ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প না বাইডেন? কাকে চান আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিরা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০
  • / 100

৭১: যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে আলোচনা সমালোচনা। ক্ষমতার পালাবদল হবে- না কি ফের ট্রাম্পেই ভরসা রাখবেন মার্কিনীরা? এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যেই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যকার প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ও উদ্বেগের শেষ নেই নিউইয়র্কের বাঙালি জনসমাজেও। কোন প্রার্থী বিজয়ী হলে অভিবাসীদের জন্য মঙ্গল হবে- এ নিয়ে চলছে বাকবিতণ্ডা। তর্ক-বিতর্ক চলছে সকালের চা থেকে রাতের ডিনার পর্যন্ত। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের শঙ্কা, উদ্বেগ এবং আশা-ভরসার কথা।

এদেরই একজন মোর্শেদ আলম। তিনি বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সঙ্গী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি নিউ আমেরিকান ডেমোক্র্যাট ক্লাবের সভাপতি।

মোর্শেদ আলম বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন- ট্রাম্প নির্বাচনের আগে সিটিজেনশিপ দেয়া বন্ধ রেখেছেন। কারণ তিনি মনে করেন- নতুন ভোটাররা বাইডেনকে ভোট দেবেন। তিনি আমেরিকাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারের মৌলিক অধিকার মেটাতে এখন হিমশিম খেতে হয়। এই দেশটি অভিবাসীদের। অথচ তিনি ইমিগ্রেশন বন্ধের পাঁয়তারা করছেন। মুসলমানদেরকে এক প্রকার নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) পাওয়ার সব রাস্তা সব বন্ধ করে দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে যেভাবে ধরপাকড় চলছে অভিবাসীরা রীতিমতো আতঙ্কে আছেন। যা সম্পূর্ণ অমানবিক।’

তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্ব নেতৃত্ব দেয়া দেশটি এখন আন্তর্জাতিক বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দেশটি আর অভিবাসীদের দেশ থাকবে না। এটি হয়ে যাবে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের দেশ। তিনি যেভাবে বর্ণবাদী ও ঘৃণার কথা বলেন এগুলো সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষ বলে থাকেন। আমরা বাইডেনের মধ্যে আশা ও ভরসা খুঁজে পাই।’

বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নাসির খান পল বলেন, ‘চেইন ইমিগ্রেশনের কারণে আমেরিকার মতো উন্নত দেশে চলে এসেছে অশিক্ষিত ও জঙ্গি মনোভাবের নানা শ্রেণির মানুষ। ট্রাম্প মেধার ভিত্তিতে ইমিগ্র্যান্ট পদ্ধতি করছেন যা আমেরিকার জন্য অপরিহার্য। এখানে লোক মুখে শোনা যায়- ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসীদের কল্যাণে কাজ করে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। এ দেশে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এসেছে অপি-ওয়ান এবং ডিবি-ওয়ানের মাধ্যমে। এটি রিপাবলিকানরা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট রিগ্যান যত মানুষকে বৈধতা দিয়েছেন- তা অভিবাসী সমাজের অন্তত শতকরা ৬০ ভাগ হবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা তার ৮ বছরে ৪৯ লাখ মানুষকে ডিপোর্টেশন (নির্বাসন) দিয়েছেন। সেই তুলনায় ট্রাম্প মাত্র ৩ লাখ লোককে দিয়েছেন।’

নাসির খান পল বলেন, ‘কাজ না করে, নিজের পরিবারকে শিক্ষিত না করে যারা সরকারের সাহায্যে বেঁচে থাকতে চায়- এই দেশ তাদের জন্য না। যারা নিজেদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে এই দেশে তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। আমি ১১টি আমেরিকান নির্বাচনে সম্পৃক্ত ছিলাম। এই নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির কারণে সারা পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরেও আমেরিকার মাথা উঁচু রাখতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিকল্প নেই। বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যাপকহারে রিপাবলিকান সমর্থক বাড়ছে।’

অভিবাসী বিষয়ক আইনজীবী অশোক কর্মকার বলেন, ‘কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে সাধারণত গ্রেফতার করা হয় না। যে কয়টি দেশকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাতে কোথাও কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় বর্ণনা করা হয়নি। ভিসার ক্ষেত্রে শুধু মেধা নয়, অর্থনৈতিক দিকও বিবেচনা করা হবে। যারা এ দেশে এসে সরকারি সাহয্যনির্ভর হতে চায় তাদের ভিসা দেয়া হবে না। ট্রাম্প প্রশাসন দিনকে দিন অ্যাসাইলামকে কঠিন করে তুলছে। সেই দিক থেকে অভিবাসীদের জন্য বাইডেনই আশার স্থল। যদিও বাঙালি ভোটার সংখ্যা কোনো প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করার মতো নয়।’

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী রহমান মাহবুব বলেন, ‘ট্রাম্পের বিপরীতে বাইডেন খুব দুর্বল প্রার্থী। বাংলাদেশি অনেক মানুষ ট্রাম্পকে ধর্মীয় কারণে ঘৃণা করেন। ট্রাম্প নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী বক্তব্যও দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস- জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো তিনিও আপাত রক্ষণশীলদের খুশি করতে এ ধরনের কথা বলছেন। মূলত তিনি অমানবিক মানুষ নন।’

স্কুল শিক্ষিকা রিফাত জাহান বলেন, ‘দেশটি অভিবাসীদের। পৃথিবীর সব দেশের মানুষ তো শিক্ষিত এবং ধনাঢ্য নয়। শুধু মাত্র এ কারণে তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে পারবে না? বাইডেন নির্বাচিত হলে আমাদের বসবাস নির্বিঘ্ন হবে। পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষরা এই দেশেকে মানবিক ও আশ্রয়স্থল মনে করে। বাইডেন মধ্যবিত্তসহ সবার জন্য কল্যাণকর। আমি মনে করি, বাইডেন বিজয়ী হবেন।’

Tag :

শেয়ার করুন

ট্রাম্প না বাইডেন? কাকে চান আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিরা

আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০

৭১: যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে আলোচনা সমালোচনা। ক্ষমতার পালাবদল হবে- না কি ফের ট্রাম্পেই ভরসা রাখবেন মার্কিনীরা? এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যেই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যকার প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ও উদ্বেগের শেষ নেই নিউইয়র্কের বাঙালি জনসমাজেও। কোন প্রার্থী বিজয়ী হলে অভিবাসীদের জন্য মঙ্গল হবে- এ নিয়ে চলছে বাকবিতণ্ডা। তর্ক-বিতর্ক চলছে সকালের চা থেকে রাতের ডিনার পর্যন্ত। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের শঙ্কা, উদ্বেগ এবং আশা-ভরসার কথা।

এদেরই একজন মোর্শেদ আলম। তিনি বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সঙ্গী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি নিউ আমেরিকান ডেমোক্র্যাট ক্লাবের সভাপতি।

মোর্শেদ আলম বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন- ট্রাম্প নির্বাচনের আগে সিটিজেনশিপ দেয়া বন্ধ রেখেছেন। কারণ তিনি মনে করেন- নতুন ভোটাররা বাইডেনকে ভোট দেবেন। তিনি আমেরিকাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারের মৌলিক অধিকার মেটাতে এখন হিমশিম খেতে হয়। এই দেশটি অভিবাসীদের। অথচ তিনি ইমিগ্রেশন বন্ধের পাঁয়তারা করছেন। মুসলমানদেরকে এক প্রকার নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) পাওয়ার সব রাস্তা সব বন্ধ করে দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে যেভাবে ধরপাকড় চলছে অভিবাসীরা রীতিমতো আতঙ্কে আছেন। যা সম্পূর্ণ অমানবিক।’

তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্ব নেতৃত্ব দেয়া দেশটি এখন আন্তর্জাতিক বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দেশটি আর অভিবাসীদের দেশ থাকবে না। এটি হয়ে যাবে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের দেশ। তিনি যেভাবে বর্ণবাদী ও ঘৃণার কথা বলেন এগুলো সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষ বলে থাকেন। আমরা বাইডেনের মধ্যে আশা ও ভরসা খুঁজে পাই।’

বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নাসির খান পল বলেন, ‘চেইন ইমিগ্রেশনের কারণে আমেরিকার মতো উন্নত দেশে চলে এসেছে অশিক্ষিত ও জঙ্গি মনোভাবের নানা শ্রেণির মানুষ। ট্রাম্প মেধার ভিত্তিতে ইমিগ্র্যান্ট পদ্ধতি করছেন যা আমেরিকার জন্য অপরিহার্য। এখানে লোক মুখে শোনা যায়- ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসীদের কল্যাণে কাজ করে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। এ দেশে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এসেছে অপি-ওয়ান এবং ডিবি-ওয়ানের মাধ্যমে। এটি রিপাবলিকানরা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট রিগ্যান যত মানুষকে বৈধতা দিয়েছেন- তা অভিবাসী সমাজের অন্তত শতকরা ৬০ ভাগ হবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা তার ৮ বছরে ৪৯ লাখ মানুষকে ডিপোর্টেশন (নির্বাসন) দিয়েছেন। সেই তুলনায় ট্রাম্প মাত্র ৩ লাখ লোককে দিয়েছেন।’

নাসির খান পল বলেন, ‘কাজ না করে, নিজের পরিবারকে শিক্ষিত না করে যারা সরকারের সাহায্যে বেঁচে থাকতে চায়- এই দেশ তাদের জন্য না। যারা নিজেদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে এই দেশে তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। আমি ১১টি আমেরিকান নির্বাচনে সম্পৃক্ত ছিলাম। এই নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির কারণে সারা পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরেও আমেরিকার মাথা উঁচু রাখতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিকল্প নেই। বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যাপকহারে রিপাবলিকান সমর্থক বাড়ছে।’

অভিবাসী বিষয়ক আইনজীবী অশোক কর্মকার বলেন, ‘কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে সাধারণত গ্রেফতার করা হয় না। যে কয়টি দেশকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাতে কোথাও কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় বর্ণনা করা হয়নি। ভিসার ক্ষেত্রে শুধু মেধা নয়, অর্থনৈতিক দিকও বিবেচনা করা হবে। যারা এ দেশে এসে সরকারি সাহয্যনির্ভর হতে চায় তাদের ভিসা দেয়া হবে না। ট্রাম্প প্রশাসন দিনকে দিন অ্যাসাইলামকে কঠিন করে তুলছে। সেই দিক থেকে অভিবাসীদের জন্য বাইডেনই আশার স্থল। যদিও বাঙালি ভোটার সংখ্যা কোনো প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করার মতো নয়।’

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী রহমান মাহবুব বলেন, ‘ট্রাম্পের বিপরীতে বাইডেন খুব দুর্বল প্রার্থী। বাংলাদেশি অনেক মানুষ ট্রাম্পকে ধর্মীয় কারণে ঘৃণা করেন। ট্রাম্প নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী বক্তব্যও দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস- জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো তিনিও আপাত রক্ষণশীলদের খুশি করতে এ ধরনের কথা বলছেন। মূলত তিনি অমানবিক মানুষ নন।’

স্কুল শিক্ষিকা রিফাত জাহান বলেন, ‘দেশটি অভিবাসীদের। পৃথিবীর সব দেশের মানুষ তো শিক্ষিত এবং ধনাঢ্য নয়। শুধু মাত্র এ কারণে তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে পারবে না? বাইডেন নির্বাচিত হলে আমাদের বসবাস নির্বিঘ্ন হবে। পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষরা এই দেশেকে মানবিক ও আশ্রয়স্থল মনে করে। বাইডেন মধ্যবিত্তসহ সবার জন্য কল্যাণকর। আমি মনে করি, বাইডেন বিজয়ী হবেন।’