বাঁকখালী নদী প্রভাবশালীদের দখলে
- আপডেট টাইম : ০৯:০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৯
- / 131
নিউজ লাইট ৭১-পশ্চিমে বিশাল বঙ্গোপসাগর আর উত্তর পূর্বে বাঁকখালী নদী ঘিরেই গড়ে উঠেছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। কিন্তু কালক্রমে কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর ভরাট অংশ দখল করে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করে সঙ্কট সৃষ্টি করে প্রভাবশালীরা। প্যারাবন কেটে নদী দখলের অভিযোগে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তিনি মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক বিএনপি নেতা এবং বর্তমানে আ.লীগের প্রভাবশালী নেতা। শুধু খালেক নন, বাঁকখালী নদীর ভরাট এলাকা কস্তুরাঘাটে অভ্যন্তরঢু নদীবন্দর নির্মাণের প্রস্তাবিত জায়গা দখলে রেখেছেন এমন ৫১ জন দখলদারের ১টি তালিকা তৈরি করেছে অভ্যন্তরঢু নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডবিøউটিএ। অবৈধ দখলদারদের হাতে জমি থাকায় গেজেট প্রকাশের সাড়ে নয় বছরেও প্রস্তাবিত নদী বন্দর নির্মাণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি রফতানি সহজ করতে ২০১০ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি বাঁকখালী নৌবন্দর স্থাপনে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী চ্যানেল পর্যন্ত নদীর দুইপাড়ের ১ হাজার ২০০ একর জায়গাজুড়ে এ নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজারের সদর উপজেলা অংশে ৮২১ একর এবং মহেশখালী উপজেলা অংশে ৪৪৭ একর জমি রয়েছে। তবে সবটুকুই সরকারি খাসজমি। নৌবন্দরের জমি হস্তান্তরের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে একাধিকবার চিঠিও দেয় বিআইডবিøউটিএ। তবে এখন পর্যন্ত এ জমি বিআইডবিøউটিএকে হস্তান্তর না করায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নৌবন্দর নির্মাণের কাজ।
যে স্থানটি ঘিরে সরকার নদীবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেয়, সে স্থানটিতে চলছে প্রভাবশালীদের দখলে। বিআইডবিøউটিএ ৫১ জন প্রভাবশালী দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও। তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছেন ইকবাল হাজি। তিনি অবৈধভাবে নদীবন্দরের জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন। ফরিদুল আলম, পৌরসভা ঘাট এলাকার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আ.লীগ নেতা মাসেদুল হক, ৬নং ঘাট এলাকার সিদ্দিক কোম্পানি, মো. ইউনুসের ছেলে মো. ভুট্টু, আহমদ করিম, মো. রেজাউল করিম, মো. সেলিম, আবদুস সালাম, নতুন বাহারছরা ৬নং ঘাট এলাকায় হালিমা খাতুন, মো. সিদ্দিক, শামসুল আলম, কাউসার, একে রাশেদ হোসাইন, শওকত আলী, আবদুস সালাম, মহেশখালী পৌরসভা এলাকায় রশিদ মিয়া, কক্সবাজার পৌরসভা ঘাট এলাকায় নুরুল হুদা ও থানা রোডে এসএম আতিকুর রহমান।
এছাড়া আমিরুল ইসলামের রয়েছে অ্যাকোয়া কালার লি. নামে ১টি প্রতিষ্ঠান। সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির রয়েছে মিডওয়ে নামে ১টি মাছের হ্যাচারি। সাগর কোল্ড স্টোরসহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন একাধিক দখলদার। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী সি-পোর্ট, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারীর মালিকানাধীন মেরিন ফিশ প্রসেসিং লি. এবং মো. সেলিম উল্লাহর ১০ একর জায়গার ওপর কাঁকড়ার প্রজেক্ট।
তালিকায় অভিযুক্ত আব্দুল খালেক বলেন, যে জমিতে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়েছে, এটি দখল করা নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে ১টি মামলাও রয়েছে বলে জানান তিনি। এই তালিকার বাইরেও বাঁকখালী নদী ঘিরে শত শত দখলদার রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডবিøউটিএ। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে সঙ্কটে পড়বে বাঁকখালী নদী।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার বলেন, বাঁকখালী নৌবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্য জমি বিআইডবিøউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে যে স্থান ঘিরে নদীবন্দর হওয়ার কথা, সে স্থানে বেশকিছু দখলদার রয়েছে। যে কারণে জমি বুঝিয়ে দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।