো চিকিৎসা পাবে তা কেউ বুঝতে পারছে না।
আসলে যৌন সমস্যা কোনো সমস্যাই নয়। একটু বুঝে চললে আর জীবনটাকে নিয়মের ভেতরে আনলে এ রোগ কোনো রোগই নয়। তবে জীবন চলার পথে কিছু সমস্যা থাকে, আমরা নিজেরাই কিছু সমস্যা শরীরে সৃষ্টি করি। যার ফলে আমরা হতাশায় ভুগী আর ভাবি হয়তো এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।
কিন্তু এখনো যদি আমরা জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে পারি আর সমস্যার কারণে ভালো কোনো ‘অর্গানন’ অনুসরণকারী হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই, তাহলে আমরা একটি সুন্দর সুখী নীড় তৈরি করতে পারবো। আজকাল রাস্তাঘাটে চলাফেরা করলে দেখি বাহারি রঙের বাহারি সব চিকিৎসার পোস্টার বা সাইনবোর্ড। বিশেষ করে যৌন সমস্যা নিয়ে অনেক পোস্টার দেখা যায়।
তারা সাতদিনের ভেতরে সব ঠিক করে দেবে বলে চ্যালেঞ্জ, গ্যারান্টি, দিয়ে প্রচারপত্র বিলি করে। নিরীহ সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে পোস্টারে— ‘বিফলে মূল্যফেরত, জীবনের শেষ চিকিৎসা’ এসব কথার উল্লেখ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আসলে মূল কথা হলো— আমাদের দেশের বেশির ভাগ পুরুষ এই সমস্যায় ভুগছেন।
মেয়েদের ভেতরেও এ সমস্যা আছে তবে খুব কম। আমরা চিকিৎসা করার সময় দেখি মেয়েদের সংখ্যা অনেক কম এ হিসেবে ‘সেক্স’ সমস্যাটা কিছুই না। তবে বিশেষ কিছু কারণে সমস্যা হয়ে থাকে। মূলত যেসব কারণে সমস্যা হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে— মানসিক দুশ্চিন্তা, মানসিক হতাশা, মানসিক ভীতি।
* অতিরিক্ত হস্তমৈথুন।
* সময়মতো বিয়ে না করা।
* যৌনশক্তি বাড়ানোর নামে ‘ওয়ান টাইম মেডিসিন’ সেবন করা।
* অতিরিক্ত ধূমপান করা।
৬. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বহুদিন সম্পর্ক ছিন্ন থাকা।
* দীর্ঘদিন যাবৎ কঠিন আমাশয় ও গ্যাস্ট্রিক রোগে ভুগা।
* সঙ্গদোষ অর্থাৎ খারাপ বন্ধুদের কারণে খারাপ কাজে সম্পৃক্ত হওয়া, পর্নো মুভি দেখা ও এ জাতীয় চিন্তা করা।
* অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হওয়া।
* ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে।
* মোটা হওয়ার কারনে।
* পরিবারে উদাসীনতা, যারা কায়িক পরিশ্রম করে মানে অলস যারা।
* প্রেম করে বিয়ের আগে অবাধ মেলামেশা করা।
* কোনো অনুশাসন না মেনে চলা। মূলত এসব কর্মকাণ্ডে আরও সমস্যা আছে। তবে এই সমস্যাগুলো আমরা চিকিৎসা করার সময় রোগীদের মাঝে দেখি। যতই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হোক না কেন, হোমিওপ্যাথি লক্ষণ দিয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে এই রোগী আরোগ্য হওয়া সম্ভব।
হামিও সমাধান : রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। যৌন সমস্যার রোগীদেরকে একজন অভিজ্ঞ অর্গানন অনুসরণকারী চিকিৎসক নির্বাচন করতে হবে যিনি সঠিক লক্ষণ অথবা ‘মাইজমেটিক’ অনুসরণ করে চিকিৎসাসেবা দেন, তাহলে হোমিওপ্যাথিতে আরোগ্য হওয়া সম্ভব।
কিন্তু আফসোসের বিষয়— অনেক হোমিও চিকিৎসক ও হোমিও কলেজগুলোর শিক্ষক রোগীদেরকে পেটেন্ট, টনিক, মিশ্র প্যাথি দিয়ে চিকিৎসা দেয় আর নিজেদেরকে ‘ক্ল্যাসিকাল হোমিওপ্যাথ’ বলে থাকেন। এসব ডাক্তারদেরকে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান বলে থাকেন— শঙ্কর জাতের হোমিওপ্যাথ। তাই নিজেদেরকে যদি হ্যানিমেনের উত্তরসূরী দাবি করে থাকি তাহলে সঠিক লক্ষণ দিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যে সব মেডিসিন ব্যবহার করে থাকে, এসিডফস, এগনাস কাস্ট, অসগোন্ধা, ক্যালাডিয়াম স্যাংক, ডামিয়ানা, জিনসিং, নুপারলোটিয়াম, নাক্সবোম, লাইকোফোডিয়াম, সিলিনিয়ামসহ অসংখ্য হোমিও মেডিসিন লক্ষণের ওপর আসতে পারে।
লেখক : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি, কেন্দ্রীয় কমিটি, কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।